স্মার্ট রাজশাহী সিটি বাস্তবায়নে একসাথে কাজ করবে রাসিক এবং এটুআই
সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নে উত্তরবঙ্গের শিক্ষা নগরী রাজশাহীকে স্মার্ট সিটি বিনির্মাণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ-এর এটুআই এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এক সাথে কাজ করবে। এ লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন-এর মাননীয় মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ-এর মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, এমপি-এর উপস্থিতিতে এক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এ.বি.এম. শরীফ উদ্দিন এবং এটুআই-এর যুগ্ম-প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) মোঃ ছাইফুল ইসলাম নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে রাজশাহী সিটির স্মার্ট রূপান্তর নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এটুআই এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এর যৌথ উদ্যোগে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নিহত সদস্যদের স্মরণ করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এসময় ‘অটোমেশন অন সিটিজেন সার্ভিস’ বিষয়ে উপস্থাপনা প্রদান করেন এমসিসি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সানি মো. আশরাফ খান, ‘স্মার্ট কর্মসংস্থান’ বিষয়ক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন এটুআই এর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড ইনোভেশন স্পেশালিস্ট এইচ.এম. আসাদ-উজ-জামান এবং স্মার্ট রাজশাহী সিটি বিনির্মাণে ‘স্মার্ট প্ল্যানিং’ বিষয়ে উপস্থাপনা প্রদান করেন এটুআই-এর চিফ ই-গভর্ন্যান্স স্পেশালিষ্ট জনাব ফরহাদ জাহিদ শেখ।
অনুষ্ঠানে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন-এর মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বঙ্গবন্ধুকে কেড়ে নেয়ার পর বাংলাদেশ উন্নয়নের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে পড়েছিল, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে যে আমরা এখন উন্নয়নের মাইলফলক রচনা করে চলেছি তা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে পিছিয়ে পড়া রাজশাহীতেও আমুল পরিবর্তন হয়েছে। জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন হয়েছে। আইসিটি বিভাগ রাজশাহীতে অনেক কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। আমাদের এই লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে যে- ‘আমি চাকরি চাই চাকরি চাই না বলে আমি চাকরি দেবো’ এই জায়গায় যেতে চাই। একজনই হাজার হাজার তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবে। এমন পরিস্থিতি ও সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে আমাদের। এখন রাজশাহীতে মানুষদের সরাসরি অফিসে এসে নাগরিক সুবিধা নিতে হয় না, তারা বাড়িতে বসে অনলাইনে সুবিধাগুলো নিতে পারছেন। এতে সময়, ব্যয় ও যাতায়াত সবই সাশ্রয় হচ্ছে। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষেত্রে আমরা পরপর তিনবার চ্যাম্পিয়ন হই। ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রামে আমরা ১১ বার দেশসেরা হয়ে আছি। আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই। এখন আমরা স্মার্ট সিটি বিনির্মাণে কাজ শুরু করেছি। এটুআই এবং আইসিটি বিভাগের সহযোগিতায় সেই স্বপ্ন পূরণ করে স্মার্ট বাংলাদেশের যে ভিশন আছে তা পূরণ করতে চাই।
সভাপতির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, রূপকল্প-২০৪১ স্মার্ট বাংলাদেশের একটি লক্ষ্য বিভাগীয় শহরগুলোতে আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য একটি করে হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা। রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং সেন্টার, জয় স্যালিকন টাওয়ার নির্মাণ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের জায়গা হয়েছে। এই উদ্যোগটি নেয়ার ফলে সারা বাংলাদেশে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা গ্রামের তরুণ-তরুণীদের জন্য আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারছি। রাজশাহীকে আমরা একটা ‘গ্রীন-ক্লিন অ্যান্ড সেফ’ সিটি হিসেবে রূপান্তর করতে পেরেছি, যত বাধা বা সম্পদের সীমাবদ্ধতাই থাকুক না কেন যদি আন্তরিকতা বা সঠিক নেতৃত্ব থাকলে যে একটি শহরকে তীলোত্তমা নগরীতে রূপান্তর করা সম্ভব এটা রাজশাহীতে না গেলে বোঝা সম্ভব নয়।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা দুটি নগরীকে প্রথম পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে স্মার্ট নগরী হিসেবে বাস্তবায়ন করতে চাই। প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে রাজশাহী সিটিকে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তর করে অন্যান্য শহরের সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। দ্বিতীয় শহর হিসেবে আমরা কক্সবাজারকে স্মার্ট নগর বা স্মার্ট সিটি হিসেবে বাস্তবায়ন করতে চাই। এর সাথে সাথে আমরা গ্রামকেও স্মার্ট ভিলেজে রূপান্তর করতে চাই। এটুআই, আইসিটি ডিভিশন এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে আমরা আজকে যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করলাম এর আওতায় ১১টি এরিয়া অফ ওয়ার্ক আছে। স্মার্ট সিটি গড়ার লক্ষ্যে যেখানে যেভাবে দরকার সেভাবে সহযোগিতা করবার লক্ষ্যে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। স্মার্ট সিটির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখাতে আমরা স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও চূড়ান্তলক্ষ্য অনুযায়ী ২০২৪, ২০২৫ ও ২০২৮ সাল পর্যন্ত লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। এই সময়ের মধ্যে আমরা রাজশাহীকে স্মার্ট সিটি রূপান্তর করে দেশ ও সারাবিশ্বের সামনে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। একই সাথে আগামী আগস্টের মধ্যে একটা স্মার্ট বাংলাদেশ ডিজাইন ল্যাব করতে চাই। সকল ধরনের নাগরিক সেবাকে ডিজিটাইজেশনের ক্ষেত্রে এই ল্যাব কাজ করবে।’
এটুআই এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনীর চৌধুরী বলেন, ২০ লক্ষ মানুষ আছে রাজশাহীতে। তাদের দোরগোড়ায় স্মার্ট নাগরিক সেবা পৌঁছে দেয়া আমাদের লক্ষ্য। রাজশাহীকে স্মার্ট শহরে রূপান্তর করার ব্যাপারে আমরা আগ্রহী। স্মার্ট শহর বিনির্মাণে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ডিজাইন ল্যাব’ এবং ‘ইনোভেশন ল্যাব’ একসাথে কাজ করবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঙ্গে নিয়ে আমরা রাজশাহীকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতামূলক স্মার্ট সিটি রূপান্তরের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ-এর সচিব মো. সামসুল আরেফিন, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ, এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ও এটুআই এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।