তুরস্কে নির্বাচন রোববার, কে হচ্ছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট?

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৬:২৫ অপরাহ্ণ, মে ১৩, ২০২৩

ছবি- সংগৃহীত

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ তুরস্কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন রোববার (১৪ মে) অনুষ্ঠিত হবে। দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানের জন্য এবারের নির্বাচন ‘কঠিন পরীক্ষা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গত ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা এরদোয়ানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে তুরস্কের ছয়টি রাজনৈতিক দল জোট বেঁধেছে। দেশটির ইতিহাসে এর আগে কখনও এতগুলো দলকে ‘এক হতে’ দেখা যায়নি।

আর এই জোটের নেতৃত্বে রয়েছেন কেমাল কিলিকদারোগলো। ৭৪ বছর বয়সী সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তা এরদোগানের জন্য বড় ধরনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছেন।

শুক্রবার (১২ মে) তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় একটি নির্বাচনী সমাবেশে যোগ দেন ৭৪ বছর বয়সী কেমাল কিলিকদারোগলো। এই সমাবেশে কূটনীতিক থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়া কেমাল দাবি করেছেন, রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান তার নিজ স্বার্থ হাসিলে পার্লামেন্টের ক্ষমতা কমিয়েছেন। ধর্মনিরপেক্ষ এই রাজনীতিবিদ জানান, যদি তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তাহলে পার্লামেন্টের পুরোনো ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবেন।

নির্বাচনের আগে যেসব জরিপ চালানো হয়েছে, তাতে দেখা গেছে কেমাল এরদোয়ানের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে আছেন। কেমালের সমর্থকরা ‘স্বপ্ন’ দেখছেন তাদের প্রার্থী ১৪ তারিখের নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাবেন। মানে নির্বাচনের প্রথম দফাতেই তার জয় নিশ্চিত হয়ে যাবে।

তুরস্কের নির্বাচনী বিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে একজন প্রার্থীকে এককভাবে ৫০ শতাংশ বা এর বেশি ভোট পেতে হবে। এমনটি যদি না হয় তাহলে যে দু’জন প্রার্থী সর্বোচ্চ ভোট পাবেন তাদের মধ্যে দুই সপ্তাহ পর রানঅফ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে কেমালের সমর্থকরা আশা করছেন, রানঅফ নয়, রোববারই এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট পাবেন তিনি।

Nagad

তবে এবারের নির্বাচনে যারা ভোট দিচ্ছেন তাদের ৮ শতাংশ ‘ফার্স্ট-টাইম ভোটার’ যারা প্রথমবারের মতো ভোট দিচ্ছেন। এছাড়া অনেকে মনে করেন তুরস্কে যেসব গ্রুপ এখনও মনস্থির করেননি যে তারা কাকে ভোট দেবেন, তাদের মধ্যে এই গ্রুপটি সবচেয়ে বড়।

তবে ২০ বছর বয়সী সালিহ কাকে ভোট দেবেন সেটা তার কাছে পরিষ্কার। তিনি বিবিসি’কে বলেন, “আমি মনে করি রজব তাইয়েব এরদোগান একজন ক্যারিশম্যাটিক নেতা। তুরস্কের রাজনীতিতে এই ধরনের ক্যারিশমা থাকা গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি বিশ্বাস করেন এরদোগান তার শাসনামলের বিভিন্ন অর্জনের ওপর ভিত্তি করে তুরস্কের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবেন।

সালিহ আরও বলেন, “এর আগে তুরস্কে জ্বালানির বিষয়ে অনেক সমস্যা ছিলো এবং সামরিক কারণে দেশটিকে অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু এখন আমরা নিজেরাই নিজেদের গাড়ি উৎপাদন করছি, ড্রোন ও বিমান তৈরি করছি। এরদোগান আমাদের সব সমস্যা সমাধান করে দিয়েছেন।”

তুরস্কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় সব প্রার্থী এবার তরুণ ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করেছেন। এরদোগান জোর দিয়েছেন প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি খাতের অগ্রগতির ওপর। কিন্তু বিরোধী প্রার্থী কুলুচদারুলু আরও বেশি স্বাধীনতা ও উন্নত কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

কিন্তু ২০ বছর বয়সী গিজেম মনে করেন প্রেসিডেন্ট এরদোগানই তুরস্কে সবার স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বিবিসি’কে বলেন, “আজকের তুরস্কে যে যা করতে পছন্দ করে সেটাই সে করতে পারে। কয়েক দশক আগে তার বিরোধীরাই লোকজনের স্বাধীনতা খর্ব করেছে। আমার মতো যেসব নারী হিজাব পরতো তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ ছিলো না।”

ধারণা করা হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে নারী ভোটাররা কাকে ভোট দেবেন সেটাও জয় পরাজয় নির্ধারণে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। কেননা তুরস্কে মোট ভোটারের ৫০.৬% নারী।

তুরস্কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো প্রার্থী ভোটারদের ৫০ ভাগের বেশি ভোট না পেলে দুই সপ্তাহ পর দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর রোববারের (১৪ মে) নির্বাচনে কেউ যদি অর্ধেকের বেশি ভোট পান তাহলে তিনিই সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।

সারাদিন/১৩ মে/এমবি