ভেজাল বীজে কপাল পুড়লো ভুট্টা চাষিদের

হত দরিদ্র কৃষক জোবেদুল ইসলাম। ঋণের টাকায় ৪ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে লাগিয়েছিলেন হাইব্রিড হিরো জাতের ভুট্টা বীজ। তিন মাস পরেই তা চোখের পানিতে পরিণত হয়েছে। গাছে মোচা আছে কিন্তু ভিতরে দানা নেই। এ ফলন দেখে কাউকে কিছু বলতে পারছেন না শুধু নীরবে কাঁদছেন তিনি । শুধু এ কৃষক নয়। তার মতো অবস্থা তিস্তা চরাঞ্চলের প্রায় পাঁচ থেকে ছয় জন ভুট্টা চাষির। কৃষকের এই চিত্র দেখার যেন কেউ নেই। বীজ ডিলার ও কোম্পানির প্রতিনিধির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনদের কাছে বিচার চাইলেও পাননি।

হাতীবান্ধা উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, দেশের বৃহৎ একটি ভুট্টার চাহিদা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা থেকে সরবরাহ করা হয়। বিশেষ করে লালমনিরহাটের তিস্তা পাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকায় এ ফসলের চাষাবাদ বেশি হয়। তাই বরাবরের মতো চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর।

এসব জমিতে হাইব্রিড মোটা দানা ও হাইব্রিড হিরো মিলে ১৫টি প্রজাতির ভুট্টা চাষাবাদ করা হয় জমির উর্বরতানুযায়ী। ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন ও পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের কৃষকরা ভুট্টার ফলন দেখে কাঁদছে। তাদের জমিতে ভুট্টার মোচা আছে ভিতরে দানা নেই। দানা না হওয়ায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষকরা । প্রতি বছরই এ ফসলের চাষ বাড়ায় দিনদিন আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়েছিল তাদের। তবে এ ধারাবাহিকতায় ছন্দপতন ঘটে নিম্ন মানের ও ভেজাল বীজের কারণে। বীজ লাগানোর পর হতে শুরু করে গাছ বেড়ে ওঠা পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। যখন গাছে মোচা ধরে, তখনই দেখা দেয় বিপত্তি। প্রতিটি গাছেই মোচা আছে তবে ভুট্টায় দানা নেই। এতে ধার-দেনা করে ফসল লাগানো চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের তিস্তার চর এলাকার কৃষক জোবেদুল জানান, ৪বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছি। এর মধ্যে হাইব্রিড হিরো ভুট্টার গাছের মোচাতে দানা নেই।একই কথা বলেন কৃষক তহুবার সহ আরো অনেকেই। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চামটারহাটের ডিলার রানার কাছ থেকে ইয়েস এগ্রো সাইন্স এর হিরো হাইব্রিড ৪৫২৩ (মাহিকো ইন্টারন্যাশনাল) কিনেছিলাম। তিনি ভারতের বলে সকলের কাছে বিক্রি করেছেন। একই অভিযোগ করেন প্রায় সকল কৃষক।

কৃষকরা আরো বলেন, এ বীজ বিক্রেতা ও তার প্রতিনিধি রাশেদুল প্রতিবছর ভুট্টা সংগ্রহ করে নিজেই বীজ প্যাকেজিং করে।

তবে ভেজাল বীজ সরবরাহের কথা অস্বীকার করেন ডিলার রানা বলেন, আমি চামটারহাট এলাকার অনেক পুরাতন ব্যবসায়ী চরের ওই কৃষকেরা প্রতিবছর আমার কাছ থেকে সার ও বীজ ক্রয় করে থাকেন। ইয়েস এগ্রো সাইন্স কোম্পানির প্রতিনিধি রাশেদুলের পিরাপিরিতে তার কিছু বীজ বিক্রি করেছিলাম। এখন দেখি কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হলো। কোম্পানির প্রতিনিধিকে একাধিক বার বলেছি সমস্যা সমাধান করে দিতে কিন্তু তিনি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

Nagad

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইয়েস এগ্রো সাইন্সের স্থানীয় প্রতিনিধি রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমি কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। ভেজাল ও নিম্ন মানের বীজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমাদের বীজ কোম্পানিকে ফাঁসাতে একটি মহল এমন অপপ্রচার করছেন। তবে ভুট্টায় দানা নেই কথাটি সত্য নয়, কিন্তু পরিমাণে কম। যা অন্য সমস্যার কারণেও হতে পারে।

ইয়েস এগ্রো সাইন্স’র এক্সিকিউটিভ অফিসার আল আমিন জানান এ বিষয়ে এখনো কিছু আমাদের জানা নাই। তবে অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর একটু সমস্যা হয়েছে। আমাদের বীজ সরাসরি ইন্ডিয়া থেকে আসে ভেজাল বীজ বাজারজাত করনের কোন প্রশ্নই উঠেনা।

হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: সুমন মিয়া বলেন, ভুট্টা চাষাবাদ করে যে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে ক্ষতিপূরণ আদায় করে কৃষকদের দেয়া হবে পাশাপাশি আগামীতে যেন সে কোম্পানি ভেজাল ও নিম্নমানের বীজ বাজারে বিক্রি করতে না পারে তার জন্য কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।তবে সকল ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক দাবি করছেন আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও ভেজাল বীজ বিক্রেতাকে আইনের আওতায় এনে যথাযথ বিচারের। যাতে ভবিষ্যতে কৃষি ও হত-দরিদ্র কৃষকদের পুঁজি করে এমন অপকর্ম কেউ করতে না পারে।