বান্দরবানে কেএনএর হামলায় সেনা সদস্য নিহত

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৭:৫৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৩, ২০২৩

বান্দরবানের রুয়াংছড়ির দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির অতর্কিত গুলিবর্ষণে সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুই সেনাসদস্য।

গত রবিবার দুপুর আনুমানিক ১টায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। আজ সোমবার (১৩ মার্চ) আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গত রবিবারের ঘটনা সম্পর্কে আইএসপিআর জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জাতীয় শিশু দিবস-২০২৩ ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মা ও শিশুদের বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার উদ্দেশে সেখানে যাওয়া একটি দলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনা সদস্যদের ওপর দুপুর আনুমানিক ১টায় কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন এবং দুজন সেনা সদস্য আহত হন। আহত দুই সেনা সদস্য বর্তমানে চিকিৎসাধীন।

সোমবার (১৩ মার্চ) আইএসপিআর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

আইএসপিআর জানায়, নিহত ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন বিগত ৩০ বছর যাবৎ সততা, নিষ্ঠা এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার পিতার নাম শমসের আলী। তিনি রংপুর সদরের ঘাঘটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। দেশ মাতৃকার সেবায় তার এই মৃত্যুতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

আইএসপিআর আরও জানায়, বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি নামের এই সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলটি ইতোপূর্বে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’র মতো একটি জঙ্গি গোষ্ঠীকেও বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পাহাড়ি এলাকার অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য সরকারের নির্মিয়মান বান্দরবানের থানচি সড়ক সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের এই উন্নয়নমূলক কার্যক্রমকে প্রতিহত করার জন্য কেএনএ সন্ত্রাসী দলটি সড়ক নির্মাণ কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত অসামরিক ঠিকাদার, মালামাল সরবরাহকারী এবং শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রথমে চাঁদা দাবি করে ও পরবর্তী সময়ে কাজ বন্ধ করার হুমকি দেয়। কিন্তু সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই কাজ চলমান থাকায় কেএনএ সন্ত্রাসী দল গত ১১ মার্চ ১২ জন শ্রমিককে অপহরণ করে। এদের মধ্যে একজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয় এবং চার জন শ্রমিককে এখনও কেএনএ জিম্মি করে রেখেছে। বাকি সাত জন শ্রমিককে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিলেও তাদেরকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ না করার জন্য হুমকি প্রদান করে এবং কেএনএ ১২ মার্চ সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর গুলিবর্ষণ করে।

Nagad

গত ৮ ফেব্রুয়ারি (২০২৩) বান্দরবানের তিন উপজেলায় গাড়ি চলাচল বন্ধের জন্য কেএনএ পরিবহন মালিক সমিতিকে হুমকি দিয়ে নোটিশ জারি করে। কেএনএ সদস্যদের নানামুখী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সৃষ্ট নিরাপত্তাজনিত কারণে রোববার (১২ মার্চ) ওই এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন। এছাড়া কেএনএ’র নির্যাতনে স্থানীয় বিভিন্ন পাহাড়ি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী ঘর ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে। কেএনএ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর চাঁদাবাজি, মাদকের চোরাচালান, অপহরণ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কারণে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, বেসরকারি বিনিয়োগ ও পর্যটন শিল্প বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যার সূদুরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। কেএনএ’র এই অপতৎপরতা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার পাশাপাশি বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে এবং সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান শান্তিশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে বিঘ্নিত করছে।

সারাদিন. ৬ মার্চ