‘বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানের দিনগুলোতে ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছিলেন দৃঢ় ও অবিচল’
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, দেশ ও জাতির জন্য অপরিসীম ত্যাগ, সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও বিচক্ষণতাই বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে বঙ্গমাতায় অভিষিক্ত করেছে। তিনি ছিলেন একজন আদর্শ নারী, আদর্শ স্ত্রী ও আদর্শ মা।
মো. সাহাবুদ্দিন মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন। এ উপলক্ষ্যে তিনি এই মহীয়সী নারীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তি সংগ্রামের নেপথ্যের কারিগর হিসেবে প্রতিটি পদক্ষেপে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব বঙ্গবন্ধুকে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন। দেশের স্বার্থে বঙ্গবন্ধুকে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সেই কঠিন দিনগুলোতে তিনি ছিলেন দৃঢ় ও অবিচল। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের নেপথ্যেও ছিলেন তিনি। তারই পরামর্শে বঙ্গবন্ধু হৃদয় থেকে উৎসারিত অলিখিত এ ভাষণ প্রদান করেন।
এছাড়াও বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক ২০২৩ প্রাপ্তদের তিনি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, অনুষ্ঠানের এবারের প্রতিপাদ্য ‘সংগ্রাম-স্বাধীনতা, প্রেরণায় বঙ্গমাতা’ যথার্থ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত নম্র, শান্ত ও ধৈর্যের প্রতিমূর্তি। বুদ্ধিমত্তা, ধৈর্য ও অসীম সাহস নিয়ে আমৃত্যু স্বামীর পাশে থেকে একজন যোগ্য ও বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে তিনি দেশ ও জাতি গঠনে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে হানাদার বাহিনীর হাতে গৃহবন্দি অবস্থায় পাকিস্তানে কারাবন্দি স্বামীর জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও তিনি সীমাহীন ধৈর্য, সাহস ও বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। দেশ ও জাতির জন্য অপরিসীম ত্যাগ, সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও বিচক্ষণতাই তাকে বঙ্গমাতায় অভিষিক্ত করেছে। তিনি ছিলেন একজন আদর্শ নারী, আদর্শ স্ত্রী ও আদর্শ মা।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সহধর্মিণী হয়েও বঙ্গমাতা সবসময় সাদামাটা জীবনযাপন করতেন উল্লেখ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, নির্লোভ, পরোপকারী ও নিরহংকার মুজিবপত্নীর মাঝে বাঙালি মায়ের চিরন্তন প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। পার্থিব বিত্ত-বৈভব বা ক্ষমতার জৌলুস কখনো তাকে প্রভাবিত করেনি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে নিজ জীবনে লালন ও ধারণ করে সন্তানদেরও তিনি একই আদর্শে গড়ে তোলেন। তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই শিক্ষা, আদর্শ ও চেতনাকে অবলম্বন করে বাংলাদেশকে আজ সুখী-সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে স্বামী-পুত্র-পুত্রবধূসহ নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে তিনি ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন। জাতির ইতিহাসে যা এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। বঙ্গমাতা আমাদের মাঝে না থাকলেও তার রেখে যাওয়া নীতি ও আদর্শ আমাদেরকে ভবিষ্যৎ চলার পথে শক্তি ও সাহস জোগাবে। তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে নারী সমাজ তার দেখানো পথ বেয়ে এগিয়ে যাবে উন্নতি ও অগ্রগতির পথে– এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকীতে তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।