স্বাস্থ্যসেবার শীর্ষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৩৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৩, ২০২৩

দেশের ১৭ সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের র‌্যাংকিং প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে দেখা গেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ (২০২২ সালের ডিসেম্বর) মূল্যায়ন সূচকে স্বাস্থ্যসেবায় দেশ সেরা (প্রথম) অবস্থান করে নিয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। রোববার (২ এপ্রিল) নিজেদের ওয়েবসাইটে এ মূল্যায়নের ফল প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

জানা যায়, চিকিৎসা সরঞ্জামের পর্যাপ্ততা ও ব্যবহার, বহির্বিভাগে সেবা, আন্তঃবিভাগে রোগী ভর্তি, বেড অকুপেন্সি হার, নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারির হার, মেজর (বড় পরিসরে) ও মাইনর (ছোট পরিসরে) সার্জারির সংখ্যা, নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন, রোগীদের সন্তুষ্টি, অনলাইনে ডাটা ইনপুটসহ হাসপাতালের সার্বিক সেবা ও সুবিধা বিবেচনায় দেশের ১৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে র‌্যাংকিং নির্ধারণ করে আসছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তার ভিত্তিতে অনলাইনে প্রদত্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে অধিদপ্তরের এমআইএস (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) শাখা এ মূল্যায়ন করে থাকে।

প্রকাশিত মূল্যায়ন সূচকে র‌্যাংকিংয়ের আওতায় থাকা দেশের বাকি ১৬টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের টার্শিয়ারি লেভেলের একমাত্র এ হাসপাতাল।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৩৭টি। এর মধ্যে হাসপাতাল আছে ২৯টির। এসব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বরাবরই রোগীর চাপ থাকে বেশি। প্রতিনিয়ত শয্যা সংখ্যার কয়েক গুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকছে। হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে সরকারিভাবে নিয়মিত র‌্যাংকিং করে আসছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সর্বশেষ র‌্যাংকিংটি করা হয়েছে ১৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে।

এ বিষয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান গণমাধ্যমকে বলেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মূল্যায়নের ফলাফল রোববার প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মূল্যায়ন সূচকে আমাদের হাসপাতাল প্রথম হয়েছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটি সম্ভব হয়েছে বলে আমরা মনে করি। এই অবস্থান নিজেদের প্রচেষ্টাকে আরো উৎসাহিত করবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় (ফ্যাসিলিটি স্কোরিং) মোট ৮০ স্কোরের মধ্যে চমেক হাসপাতালের প্রাপ্ত স্কোর ৬৩। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্কোর ৬২.৩৬। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির প্রাপ্ত স্কোর ৬২.১৫। ৬১.৭৮ স্কোর নিয়ে ৪র্থ অবস্থানে সিলেট এএমজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

৫ম অবস্থানে থাকা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্কোর ৬১.৭৫-জানিয়ে তিনি বলেন, এরপর যথাক্রমে ময়মনসিং মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (বগুড়া), কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ফরিদপুর), শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অবস্থান।

Nagad

অধিদপ্তরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মূল্যায়ন সময়কালে (২০২২ সালের ডিসেম্বর) চমেক হাসপাতালের বেড অকুপেন্সি (শয্যার বিপরীতে রোগীর) হার ছিল ২১৮ শতাংশ। বহির্বিভাগে সেবা গ্রহীতার সংখ্যা ১ লাখ ৪২ হাজার ৫৫২ জন। যদিও লক্ষ্যমাত্রা ৬৮ হাজার ৩৮৪। মাসে ৫ হাজার ৬৫৮টি লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাইনর সার্জারি হয়েছে ৬ হাজার ২০টি। ২ হাজার ৩৭৩টি লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও মেজর সার্জারি সম্পন্ন হয়েছে ২ হাজার ৮৭১টি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার বেশি সেবা প্রদানে পূর্ণাঙ্গ স্কোর পেয়েছে চমেক হাসপাতাল।

চমেক হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালের বর্তমান শয্যা সংখ্যা ২২শ হলেও প্রতিনিয়ত প্রায় তিন হাজার রোগী ভর্তি থাকছে। জরুরি ও বহির্বিভাগ মিলিয়ে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন গড়ে সাড়ে তিন হাজার রোগী। তবে শয্যা সংখ্যা বাড়লেও হাসপাতালের জনবল বাড়েনি।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমানে চমেক হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ২২শ। সরকারি পর্যায়ে দেশের বৃহৎ হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ২৬শ। তবে সর্ববৃহৎ এই হাসপাতালের সার্জারি সেবাসহ বিভিন্ন সেবায় লক্ষ্যমাত্রা ও সেবাদানের হার চমেক হাসপাতালের তুলনায় কম। চমেক হাসপাতালে ৬ হাজার মাইনর সার্জারির স্থলে ঢামেক হাসপাতালে এ সংখ্যা ৩ হাজার ৫২৫টি। একইভাবে চমেক হাসপাতালে মাসে ২ হাজার ৮৭১টি মেজর সার্জারি সম্পন্ন হলেও ঢামেক হাসপাতালে এ সংখ্যা ২ হাজার ৩১৬টি। অর্থাৎ ঢামেকের তুলনায় বেশি সার্জারি সেবা দিয়ে থাকে চমেক হাসপাতাল। যদিও বাজেট–বরাদ্দের ক্ষেত্রে ঠিক উল্টো।

তুলনামূলক কম বাজেট ও জনবলসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মাঝেও রোগীদের চিকিৎসাসেবার মান বাড়াতে চেষ্টা করছেন বলে জানালেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। তিনি বলেন, ডাক্তার–নার্স, কর্মকর্তা–কর্মচারী ও অন্যান্য স্টাফসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত আন্তরিক প্রচেষ্টায় হাসপাতালের এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। এজন্য সকলকে ধন্যবাদ জানাই। এ অবস্থান ধরে রাখতে এবং সেবার মান আরো উন্নত করতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। সূত্র: দৈনিক আজাদী।

সারাদিন. ৩ এপ্রিল