কলাপাড়ায় তরমুজ ক্ষেতে বৃষ্টির পানি, চরম বিপর্যয়ে তরমুজ চাষিরা

কলাপাড়ায় উপকূলীয় এলাকাগুলোতে গত কয়েক দিনের মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিতে তরমুজ খেতে প্রচুর পানি জমেছে, শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। ক্ষেত থেকে পানি অপসারণ করছে চাষিরা। তরমুজ চাষিরা জানান, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ক্ষেতে যে পরিমাণ পানি জমা হয়েছে এতে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে। তবে আরও বৃষ্টি হলে ক্ষেত শেষ হয়ে যাবে, বৃষ্টির কারণে গাছে ছোট ছোট তরমুজের বড় তরমুজও করাগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। চাষিরা আরও জানান, এবারে সার, বীজ ও কীটনাশকের দাম বেশী থাকায় দিশেহারা কৃষক।

আবার তরমুজ আবাদের জন্য অনেক এনজিও এবং ব্যাংক থেকে ঋণ করেছেন। তারা এখন চিন্তিত বৃষ্টিতে তরমুজ চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ও একদিকে সারা বছরের জীবন জীবিকার পথ রুদ্ধ, অন্যদিকে সরকারী বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং মহাজোনের কাছ থেকে চড়া সুদে নেওয়া পুঁজির অর্থ ফেরত দেওয়ার দুশ্চিন্তায়।

কৃষি অফিস সূত্র মতে জানা যায়, এ বছর এ উপজেলায় ২০০০ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। গত বছরের ১৮০০শত হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষাবাদ হয়। সে তুলনায় এ বছর ২০০শত হেক্টর জমিতে তরমুজ বেশি আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ৪০ মেট্রিকটন তরমুজ উৎপাদন হয়। ৪০ টাকা কেজি দরে যার বাজার মূল্য ১৬ লাখ টাকা। এই হিসাবে উপজেলার চাষিদের অন্তত প্রায় কয়েক কোটি টাকার তরমুজ উৎপাদন হওয়ার কথা। বৃষ্টিতে তরমুজ চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

চাষিদের পানি নিষ্কাশনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কৃষি অফিস থেকে। গাছে পচন না ধরলে তেমন লোকসান হবে না।’

সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধানখালী, চম্পাপুর, বালীয়াতলী, ধূলাসার, মিঠাগঞ্জ, কুয়াকাটা, লতাচাপলী তরমুজ বেশি চাষাবাদ হয়। বসন্তের শুরুতেই মওসুমের বৃষ্টি রবিশস্যের জন্য কিছুটা উপকারি হলেও আবার তরমুজ চাষিদের স্বপ্ন এখন দু:স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। কয়েক দিন আগেও মাঠে তাকালে শুধু সবুজের সমারোহ ছিল কিন্তু সেই সবুজ মাঠের মধ্যে এখন শুধু পানি আর পানি। তরমুজ ক্ষেতের বেডের মধ্যে বৃষ্টির পানি জমেছে। চাষিরা জমে থাকা বৃষ্টির পানি সেচ পাম্প ও পাত্র দিয়ে সেচে অপসারণ করছেন। ক্ষেতের গাছগুলোতে ফুল ও ফলে ভরা, চারদিনের বৃষ্টিতে তার ক্ষেতে পানি জমেছে। ক্ষেত থেকে পানি অপসারণ করতে ক্ষেত রক্ষার জন্য নালা কেটে পানি সরিয়ে দিচ্ছি। রোদে তরমুজ গাছ রক্ষা করা যাবে কিনা চিন্তায় আছেন। ভারী বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টিতে অধিকাংশ তরমুজ খেতে পানি জমেছে। কৃষকরা পানি নিষ্কাশনে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু তরমুজ গাছের গোঁড়ায় পানি জমায় গাছ পচে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

একটু বৃষ্টি কমলেই ক্ষেত থেকে পানি সরানোর জন্য নেমে পড়েন তরমুজ চাষিরা। গত কয়েক দিন দফায় দফায় বৃষ্টি হওয়ায় পানিতে তলিয়ে আছে একরের পর একর তরমুজের ক্ষেত। অধিকাংশ তরমুজের ক্ষেতেই ফল পাকা ছিলো। বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টিতে অধিকাংশ তরমুজ উপরিভাগ নষ্ট ও খেতে পানি জমেছে। এ অবস্থায় গত কয়েক মাসের শুধু নিরলস পরিশ্রমই নয় সে সাথে চরম লোকসানের আশংকা করছেন কৃষকরা। অধিকাংশ চাষি ব্যাংক ঋণ নিয়ে তরমুজ চাষ করেন। প্রতি কানিতে তরমুজ চাষে এখন পর্যন্ত কৃষকদের প্রায় দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে।

Nagad

স্থানীয় সূত্রমতে, কলাপাড়ার ১২টি ইউনিয়ন তরমুজ ও বিভিন্ন রবিশস্য ভুট্রা, সূর্যমুখী, ভেন্ডি, ডাল, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু, কাচা মরিচ, বাদাম চাষের প্রসিদ্ধ হওয়ায় অঞ্চলটি শস্য ভাণ্ডারের খ্যাতি অর্জন করেছে। এখানকার তরমুজ সুস্বাদু এবং ব্যাপকহারে চাষাবাদের কারণে দেশে এবং দেশের বাইরে উপজেলা তরমুজের ব্যাপক চাহিদা। এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রেখে চলেছে তরমুজের চাষাবাদ। প্রতিবারের ন্যায় এবার সেখানে শতভাগ জমিতে তরমুজসহ অন্যান্য ফলনের চাষাবাদ করা হয়। স্বাভাবিক নিয়মে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে চাষাবাদ শুরু করে এপ্রিল মাসের মধ্যে উৎপাদিত
ফসল বিক্রির আশা করা হচ্ছিল। ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে শতভাগ গাছের চারা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ঘটনায় চাষি পরিবারের মাথায় হাত। একদিকে সারা বছরের জীবন জীবিকার পথ রুদ্ধ, অন্যদিকে সরকারী বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং মহাজোনের কাছ থেকে চড়া সুদে নেওয়া পুঁজির অর্থ ফেরত দেওয়ার দুশ্চিন্তায় তারা।

অসময়ের অতি বৃষ্টিতে চারাগাছ নষ্ট হওয়ায় তাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। একদিকে সারা বছরের জীবন জীবিকা অনিশ্চিত অন্যদিকে সুদসহ সেই অর্থ ফেরত দেওয়ার আতংকে আছে তারা। উৎপাদনের এই বিপর্যয়ের মুখে কিভাবে সেই ঋণ পরিশোধ করবেন সেই আতংকে দিশেহারা কৃষক পরিবার গুলো।

চম্পাপুর ইউনিয়নে দেবপুর গ্রামের তরমুজ চাষি মো. শরীফ মিয়া জানান, এবার ৪ কানি জমিতে তরমুজ চাষাবাদ করছি। ‘এনজিও থেকে ঋণ ও আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে ৬০০০০০ লাখ টাকা খরচ করে তরমুজ চাষ করেছি। তা এখন কিছু জায়গা পানি জমিয়ে আছে। কীভাবে ব্যাংকের ঋণ শোধ করব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। বিক্রির উপযোগী কিছু তরমুজ আছে। দেবপুর গ্রামের জলিল শেখ, মাসুদ গাজী, হানিফ মিয়া বলেন, লাখ লাখ টাকা ঋণ করে তরমুজ চাষ করেছিলাম, কিন্তু সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন আশা- ভরসা বলতে কিছুই রইল না। আল্লাহ আমাদের কেন এমন সর্বনাশ করল জানি না। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে। শিলা বৃষ্টিতে ফিকে হয়ে গেছে আমাদের স্বপ্ন। লাভ দূরের কথা, আসল টাকা তুলতে পারব কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। লাখ টাকা খরচ করে জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলাম। শিলা বৃষ্টিতে তরমুজ খেত নষ্ট না হলে কয়েক লাখ টাকা বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু এখন লাভের আশা করছি না, খরচের টাকা ওঠানোর চিন্তায়আছি।’

ধুলাসার ইউনিয়নে তারিকাটা গ্রামের সেরাজুল জানায়, ভাই জমিতে তরমুজ আবাদ করিছি কিন্তু বৃষ্টিতে ক্ষেতে জমা পানি সরাতে নালা কেটে দিয়েছি, এরপর বৃষ্টি হলে আমাদের আর রক্ষা নেই। তরমুজ উৎপাদনের এখন পর্যন্ত ধার করে এই টাকা জোগাড় করা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে হয়তো কাঙ্ক্ষিত ফল পাবো না।

কলাপাড়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আ. জব্বার শরীফ জানান, আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত দিনে ও রাতে হালকা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে।

কলাপাড়া কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এম আর সাইফুল্লাহ বলেন, কৃষকদের ক্ষতি যেন কম হয় সেজন্য মাঠে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তরমুজ ক্ষেত নষ্ট হয়েছে চম্পাপুর এলাকায়। এবছর ফলন ভাল ছিল কিন্তু বৃষ্টিপাতের কারণে অনেক জায়গায় তরমুজ গাছ ও তরমুজ নিয়ে কাঙ্খিত ফল হয়তো পাওয়া যাবেনা।

সারাদিন. ৪ এপ্রিল