ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জিয়াউর রহমান ওতপ্রোতভাবে জড়িত: প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতাকে হত্যা করে সংবিধান না মেনে খুনি মোস্তাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে। রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেই জিয়াউর রহমানকে বানালো সেনাপ্রধান। ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জিয়াউর রহমান ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
তিনি বলেন, যারা আমাদের বাড়িতে সব সময় ওঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া করেছে, তারা বেইমানি করেছে। তারাই বেইমানি করেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
আজ বুধবার (১৬ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমানই প্রথম মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেন। বিচার চাওয়ার অধিকারও কারও ছিল না। আজকে যখন আমার কাছে কেউ কারও হত্যার বিচার চায়, তখন আমি ভাবি- আমার তো একুশ বছর বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যারা আমার পিতা ও পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে, তারা নিয়মিত আমাদের বাসায় যাতায়াত করতো। মীরজাফরের যে পরিণতি হয়েছিল, খন্দকার মোশতাকেরও একই পরিণতি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ। তিনি (শাহাবুদ্দিন) আমাকে তখন জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন। আমাকে তিনি এটাও বললেন যে, আপনাকে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টি সমর্থন দেবে। আপনিই হবেন দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। আমি ওনাকে বিনয়ের সঙ্গে বলেছি, আমি এভাবে সরকার গঠন করতে চাই না।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্ট বাঙালির জাতীয় জীবনে সবচেয়ে একটি কলঙ্কময় অধ্যায়। বাংলাদেশের ইতিহাস সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছিল এই ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। একই সঙ্গে আমার মা, আমার তিন ভাই, কামাল-জামালের বউদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
তিনি আরও বলেন, ইতিহাসের এ জঘন্য ঘটনা বাংলার মাটিতে ঘটে যায়। সেই কারবালার ঘটনাকেও যেন হার মানায়। কারবালার ঘটনা শিশু-নারীদের হত্যা করা হয়নি, কিন্তু ১৫ আগস্ট শিশু-নারীদেরও তারা ছাড়েনি।
‘আমি আর আমার ছোট বোন রেহানা মাত্র ১৫ দিন আগে ৩০ জুলাই জার্মানির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে ৩১ জুলাই আমরা সেখানে পৌঁছাই। আমরা ভাবতেও পারিনি আমাদের জীবনে এমন একটা আঘাত অপেক্ষা করছে। ১৩ তারিখে আব্বার সঙ্গে, মায়ের সঙ্গে, সবার সঙ্গে কথা হয়। ১৫ তারিখে এ ঘটনা ঘটার পর যখন আমরা জানতে পারি, তখন সব তথ্য আমরা জানতে পারিনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমার আপনজন হারিয়েছি, স্বজন হারিয়েছি, বিদেশে রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছে। আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি, আমারও তো হারিয়েছি, সবচেয়ে বড় প্রশ্ন বাংলাদেশে কী হারিয়েছিল? বাংলাদেশের মানুষ কী হারিয়েছিল?
‘আমার বাবা সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন এদেশে মানুষের জন্য। মানুষের কথাই বেশি ভাবতেন। তিনিতো ভালোবেসেছিলেন মানুষকে। এদেশে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করবেন। তাদের সুখী জীবন দেবেন। অন্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে তাদের উন্নত জীবন দেবে। সেটাইতো তার জীবনের একমাত্র সাধন, সংগ্রাম। কাজে তিনি নিজের জীবনকে সেভাবে উৎসর্গ করে গেছেন। বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলেছেন।’
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এছাড়াও আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।