হরিণাকুণ্ডুতে হুমকির মুখে ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প
ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডু উপজেলাতে ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্প হলো তাঁতশিল্প। উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের নারায়নকান্দী, ভবানীপুর এবং ভায়না ইউনিয়নের বাকচুয়া গ্রাম তাঁতসমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে বেশ পরিচিত।
জানা যায়, ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার লালন শাহ এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন তথা বাঙ্গালী জাতির দুইশত বছরের দাসত্বের শিকল ভাঙ্গার আন্দোলনের সেই মহানায়ক বিপ্লবী বাঘাযতীন এর জনপদ ভবানীপুর, বাকচুয়া, রায়পাড়া ভাতুড়ে, ভুয়োপাড়া, বৈঠাপাড়া, নারায়নকান্দী তাঁতিদের মাঝে বর্তমানে চরম হতাশা বিরাজ করছে। একদিকে তাঁত শিল্পের উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল যেমন সূতা, রং, রাসায়নিক দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বর্তমানে তাঁত শিল্পের অস্তিত্ব হুমকির মুখে। কাঁচামালের দাম বাড়ায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক তাঁত শিল্প। লোকসানে পড়ে পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছে অনেকেই।
উপজেলা পরিসংখ্যান তদন্ত কর্মকর্তা সুরুজ জামান জানান, সর্বশেষ ২০১৮ সালের তাঁত শুমারি হয়। এতে দেখা গেছে এপর্যন্ত উপজেলাতে ১৪১ টি তাঁতি পরিবার আছে। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক আনুমানিক হরিণাকুণ্ডু উপজেলাতে ৩ শত থেকে ৪ শত তাঁত পরিবার রয়েছে। এই তাঁতের সাথে এখানকার উৎপাদিত বিভিন্ন বাহারি ডিজাইনে গামছা অনেক উন্নত মানের। যা চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, পোড়াদাহ বাজারে বে-সরকারী উদ্যোগে রপ্তানি হয় বলে তাঁতিরা জানান। এক্ষেত্রে সরকারি কোন পৃষ্ঠপোষকতা নাই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থা বেশীরভাগ তাঁত শিল্পের উপরেই নির্ভরশীল। নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে এই ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প।
তাঁতীপাড়ার রহিম মণ্ডল, কামাল হোসেন, বিজয় কৃষ্ণ অভিযোগ করে বলেন, সূতা, রং, কেমিক্যাল সহ তাঁত বস্ত্র উৎপাদনের সকল উপকরণের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিসহ উৎপাদন ব্যয় যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সে অনুযায়ী উৎপাদিত কাপড়ের মূল্য বৃদ্ধি পায়নি। অপার সম্ভাবনার এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি যদি সরকারী ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা যায় তবেই আমরা অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবো । তা না হলে হারিয়ে যাবে এ শিল্প ।
১ নং ভায়না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল হোসেন তুষার জানান, ঐতিহ্যবাহী এই তাঁতশিল্প রক্ষায় সবধরনের সূতা ও কাঁচামালের দাম কমানোসহ তাঁত গবেষণা স্থাপন করতে হবে । তাঁত বস্ত্রের বাজার তৈরিতে কার্যকর উদ্যোগ এবং প্রান্তিক তাঁতিদের সুদ মুক্ত ঋণ ব্যবস্থা করা হলে হরিণাকুণ্ডু’র তাঁতিরা ফিরে পাবে হারানো ঐতিহ্য ।
এ বিষয়ে উপজেলার ৩ নং তাহেরহুদা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মনজুর রাশেদ জানান, তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত উদ্যোক্তারা খুবই অসচ্ছল। আমি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। প্রয়োজনীয় পুঁজি ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই উদ্যোক্তারা আমাদের এই কুঠির শিল্পকে জাতীয় অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।
তাঁত শিল্পের নানা বিষয়ে তুলে ধরলে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুস্মিতা সাহা জানান, এই উপজেলাতে বেশকিছু তাঁতশিল্প আছে আমি জানতে পেরেছি। তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হবে। খুব শিগগিরিই সরজমিনে গিয়ে এই তাঁত শিল্পটাকে পরিদর্শন করা হবে বলেও জানান তিনি।