ই-কোয়ালিটি ডাটার ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিশ্ব নেতাদের আহ্বান

তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক:তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৬:৩৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ডিজিটাল সেবা ও সুবিধাবঞ্চিত নাগরিকদের মধ্যে থাকা ব্যবধান ঘোচাতে ই-কোয়ালিটি ডাটা ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনের সাইড-ইভেন্ট হিসেবে অনলাইনে আয়োজিত ‘হার্নেসিং ই-কোয়ালিটি ফর গ্লোবাল প্রসপারিটি’ শীর্ষক এক প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, জার্মানি ও কেনিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক এবং সরকারি উদ্যোগের নেতারা এ আহ্বান জানান।

ই-কোয়ালিটিকে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি বা ডিজিটাল সমতা অর্জনের প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যাতে সামগ্রিকভাবে ন্যায়সঙ্গত উন্নয়নের চূড়ান্ত লক্ষ্য পূরণে অবদান রাখতে পারে। ই-কোয়ালিটি ডাটার ব্যবহারের মাধ্যমেই ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ডিজিটাল বিভাজন কমাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল নীতি প্রণয়ন এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে উন্নত সেবা প্রদানে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করা সম্ভব হবে।

জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনের সাইন্স সামিট সেশনে বাংলাদেশ সরকারের এটুআই, পিপল সেন্টারড ইন্টারনেট, এবং সাউথ-সাউথ নেটওয়ার্ক ফর পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন (এসএসএনফরপিএসআই) যৌথভাবে এর আয়োজন করে। এরই অংশ হিসেবে ‘নেটওয়ার্ক অব রিসাইলেন্ট কমিউনিটিজ: হার্নেসিং ই-কোয়ালিটি ডাটা টু ইমপ্রুভ দি প্রসপারিটি অব গ্লোবাল সিটিজেনস অব দি ফিউচার’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ অনলাইনে অনুষ্ঠিত উচ্চ-পর্যায়ের এই অধিবেশনে উদ্বোধনী ও স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন এবং সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন ক্যালিফোর্নিয়ার পিপল সেন্টারড ইন্টারনেট-এর চেয়ার ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা মেই লিন ফাং। প্যানেল আলোচনায় ‘ইকোয়ালিটি থ্রো ই-কোয়ালিটি’ এর উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ-এর বাস্তবায়নাধীন ও ইউএনডিপি এর সহায়তায় পরিচালিত এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী।

ই-কোয়ালিটি ডাটার ব্যবহারে বৈশ্বিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্কের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ বলেন, ডিজিটাল বিপ্লবের সাথে সাথে আজকের বিশ্বে ডিজিটাল বিভাজন সমাজে বৈষম্য তৈরিতে একটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে। তবে, সঠিকভাবে পরিচালনা করা হলে ই-কোয়ালিটি নিশ্চিতে ডিজিটাল উন্নয়ন সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে। ডিজিটাল উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো রিসাইলেন্ট কমিউনিটি। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বটম-আপ অ্যাপ্রোচে নাগরিকদের সমৃদ্ধি ও সক্ষমতা উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

Nagad

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় সাউথ-সাউথ নেটওয়ার্ক ফর পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন (এসএসএনফোরপিএসআই) এর উপদেষ্টা আনীর চৌধুরী ডিজিটাল বিভাজন সম্প্রসারণে প্রভাব রাখতে পারে এমন কিছু বিষয়ে সতর্কতা অনুসরণের পরামর্শ প্রদান করেন। যার মধ্যে এমন কতগুলো ডিজিটাল সেবা রয়েছে যেগুলো আগে তেমন গুরুত্ব না পেলেও কোভিড-১৯ এর পরে মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল রূপান্তরের বিভিন্ন অর্জনের বিষয়ে বলতে গিয়ে আনীর চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল সেবা ও অ্যানালগ সিটিজেনের মাঝে ব্যবধান কমিয়ে সেতুবন্ধন তৈরির উপর গুরুত্ব দিতে হবে। উপযুক্ত ডিজিটাল অভিগম্যতা নিশ্চিতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে লিঙ্গভিত্তিক সমতা প্রতিষ্ঠা এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, ই-কোয়ালিটিকে মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করা এবং একটি উপযুক্ত ফ্রেমওয়ার্ক ডিজাইন করার জন্য ডিজিটাল সেবায় অভিগম্যতা নিশ্চিতে ন্যায়সঙ্গত উন্নয়নের প্রধান অনুঘটক হিসেবে এটি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক অ্যাপ্লাইড ফিউচার ল্যাব এর প্রযোজনা পরিচালক সিন্ডি কুন প্যানেল আলোচনা সঞ্চালনা করেন। এতে প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে ভারতে ডিজিটাল এম্পাওয়ার্মেন্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক ওসামা মানজার ডিজিটাললি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠাকে কীভাবে আরো কার্যকরভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির আওতায় নিয়ে আসা যায় সে বিষয়টি তুলে ধরেন। লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. মুশতাক খান অসামঞ্জস্যপূর্ণ ক্ষমতায়নের সমস্যা সমাধানে নীতিনির্ধারকদের কোন কোন বিষয় বিবেচনায় নেওয়া উচিত সেসব বিষয়গুলো ব্যাখা করেন।

ইউএনডিপি’র চিফ ডিজিটাল অফিসের গ্লোবাল পলিসি অ্যাডভাইজার বাবুতুন্ডে আবিদয়ে বিভিন্ন দেশের সরকারের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির এজেন্ডাকে ত্বরান্বিত করার জন্য নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ডাটা লিটারেসিকে কাজে লাগানোর উপর গুরুত্বারোপ করেন। গভটেক সিঙ্গাপুর এর ডেপুটি ডিরেক্টর ও সিনিয়র প্রোডাক্ট ম্যানেজার চ্যান চি লিং সার্বজনীন ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির জন্য সরকার ও বেসরকারি খাতের নীতিমালা কীভাবে তৈরি করা উচিত সে বিষয়ে আলোচনা করেন। ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস ইউনিয়ন (আইটিইউ) এর গভস্ট্যাক গ্লোবাল ওভারঅল লিড ইয়োলান্ডা মার্টিনেজ, ডিজিটাল রুপান্তর ও পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের ক্ষেত্রে ই-কোয়ালিটি অর্জনে সরকারি, বেসরকারি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা কীভাবে একসাথে কাজ করতে পারে তা বর্ণনা করেন। কেনিয়ার টেক ইনোভেটরস নেটওয়ার্ক-এর টিম লিড ব্রায়ান ওমওয়েঙ্গা ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে সমাজে ই-কোয়ালিটি আনয়নে উদ্ভাবনী উদ্ভাবন কীভাবে ভূমিকা রাখছে সে সম্পর্কে তুলে ধরেন। এছাড়া উন্নয়ন-বিষয়ক উদ্যোগ নিয়ে কাজ করা ইন্দোনেশিয়ান পরামর্শক বাস্টিয়ান জাইনি বিকেন্দ্রীকরণ, আঞ্চলিক উন্নয়ন এবং পাবলিক ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে ই-কোয়ালিটি অর্জনে উন্নয়নশীল দেশগুলো যেসকল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে সে সম্পর্কে আলোচনা করেন।

জাতিসংঘের এই বৈশ্বিক ইভেন্টে অংশ নেওয়া প্রধান প্রধান স্টেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠান এবং দেশগুলো ডিজিটাল বিভাজনের দূরীকরণের ধারণাটিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরামর্শক ও উপদেষ্টা গ্রুপের অন্তর্ভুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সাথে অংশীদারিত্ব তৈরি, এর সদস্য নির্বাচন ও পরামর্শমূলক সভা আয়োজনে সংশোধিত কৌশল নির্ধারণ এবং সাউথ-সাউথ আউটরীচ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য নেওয়া প্রকল্পগুলোর উপর একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রস্তুত করার বিষয়ে সুপারিশ করেন বক্তারা। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের মিশনের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি খাত সংশ্লিষ্ট, একাডেমিয়া, সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন, এটুআই, পিপল সেন্টারড ইন্টারনেট, এবং এসএসএনফরপিএসআই এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।