জাপার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী: মান ভুলে এক মঞ্চে রওশন–কাদের

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৭:৩৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১, ২০২৩

সংগৃহীত ছবি-

বিদেশে চিকিৎসা শেষে অনেক দিন পর জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে উপস্থিত হয়ে নেতাকর্মীদের সামনে বক্তব্য দিয়েছেন দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। এ সময় তিনি দলের পদ-পদবী নিয়ে যত দ্বন্দ্বই থাকুক, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে মান ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

রবিবার (১ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় রাজধানীর কাকরাইলে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের ৩৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে মান ভুলে এক মঞ্চে আসেন রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের।

এদিন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে বিকেল সোয়া ৪ টার দিকে মঞ্চে আসেন রওশন এরশাদ। দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের পাশের আসনেই বসেন তিনি। এছাড়া সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তার সভাপতিত্বে শুরু হয় অনুষ্ঠান।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সালমা ইসলাম, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা প্রমুখ।

এছাড়া প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সংসদ সদস্য নাজমা আখতার, রওশন আরা মান্নান, হাজী সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন, জহিরুল ইসলাম রুবেল, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, আসিফ শাহরিয়ার, মীর আব্দুস সবুর আসুদ প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে রওশন এরশাদ বলেন, ‘আজকের এই শুভ দিনে পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে। যিনি তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন আমাদের প্রাণপ্রিয় জাতীয় পার্টিকে। একইসঙ্গে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি জাতীয় পার্টির সকল প্রায়ত নেতাকর্মীকে, যাদের অপরিসীম আত্মত্যাগের জাতীয় পার্টি আজও একটি শক্তিশালী রানৈতিক দল হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। আমার মনে পড়ছে, রবিউল ইসলাম রবি, তরুন বসু, হেডলি, স্বপন ঘোসসহ যারা এ দলের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের কথা। আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।’

Nagad

‘দীর্ঘ ১১ মাস পর আজ আমি এই প্রথম জাতীয় পার্টির ৩৭তম প্রতিষ্ঠবার্ষিকীতে সরাসরি উপস্থিত থেকে মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে আপনাদের সম্মুখে কিছু কথা বলতে সামর্থ্য হয়েছি। এতে আমি খুবই আবেগ আপ্লুত। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার স্মরণশক্তি এখনো আগের মতো প্রখর। ঢাকা এসে আমি অসংখ্য দলীয় নেতাকর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। রাজনৈতিক বিষয় ও সমসাময়িক ঘটনা সর্ম্পকে সম্যক ধারণা (গ্রহণ) করেছি।’

অনেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, এই দীর্ঘ সময়ে আমি ব্যাংককে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। আপনারাসহ দেশবাসী সবাই আমার জন্য দোয়া করছেন। আপনাদের দোয়ায় সুস্থ হয়ে আমি আবার দেশে ফিরে আসতে পেরেছি। সেজন্য আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি খুবই কৃতজ্ঞ। তিনি ব্যক্তিগতভাবে শত ব্যস্থতার মাঝেও আমার খোঁজ-খবর নিয়েছে। আমি আরও কৃতজ্ঞ আমার ছেলে সাদ এরশাদ, এমপি ও তার স্ত্রীর প্রতি। তারা দীর্ঘ সময় আমার পাশে থেকে নিয়মিত দেখাশোনা ও সেবা শুশ্রূষা করেছে।’

এদিকে ২০১৮ সালের পর এবারের জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে পাশাপাশি বসেন দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিষ্ঠাবার্ষিকীর পোস্টারেও বহুদিন পর জি এম কাদেরের সঙ্গে রওশন এরশাদের ছবিও দেখা গেছে।

দলের যেকোনো সঙ্কট, সমস্যা জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা হবে বলেও জানান রওশন এরশাদ। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের এখন কর্তব্য হলো, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করা। জাতীয় পার্টি অগ্নিসন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না। জাতীয় পার্টি বিশ্বাস করে উন্নয়ন ও গণতন্ত্রে।

রাজনৈতিক মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় দলীয় চেয়ারম্যান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন না জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের। সে কারণে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সভায় বক্তব্য দিতে পারেননি তিনি।

সভা শুরু হওয়ার আগে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নানা অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি স্মরণ করেন জাপার রাজনৈতিক আন্দোলনে হতাহত নেতাকর্মীদের। সম্প্রতি রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লাঙলের প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমানের বিজয়ে জাপার নেতাকর্মীদের অবদানের কথাও তিনি বক্তব্যে তুলে ধরেন।

দলের বহিস্কৃত নেতা জিয়াউল হক মৃধার দিকে ইঙ্গিত করে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, যে মামলাবাজের কারণে জি এম কাদের আজকে উপস্থিত থেকেও কথা বলতে পারেননি, তার স্থান জাতীয় পার্টিতে কখনও হবে না।

জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, জাতীয় পার্টি কখনও কোনো দলের লেজুড় হবে না। জাতীয় পার্টিকে সুসংগঠিত করে জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে তৈরি করবো। আজকে অনেকে বলেন জাতীয় পার্টিতে ঐক্য নেই। আজকে এই মঞ্চে দেখুন, জাতীয় পার্টির সব নেতা আছেন। এটা ঐক্য নয়তো কি?

এর আগে রবিবার বেলা ২টায় রাজধানীর মুক্তাঙ্গন (সচিবালয় সংলগ্ন) থেকে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। শ্যামপুর- কদমতলী থানা জাতীয় পার্টির উদ্যোগে অনুষ্ঠেয় শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। এতে কয়েক সহস্রাধিক নেতাকর্মী বাদ্যযন্ত্র, ব্যানার ফেস্টুন, বৃহৎ আকারের লাঙল ও ঘোড়ার গাড়ী নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। এতে বাবলা ছাড়াও জাপার কেন্দ্রীয় নেতা সুজন দে, শেখ মাসুক রহমান, ইব্রাহীম মোল্লাসহ মহানগর নেতারা নেতৃত্ব দেন।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির জন্ম ও পতন বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম আলোচিত অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টির নয় বছরের শাসনামলের ইতি ঘটলেও নানা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে দলটি এখনও গুরুত্বপূর্ণ।

ক্ষমতাসীন হওয়ার পথে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুদলই জাতীয় পার্টিকে নিজেদের শিবিরে ভেড়াতে চেয়েছে। জাতীয় পার্টির নেতাদের ভাষ্যে, ক্ষমতায় যারাই আসুক না কেন, জাতীয় পার্টি সবসময় রাজনীতির ‘নিয়ামক শক্তি’।