বিজয় শোভাযাত্রায় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীতে বিজয় শোভাযাত্রা বের করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এতে নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে। যেখানে বিএনপি-জামায়াত অরাজকতা সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে, অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের নেতারা দল দুটিকে রাজপথে মোকাবিলার অঙ্গীকার করেছেন। এজন্য নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তারা।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিউশন প্রাঙ্গণে বিজয় শোভাযাত্রা শুরুর আগে দলীয় কর্মীদের এ নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর শাখার আয়োজনে এ শোভাযাত্রায় যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন ও তাদের শাখা সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
ঢাকার বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাল-সবুজের সাজে সজ্জিত হয়ে শোভাযাত্রায় এসেছেন।
মিছিলে নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ড, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খেলা হবে, প্রস্তুত হয়ে যান। আওয়ামী লীগ আন্দোলনে খেলবে, নির্বাচনেও খেলবে। খেলা হবে ভোট চুরির বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে, হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে, খুনিদের বিরুদ্ধে।’
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ মানুষ অন্নের নিশ্চয়তা পেয়েছে, বস্ত্রের নিশ্চয়তা পেয়েছে। তারা বাসস্থান পেয়েছে। শিক্ষা-চিকিৎসা পাচ্ছে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে পরাজিত করে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই, আওয়ামী লীগকে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতাচ্যুত করবে। নির্বাচনে যদি জনগণ ভোট না দেয়, আমরা সালাম দিয়ে চলে যাব। আজকে আমরা শপথ নিচ্ছি, ইনশাআল্লাহ, তোমাদের শিকড় আমরা উপড়ে ফেলব।’
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাহজাহান খান বলেন, ‘আজ বিএনপি-জামায়াত ভেংচি মারে। আওয়ামী লীগ কোনো বানরের ভেংচিতে ভয় পায় না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ এদের দাঁতভাঙা জবাব দেবে।’
বিএনপি-জামায়াত নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে, অভিযোগ করে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত অরাজকতা সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তাদের এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশক পাকিস্তান বানানোর দুঃস্বপ্ন দেখে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। তার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশকে সন্ত্রাস, রাজাকার ও জঙ্গিবাদমুক্ত করব।’
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা আজকে শেখ হাসিনার অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে চায়। সন্ত্রাসের মধ্যে দিয়ে তারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। আজকে আমাদের শপথ নিতে হবে। যেকোনো মূল্যে এই সন্ত্রাসী বিএনপি-জামায়াতকে রাজপথে প্রতিহত করতে হবে।’
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন এই বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এরা দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে যেতে চায়। আজকে বিজয়ের দিনে আমাদের শপথ নিতে হবে—এদেরকে আমরা বাংলার মাটি থেকে বিতাড়িত করব।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন ওই পরাজিত শক্তি নতুনভাবে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এই বিজয়ের মাস থেকেই আমরা ঘোষণা দিতে চাই, পাকিস্তানিদের দোসর বিএনপি-জামায়াতকে নির্মূল করতে হবে।’
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আজকের এই বিজয় র্যালি থেকে আমাদের প্রত্যয় হোক—যেকোনো মূল্যে এই অপশক্তিকে আমরা নির্মূল করব। এই দেশকে নিয়ে, আমাদের স্বাধীনতাকে নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া যায় না।’
আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তারা বলেছিল, ১০ তারিখে নাকি সরকারকে বিদায় নিতে হবে। ১০ তারিখে বিএনপিই পরাজিত হয়েছে। ২০১৪ সালের জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহে যে জাতীয় নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের ফয়সালা ১০ ডিসেম্বর হয়ে গেছে। ১০ তারিখ তারা পরাজয় মেনে নিয়েছে।’
বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল আখ্যা দিয়ে যুগ্ম সাধারণ মানুষ আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, ‘তাদের কাছে দেশ ও দেশের মানুষ কখনো নিরাপদ নয়। তারা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এদেরকে প্রতিহত করতে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে।’
প্রসঙ্গত, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীতে বিজয় শোভাযাত্রা বের করা এ বিজয় শোভাযাত্রায় নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে। রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে এ শোভাযাত্রা শুরু হয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে এটি শেষ হয়।
সারাদিন. ১৭ ডিসেম্বর