ইউক্রেন যুদ্ধে সমর্থন ও ‘অস্ত্র সরবরাহে’ রাশিয়ায় যাচ্ছেন কিম

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১:২৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৩

ছবি- সংগৃহীত

চলতি মাসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে দেখা করতে মস্কো যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং আন। আমেরিকান টেলিভিশন সিবিএস’কে এই তথ্য জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা।

ইউক্রেন যুদ্ধের সমর্থনে মস্কোকে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র সরবরাহের সম্ভাবনা নিয়ে দুই নেতা আলোচনা করবেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এই বৈঠকটি কোথায় হবে সেটা নিয়ে নিশ্চিত কোন তথ্য জানা যায়নি।

এই খবরটি অন্যান্য মার্কিন গণমাধ্যম ফলাও করে প্রচার করলেও কোন প্রতিবেদনে তাৎক্ষণিকভাবে উত্তর কোরিয়া বা রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এক সূত্রের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, কিম সম্ভবত সাঁজোয়া ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারেন। হোয়াইট হাউসের তরফ থেকে বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে অস্ত্র সমঝোতা ‘অগ্রসর’ হওয়ার বিষয়ে তারা তথ্য পেয়েছেন।

এর পরই রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সম্ভাব্য বৈঠকের বিষয়টি সামনে আসে।

ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া সফরের সময় “পিয়ংইয়ংকে রাশিয়ার কাছে গোলাবারুদ বিক্রি করার বিষয়ে সম্মত করার” চেষ্টা করেছিলেন।

Nagad

সভায় প্রদর্শন করা অস্ত্রের মধ্যে ‘হাসং’ নামের আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) অন্তর্ভুক্ত ছিল। কোভিড মহামারির পর ওই প্রথম মি. কিম বিদেশি অতিথিদের জন্য তার দেশের দরজা খুলে দিয়েছিলেন।

পুতিন এবং কিম তখন থেকে “তাদের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে চিঠিপত্র আদান-প্রদান করছেন”, বলেন কিরবি।

“আমরা উত্তর কোরিয়াকে রাশিয়ার সাথে তার অস্ত্র আলোচনা বন্ধ করতে আহবান জানিয়েছি এবং পিয়ংইয়ং রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ বা বিক্রি না করার ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা মেনে চলার আহবান জানাই,” বলেন কিরবি।

তিনি তার বিবৃতিতে উত্তর কোরিয়াকে ডিপিআরকে হিসেবে উল্লেখ করেন। যার পূর্ণাঙ্গ রূপ হল ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়া অর্থাৎ গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া।

উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করলে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।

নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, কিম এবং পুতিনের মধ্যে বৈঠকটি রাশিয়ার পূর্ব উপকূলে ভ্লাদিভোস্টক শহরে হতে পারে।

নিউইয়র্ক টাইমসের কূটনৈতিক সংবাদদাতা এডওয়ার্ড ওং বিবিসি নিউজ চ্যানেলকে জানিয়েছেন যে, উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল গত মাসের শেষের দিকে ভ্লাদিভোস্টক এবং মস্কো ভ্রমণ করেছে।

“ওই প্রতিনিধি দলের মধ্যে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ছিলেন যারা উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতার ভ্রমণ ও অন্যান্য প্রটোকলের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে। এই বিষয়টি কিম জং আনের ভ্লাদিভোস্টক শহরে সফরের বিষয়ে শক্তিশালী ইঙ্গিত দেয়।” ওং বলেছেন।

তিনি আরও বলেন, উত্তর কোরিয়া তাদের কৃত্রিম উপগ্রহ এবং পারমাণবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন কর্মসূচির জন্য মস্কোর কাছ থেকে উন্নত প্রযুক্তির সহায়তা চাইছে।

“এছাড়াও উত্তর কোরিয়া বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে একটি। দেশটি প্রায়শই ব্যাপক খাদ্যাভাবের মধ্য দিয়ে যায় এবং তারা রাশিয়ার কাছ থেকে খাদ্য সহায়তাও চাইছে,” নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক এ কথা বলেছেন।

উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে এর আগেও রাশিয়াকে ইউক্রেনের যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য অস্ত্র সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছিল। তবে সেটি অস্বীকার করেছে পিয়ংইয়ং এবং মস্কো।

জন এভারার্ড, যিনি ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে উত্তর কোরিয়ায় যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি বিবিসিকে বলেছেন, “সম্ভাব্য সফরের বিষয়ে এতো প্রচার প্রচারণা হওয়া একটি বিষয় ইঙ্গিত করে যে এখন এই সফর হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই”।

তিনি বলেন, “কিম জং আন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়ে অতি উদ্বিগ্ন। তিনি তার গতিবিধি গোপন রাখতে অনেক চেষ্টা করেন এবং যদি এটি জানাজানি হয়ে যায় যে, তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে দেখা করতে ভ্লাদিভোস্টকে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাহলে তিনি সম্ভবত পুরো পরিকল্পনাই বাতিল করে দেবেন।”

পিয়ংইয়ং জানে যে মস্কো যুদ্ধাস্ত্রের জন্য ‘মরিয়া’ হয়ে উঠেছে। অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার কাছে যে দাম চাইবে তা পাবে। এই দাম চোখে ধাঁ ধাঁ লাগিয়ে দিতে পারে। উত্তর কোরিয়ার কাছে অস্ত্রের মজুদ থাকলেও “তারা খুবই দারিদ্র্যপীড়িত অবস্থায় আছে”, তিনি যোগ করেন।

২০১৯ সালে দুই নেতার শেষবার বৈঠক হয়েছিল, যখন কিম ট্রেনে করে ভ্লাদিভোস্টকে এসেছিলেন। কর্মকর্তারা তাকে তাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী রুটি ও লবণ দিয়ে স্বাগত জানিয়েছিল।

বৈঠকের পর পুতিন বলেন, কিম তার পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসতে চাইলে তাকে ‘নিরাপত্তার নিশ্চয়তা’ দিতে হবে।

এই বৈঠকের অন্তত কয়েক মাস আগে ভিয়েতনামে কিম এবং তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে কোরীয় উপদ্বীপে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে একটি শীর্ষ বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু সে বৈঠকে তখন কোন অগ্রগতি হয়নি। তথ্যসূত্র-বিবিসি

সারাদিন/০৫ সেপ্টেম্বর/এমবি