সুদানে দুই সামরিক বাহিনীর সংঘর্ষ, নিহত ২
উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আধাসামরিক বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। চলমান এই সংঘাতে দেশটিতে ২৭ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে জাতিসংঘের তিন কর্মীও রয়েছেন। ১৭০ জন আহত হয়েছে।
দুই বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা চলার পর শনিবার হঠাৎ করে লড়াই শুরু হয়। এরপর সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং খার্তুমের রাস্তা নির্জন হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, আধাসামরিক বাহিনী দাবি করেছে যে তারা প্রেসিডেন্টের বাসভবন, বিমানবন্দরসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দখল নিয়েছে।
তবে সেনাবাহিনী এই দাবিগুলো অস্বীকার করেছে এবং শনিবারের শেষের দিকে এক বিবৃতিতে, সুদানী বিমান বাহিনী আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এর ঘাঁটিগুলির বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়ে যাওয়ার কারণে জনগণকে বাড়ির ভিতরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে।


ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই বাহিনীর লড়াই থেকে অবশ্য রাজধানী খার্তুমে বাসিন্দারা দূরে রয়েছেন এবং সুদানের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, রাষ্ট্রীয় টিভি ও সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর দখলে নিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আধাসামরিক বাহিনী।
বিবিসি বলছে, নিহতদের মধ্যে জাতিসংঘের তিনজন কর্মীও রয়েছেন। সামরিক বাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা একটি সামরিক ঘাঁটিতে গুলি বিনিময়ের সময় তারা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। সুদানের সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে তীব্র ক্ষমতার দ্বন্দ্বই এ সংঘাতের কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে সুদানের সেনাবাহিনী এবং তার বিরোধী আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) উভয়ই দাবি করেছে, তারা রাজধানী খার্তুমের বিমানবন্দর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। যদিও এসব এলাকায় রাতভর লড়াই চলেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া দারফুর অঞ্চলের শহরগুলোসহ সুদানের অন্যত্রও সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।
দেশটির সেনাবাহিনী বলেছে, বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান আরএসএফ’র ঘাঁটিতে আঘাত করছে। একইসঙ্গে শনিবার রাতে মানুষকে তাদের বাড়িতে থাকতে বলেছে দেশটির বিমান বাহিনী। তবে খার্তুমের বাসিন্দারা বিবিসিকে তাদের আতঙ্ক ও ভয়ের কথা জানিয়েছেন। একজন জানিয়েছেন, তাদের পাশের বাড়িতে গুলি চালানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে উত্তর আফ্রিকার এই দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর থেকে সেনাবাহিনীর জেনারেলরা ‘স্বাধীন কাউন্সিল’-এর নামে দেশ পরিচালনা করছিলেন।
এই স্বাধীন কাউন্সিলের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হলেন জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো। অপরদিকে স্বাধীন কাউন্সিলের প্রধান হলেন জেনারেল আব্দেল ফাতাহ আল-বুরহান।
বেসামরিক সরকার গঠনের অংশ হিসেবে সম্প্রতি আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর এই বিষয়টি নিয়েই সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।
সেনাবাহিনী বলছ, আরএসএফকে দুই বছরের মধ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করা হবে। কিন্তু আরএসএফ বলছে এই একীভূতকরণের প্রক্রিয়া যেন অন্তত ১০ বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরএসএফকে একীভূত করলে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব কে দেবে এ নিয়েও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা