প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানি : প্রণেতা-পরিশোধনকারীরা চিহ্নিত

নিজস্ব প্রতিবেদক:নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ২:২৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০২২

উচ্চমাধ্যমিকের (এইচএসসি) বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ‘সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক’ প্রশ্ন রাখার ঘটনায় জড়িত শিক্ষকদের চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।

মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের প্যাডে জানানো হয়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্রের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক প্রশ্নপত্রটি যশোর শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রণয়ন করা হয়।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, প্রশ্নপত্রটির প্রণেতা (সেটার) ঝিনাইদহের মহেশপুরের ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল।

ওই প্রশ্নপত্র প্রণয়নে যশোর শিক্ষা বোর্ডের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা জড়িত ছিলেন বলে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি তপন কুমার সরকার জানিয়েছেন।

প্রশ্নপত্রটির পরিশোধনকারীরা (মডারেটর) হলেন- নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দিন শাওন, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ম. শফিকুর রহমান, নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ ও কুষ্টিয়া ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের জানান, বিধি অনুযায়ী মন্ত্রণালয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

Nagad

গত ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে ঢাকা বোর্ডের প্রশ্নে বাংলা প্রথম পত্রের ১১ নম্বর প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক একটি উদ্দীপক ব্যবহার করা হয়, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

এরপর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উস্কানি গ্রহণযোগ্য নয়। জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত রোববার সারা দেশে এইচএসসির বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বোর্ডের ‘কাসালাং’ সেটের নাটক সিরাজউদ্দৌলা অংশের ১১ নং প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বিষয়টি উঠে এসেছে।

প্রশ্নের একটি অংশে বলা হয়, ‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। অনেক সালিস বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ-বণ্টন নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আব্দুল নামের এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমির এক অংশ বিক্রি করে। আব্দুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।’

এই গল্প উল্লেখ করে প্রশ্নপত্রে চারটি প্রশ্ন করা হয়। তার দুটি এ রকম—মিরজাফর কোন দেশ হতে ভারতে আসেন? উদ্দীপকের নেপাল চরিত্রের সঙ্গে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের মিরজাফর চরিত্রের তুলনা করো?

বিষয়টিকে ‘দুঃখজনক’ মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গতকাল সোমবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমাদের সুস্পষ্ট নির্দেশিকা দেওয়া থাকে, প্রশ্ন তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্যই যেন কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িকতার কোনো কিছু না থাকে। খুবই দুঃখজনক, কোনো একজন প্রশ্নকর্তা হয়তো এই প্রশ্ন করেছেন। যিনি মডারেট করেছেন, তাঁরও দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে কোনোভাবে। আমরা চিহ্নিত করছি, এই প্রশ্ন কোন সেটের এবং কোন মডারেটর করেছেন। আমরা তাঁদের খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’ সূত্র: বাংলানিউজ, আজকের পত্রিকা।