হু হু করে বাড়ছে নিত্যপণ্য দাম, ক্রেতাদের চাপা কান্না

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩:০২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১, ২০২৩

ছবি- সংগৃহীত

এক সময়ে করোনা প্রভাবে লকডাউনে এই দেশের মানুষ কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। দুঃসহ সেই ভোগান্তি শেষ করে যখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরলো; এরপর আবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সব মিলিয়ে এখন গভীর সঙ্কটে পড়েছেন দেশের সাধারণ জনগণ। এমন যখন পরিস্থিতি-তখন মুনাফাখোর কিছু ব্যবসায়ীদের কারণে চরম বিপাকে; দেশে মধ্যবিত্তসহ মুচি থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষগুলো। এখনতো নিম্ন আয়ের মানুষ তিনবেলা দু-মুঠো ভাত যোগাতেও হিমশিম খাচ্ছেন।

লাগামছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে দাম। চড়া মূল্যের এ বাজারে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছে ক্রেতারা। চলতি সপ্তাহে বেড়েছে সবজির দাম। সবচেয়ে কম দামে যে সবজি বিক্রি হচ্ছে সেটিও ৪০ টাকায়। সংসার কীভাবে চলবে, সে ভাবনাও ভাবতে হচ্ছে তাদের। দু:খ জনক বিষয় হলে; গরীবের , ব্যচেলরদের জনপ্রিয় খাবার ডিমের দামও লাগামছাড়া।

এদিকে মোটা চাল, ডাল, আলু কিনতে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে নগরবাসীকে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চাল ২ থেকে ৩ টাকা, মসুর ডাল কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা এবং আলু প্রতি কেজি ৫ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

নিম্নআয়ের মানুষ যখন মাছ, মাংস ও ডিম কিনতে হাঁসফাঁস করছেন, তখন দরিদ্র মানুষের ভরসার এ খাবারগুলোর দাম বাড়ায় কষ্টে পড়েছেন তারা। এই বাড়তি দাম তাদের সংসার খরচ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের বর্তমান বাজারদর সম্পর্কে এসব তথ্য জানা গেছে। কথা হয়েছে বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গুটি স্বর্ণা জাতের মোটা চাল বেশির ভাগ দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না। পাইজাম ও বিআর-২৮ চাল এখন মানভেদে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ৫২ থেকে ৫৮ টাকার মধ্যে ছিল।

Nagad

অন্যদিকে, চলতি সপ্তাহে খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের মসুর ডালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহেও প্রতি কেজি মোটা মসুর ডাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সেই ডালের কেজি এখন ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা। মাঝারি দানার মসুর ডালের কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় উঠেছে। আর ভালো মানের, অর্থাৎ সরু দানার মসুর ডালের কেজি পড়ছে এখন ১৩৫ থেকে ১৪৫ টাকা। গত সপ্তাহে এই ডালের খুচরা দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি।

মাছের বাজারে দেখা যায়, গরিবের মাছ পাঙাশ (বড় সাইজের) বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়। ছোট আকারের পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। এ ছাড়া ইলিশ মাছ কেজিপ্রতি ১০০০ টাকা, রুই মাছ ৪০০ টাকা, কই মাছ ২৫০ টাকা, ট্যাংরা মাছ ৭০০ টাকা, শিং মাছ ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৪০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে আগের মতোই আছে মাংসের দাম। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮০ টাকায়, লেয়ার মুরগি ৩৮০ টাকায়, সোনালি মুরগি ৩৫০ টাকা আর দেশি মুরগি প্রতি কেজি ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় আর খাসির মাংস প্রতি কেজি ৯৮০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দাম বেড়েছে সবজির। এসব বাজারে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার ওপরে। লম্বা বেগুন ১১০, গোল বেগুন ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া করল্লা ১০০, গাজর ১৫০-১৮০, টমেটো ১২০, বরবটি ১০০, কচুরমুখি ১০০, কাঁচা মরিচ ২০০, ধনেপাতা ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

কেজি প্রতি ৬০ টাকার ওপরে বিক্রি হওয়া সবজিগুলোর মধ্যে রয়েছে শসা ৬০-৭০, পটল ৬০-৮০, কাঁকরোল ৮০, মূলা ৬০, ধুন্দল ৮০, ঢেঁড়স ৮০, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা। লাউ ৮০, চাল কুমড়া ৭০-৮০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে।

সবচেয়ে কম দামে যে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে সেটি পেঁপে-৪০ টাকা। মিষ্টি কুমড়াও বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত কয়েক মাস ধরে সবজির দাম বাড়ছে। উৎপাদন কমে যাওয়া, পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি সবজির দাম বাড়ার কারণ।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়াও দেশে আমদানি নির্ভরতার কারণেও সবজির দাম বাড়ছে।