বগির নিচে ছিন্নভিন্ন হাত, দলা পাকিয়ে গেছে দেহ!

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ২:০২ অপরাহ্ণ, জুন ৩, ২০২৩

ভারতের ওড়িশার বালেশ্বরে তিন ট্রেনের সংঘর্ষে নিহত ও আহতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। শনিবার (০৩ জুন) সকাল ১১ টায় ভারতীয় রেলের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, শনিবার সকাল পর্যন্ত এই দুর্ঘটনায় ২৬১ জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ৬৫০ জন।

রেলের তরফে প্রথম বিবৃতিতে জানানো হয়েছিল মৃতের সংখ্যা ৩০ জন। পরে শনিবার (০৩ জুন) ভোর ৫টায় জানানো হয় মৃতের সংখ্যা ৩৮। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃতের সংখ্যা ঘোষণা করা হলো ২৩৮ জন। অন্যদিকে, ওড়িশা সরকারকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছিল, শনিবার ভোর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩৩ জন। আহত ৯০০ জনেরও বেশি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘আনন্দবাজার’ জানিয়েছে, ওড়িশা রাজ্যের বালেশ্বরে রেললাইন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে যাত্রীবাহী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১৫টি কামরা। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, শনিবার (০৩ জুন) ভোর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩৩, আহত ৯০০ জনের বেশি।

দুর্ঘটনাস্থল থেকে যেসব ছবি প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে শুধু ভয়াবহতা আর হাহাকার। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে লাশ। কেউ স্বজন হারিয়ে কাঁদছেন, কারও চোখেমুখে মৃত্যুকে কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করার আতঙ্ক।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বালেশ্বরের বাহানগা বাজারের কাছে চেন্নাইগামী ২৩ কামরার ‘করমণ্ডল এক্সপ্রেস’ লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনটি সামনে থাকা একটি মালগাড়িকেও ধাক্কা মারে। দুর্ঘটনার প্রতিঘাতে মালগাড়ির উপরে উঠে যায় করমণ্ডলের বগি।

করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ছিন্নভিন্ন বগিগুলো ছিটকে পড়ে পাশের ডাউন লাইনে ও নয়ানজুলিতে। সেই লাইন দিয়ে তখন আসছিল ডাউন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। সেই ট্রেনও বেলাইন কামরাগুলোর উপর এসে পড়ে।

Nagad

ঘটনাস্থলের ছবিতে দেখা গেছে, ট্রেনের কামরা কাত হয়ে পড়ে আছে রেললাইনের ধারে। তার সামনেই দুমড়ে-মুচড়ে দলা পাকিয়ে গেছে দেহ। পাশে ছড়িয়ে আছে জামাকাপড়, ব্যাগপত্র।

মালগাড়ি এবং ট্রেনের কামরাগুলো পরস্পরের সাথে ধাক্কায় এমন ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছে যে, সেগুলোকে আর চেনার উপায় নেই। ট্রেনের ভিতর থেকে বেরিয়ে এসেছে যন্ত্রপাতির টুকরো।

তুবড়ে যাওয়া লোহার কামরার ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আছে মানুষের দেহ। দেহের অধিকাংশই ট্রেনের নীচে চাপা পড়ে রয়েছে।

ট্রেনের নীচ থেকে উদ্ধার করা মৃতদেহগুলি সাদা কাপড়ে মুড়ে রেললাইনের উপরেই রাখা হয়েছে। দেহ শনাক্ত করা যায়নি এখনও। ট্রেনের পাশাপাশি রেললাইনেরও করুণ দশা। মাঝখান থেকে দু’ভাগে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে লাইন। কোথাও সেই ভাঙা লাইনেই লেগে আছে চাপ চাপ রক্তের দাগ।

সন্ধ্যা থেকে একটানা উদ্ধারকাজে নেমে ক্লান্ত উদ্ধারকারীরাও। রেললাইনের উপরেই বসে কিছু ক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিচ্ছেন তারা। কারও মাথায় হাত, কেউ হতাশ চোখে চেয়ে আছেন দুমড়ে যাওয়া করমণ্ডলের দিকে।

উদ্ধারকারীদের সাথে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন পুলিশকর্মীরাও। ট্রেনের বগির নীচে ঝুঁকে পড়ে তারা আটকে পড়া যাত্রীদের খোঁজ করছেন।

করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনাস্থলে থিকথিকে ভিড়। দিনের আলো ফুটতেই বহু মানুষ শুধু উদ্ধারকাজ দেখতে জড়ো হয়েছেন।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (০২ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। হাওড়ার অদূরে শালিমার স্টেশন থেকে চেন্নাইয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল ‘করমণ্ডল এক্সপ্রেস’। যাত্রা শুরুর ৪ ঘণ্টা পরে এই দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনাস্থল পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে আর ওডিশার ভুবনেশ্বর থেকে ১৭০ কিলোমিটার উত্তরে।

সারাদিন/০৩ জুন/এমবি