‘আটকে পড়াদের উদ্ধারে অলৌকিক ঘটনা প্রয়োজন’
এখনও হদিস মেলেনি আটলান্টিক মহাসাগরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে নিখোঁজ পর্যটকবাহী সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজের। ধারণা করা হচ্ছে, ডুবোজাহাজটিতে আর মাত্র ১০ ঘণ্টার মতো অক্সিজেন মজুদ আছে। এই অবস্থায় সাবমেরিনটিকে শনাক্ত করতে চলমান তল্লাশি অভিযানের আওতা আরও বাড়িয়েছে মার্কিন কোস্ট গার্ড।
‘টাইটানে’ আটকে পড়াদের উদ্ধার করতে একটি অলৌকিক ঘটনা প্রয়োজন বলে দাবি করেন গভীর-সমুদ্রের অভিযাত্রী ড. ডেভিড গ্যালো। তবে তিনি এ ব্যাপারে আশাবাদী। এছাড়া তিনি বিশ্বাস করেন টাইটানকে পাওয়া গেলে তা উদ্ধারে সময় লাগবে মাত্র কয়েক ঘণ্টা।


লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ‘রয়টার্স’ ও ‘বিবিসি’র প্রতিবেদনে এই খবর জানানো হয়েছে।
গভীর-সমুদ্রের অভিযাত্রী ড. ডেভিড আইটিভি’কে বলেন, পানির নিচ থেকে যে আওয়াজগুলো আসছে তা ‘বিশ্বাসযোগ্য এবং পুনরাবৃত্তিযোগ্য’। এর মানে হচ্ছে উদ্ধারকারীদের অনুমান করতে হবে যে এই শব্দগুলো ডুবোজাহাজ থেকে আসছে। এই কারণে ওই সাবমেরিনটিকে শনাক্ত করতে দ্রুত এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, “এই মুহুর্তে আমাদের ধরে নিতে হবে যে ওই শব্দের উৎসটিই টাইটান সাবমেরিন। এই কারণে দ্রুত সেখানে যেতে হবে। ওই শব্দের উৎসকে শনাক্ত করতে হবে। সাবমেরিনটি কোথায় রয়েছে তা যাচাই করার জন্য সেখানে রোবট নামতে হবে।”
ড. ডেভিড গ্যালো বলেন, উদ্ধারকারীদের সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত হতে হবে। কারণ ওই ডুবোজাহাজটিকে শনাক্ত করতে এবং উঠিয়ে নিয়ে আসতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে। অর্থাৎ সাবমেরিন টাইটানকে পাওয়া গেলে তা উদ্ধারে সময় লাগবে মাত্র কয়েক ঘণ্টা।
এর আগে আটলান্টিক মহাসাগরের পানির নিচে কিছুতে আঘাতের মতো ‘টুং টাং’ শব্দ শনাক্ত করেছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। মঙ্গলবার (২০ জুন) কানাডিয়ান পি-৩ বিমান এই শব্দ শনাক্ত করে।
এদিকে, পূর্বের অনুমান অনুযায়ী, নিখোঁজ এই সাবমেরিনে আর ১০ ঘণ্টার কম অক্সিজেন অবশিষ্ট আছে। মার্কিন কোস্ট গার্ড-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তল্লাশির সময় আরও শব্দ শোনা গেছে, কিন্তু আসলে সেসব শব্দ কী তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।
ক্যাপ্টেন জেমি ফ্রেডরিক উদ্ধার ও তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা এখনও আশাবাদী।”
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, হারিয়ে যাওয়া এলাকা থেকে শব্দতরঙ্গের মাধ্যমে আবারও আওয়াজ শোনার কথা জানিয়েছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। তারা জানায়, তল্লাশি অভিযানের আওতা আরও বাড়ানো হচ্ছে। একটি এইচসি-১৩০ হারকিউলিস ফ্লাইট ৮৭৯ মাইল (১৪শ’ কিলোমিটার) এলাকা জুড়ে তল্লাশি চালাচ্ছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, নিখোঁজ ‘টাইটান সাবমার্সিবল’ নামক সাবমেরিনটিতে পাঁচজন পর্যটক ছিলেন। নিখোঁজ ওই সাবমেরিনে থাকা যাত্রীদের মধ্যে রয়েছেন ৫৮ বছর বয়সী ব্রিটিশ ধনকুবের ব্যবসায়ী এবং অভিযাত্রী হ্যামিশ হার্ডিং, পাকিস্তানি ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ (৪৮) এবং তার ছেলে সুলেমান (১৯)। এছাড়া ফরাসি অভিযাত্রী পল-হেনরি নার্গেওলে (৭৭) এবং ওশেনগেটের প্রধান নির্বাহী স্টকটন রাশ(৬১) ও ডুবোযানটিতে ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে।
চলতি সপ্তাহেই সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া একটি পোস্টে মি. হার্ডিং জানান, অবশেষে তিনি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাচ্ছেন। সেই সাথে তিনি এও জানান, গত ৪০ বছরের মধ্যে নিউফাউন্ডল্যান্ডে চরম শীতের কারণে হয়তো টাইটানিকের ভগ্নাবশেষের কাছে এটাই এই বছরের প্রথম এবং একমাত্র মনুষ্যবাহী অভিযান হতে যাচ্ছে।
আরেকটি পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, “চরম আবহাওয়ার মাঝখানে একটা সুযোগ পাওয়া গেছে এবং আমরা আগামীকাল সাগরে ডুব দিতে পারি।”
যেসব সরকারি সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠান এই উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করছে, তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছে ওশেনগেট। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এই বছরে একটি অভিযান চলছে আর সামনের বছর আরও দুটি অভিযান হওয়ার কথা রয়েছে।
সারাদিন/২২ জুন/এমবি