শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধা জেনে খুশি বেলজিয়ামের রাণী
বেলজিয়ামের রাণী ম্যাথিল্ডে ম্যারি ক্রিসটিয়ান সোমবার নারায়ণগঞ্জের ফকির এপ্যারেলস পরিদর্শন করেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য নিয়োজিত ১৭ জন এডভোকেটের একজন হিসেবে রাণী বাংলাদেশ সফর করছেন। তিনি এ পরিদর্শনে এসে এখানকার শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধা জেনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
বেলজিয়ামের রাণী নারায়ণগঞ্জের সফরটিকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে বর্ণনা করে বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, তার আগমনে পোশাক শিল্পের ব্রান্ডিংয়ের জন্য বিশাল একটি কাজ হলো। আর বিজেএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, রাণী ম্যাথিল্ডে ফকির এপ্যারেলস পরিদর্শনের পর শ্রমিকদের বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধার বিষয়গুলো জানতে পেরে এবং স্বচক্ষে দেখে খুশি হয়েছেন।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা দুইটায় বেলজিয়ামের রাণী নারায়ণগঞ্জের ফকির এ্যাপারেলস-এ এসে পৌছান। এসময় তার সফরসঙ্গীদের মধ্যে ইউরোপিয়ান বিভিন্ন গণমাধ্যমের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধিও ছিলেন। এছাড়া বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিজেএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান, ফকির এ্যাপারেলস এর এম ডি ফকির মনিরুজ্জামান, ডিএমডি নাফিজুজ্জামান, ডিরেক্টর ফকির রাফসানুজ্জামান, ডিরেক্টর মুনজারিন জামান, পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তাফা রাসেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রাণী ম্যাথিন্ডে ফকির এ্যাপারেলসের করপোরেট ভবন, প্রোডাকশন হাউজ, ডে-কেয়ার সেন্টারসহ বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। প্রোডাকশন হাউজে তাকে প্রতিষ্ঠানের তৈরী টি-শার্ট উপহার দেন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কলি বেগম ও মোহসিনা। দো-ভাষীর মাধ্যমে তাদের সঙ্গে কথা বলেন রাণী।
কথোপকথন সম্পর্কে কলি বেগম ও মোহসিনা জানান, রাণী তাদের কাজের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চান। নারী শ্রমিকরা উত্তর দেন, তাদের কাজের পরিবেশ খুবই ভালো। কোনো রকম হয়রানীর শিকার হতে হয় না। বেতন, বোনাসসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভালো ও সময় মতো দেয়া হয়। প্রসবকালীন ছুটির সময়েও তাদের পূর্ণ বেতন দেয়া হয়। গর্ভাবস্থায় তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। বাচ্চা হওয়ার পরে প্রতিষ্ঠানের ডে-কেয়ার সেন্টারে রাখার সু-ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রোডাকশন হাউজের আরো বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেন রাণী। তার পরিদর্শন সম্পর্কে বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের হেডকোয়ার্টার হচ্ছে বেলজিয়াম। বেলজিয়ামের কুইন আসা মানে হচ্ছে পুরো ইউরোপের উচ্চ পর্যায়ের এটি একটি রাষ্ট্রীয় সফর। তার সাথে সেখানকার মিডিয়া আসছে, সিকিউরিটি ফোর্স আসছে। তাদের রিপোর্টিং যেটা হবে এবং রাণীর মাধ্যমে যে বার্তাটা যাবে সেটি আমাদের ব্রান্ডিংয়ের জন্য বিশাল কাজে লাগবে। কারণ এতদিন আমরা তাদের বলেছি- এখানে শ্রমিকরা কত ভালো পরিবেশে কাজ করে, কি-কি সুবিধা ভোগ করে।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প যে এতটা উপরে পৌছেছে এটা তারা চিন্তাও করেনি, আজ তারা এটা স্বচক্ষে দেখে গেলেন।
বিজেএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান জানান, রাণী বাংলাদেশে এসেই ফকির এপ্যারেলস পরিদর্শনে এসেছেন। নারীদের কর্মসংস্থান, রি-সাইকেল, গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে যে আমরা কাজ করছি এটি রাণীসহ তার সফর সঙ্গীরা দেখেছেন। এই পরিদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইমেজ আরো ভালো হবে। তার মাধ্যমে আমাদের ব্র্যান্ডরাও দেখবে যে আমরা কি কাজ করছি। তার সাথে কথা বলে আমরা যেটা বুঝেছি তিনি এ ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করে খুবই খুশি। বিশেষ করে আমাদের নারী কর্মীদের সাথে কথা বলে তিনি খুশি হয়েছেন। আমাদের নারী কর্মীদের আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছি। এগুলি জেনে তিনি খুশি হয়েছেন। আগামীতে যাতে আমরা এগুলো অব্যহত রাখি সেটি উনি বলেছেন। আমরা তাকে তৈরী পোশাকের মুল্যের বিষয়ে বলেছি যে, আমরা শ্রমিকদের এত সুবিধা দিচ্ছি, এত ভালো কাজ করছি, কিন্তু পোশাকের ইথিক্যাল মুল্যটা যদি পাওয়া না যায় তাহলে শ্রমিকদের জন্য এই যে আমরা কাজগুলো করছি, এগুলি ধরে রাখা কঠিন হবে।
রাণীর পরিদর্শন সম্পর্কে ফকির এ্যাপারেলসের ডিএমডি নাফিজুজ্জামান জানান, আজকে আসলে শুধু ফকির এপ্যারেলস না, আমরা তার কাছে আমাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এখানে সাসটেইনেবিলিটি ও সোস্যাল সাসটেইনেবিলিটি দুইটা টপিক ছিলো। উনি নারীদের ক্ষমতায়ণ, কর্মায়ণ নিয়ে আমাদের কাছে নানা কিছু জানতে চেয়েছেন এবং আমাদের প্রশংসা করেছেন যে আমাদের কাজ নারীর ক্ষমতায়ণে সহায়তা করছে। তিনি এই পরিদর্শন করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। আর আমাদের এই ভালো কাজের গল্পটা তিনি তার সাথে নিয়ে গিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে শেয়ার করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। সূত্র: বাসস
সারাদিন. ৭ ফেব্রুয়ারি