খুললো দক্ষিণবঙ্গে রেল যোগাযোগের দ্বার, ২ ঘণ্ট ১০ মিনিটে ভাঙ্গা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ১:৪৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৩

সংগৃহীত ছবি

প্রথমবারের মতো আজ বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণবঙ্গে চলাচল করছে পরীক্ষামূলক ট্রেন। এটি ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে যায় প্রথম ট্রেন। ৮২ কিলোমিটারের এ দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে ট্রেনটির সময় লাগে মাত্র ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট।

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৭ মিনিটে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনটি যাত্রা করে। আর দুপুর ১২টা ১৭ মিনিটে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছায়।

এদিকে, সড়ক পথের পর রেলপথেও যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় উচ্ছ্বসিত পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা। সকালে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া স্টেশনে কথা হয় স্থানীয়দের সঙ্গে। তারা জানান, রেল চলাচলের মাধ্যমে এ পথে যাতায়াত আরও সহজ হতে চলেছে।

ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছালে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জড়ো হওয়া মানুষ ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে স্বাগত জানান। এর মধ্যে দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকা যুক্ত হলো রেলপথে।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, রেলপথ সচিব ড. হুমায়ুন কবীর, বাংলাদেশ রেলওয়েল মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন, রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং রেলওয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমের কর্মীরা।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ৪ মে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। এছাড়া ৪৩ কিলোমিটার লুপ লাইন (স্টেশনের আগে-পরে বাড়তি লাইন) নির্মাণসহ নতুন ট্রেন চালুর জন্য ১০০টি আধুনিক যাত্রীবাহী বগি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৮২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।এই পথে ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচলের লক্ষ্যে কোনো রেলক্রসিং রাখা হয়নি। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত আগের ৬টিসহ ২০টি আধুনিক স্টেশন করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। পরে বেড়ে প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকায়।

Nagad

চীনের অর্থায়নে জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের) ভিত্তিতে প্রকল্পের কাজ করছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ (সিআরইসি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ২৬৬ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। বাকি অর্থ ব্যয় করছে বাংলাদেশ সরকার।

সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের জুন মাসে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ২০৩০ সাল নাগাদ রেলপথটির ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে প্রতিদিন ১৩ জোড়া, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে ৭ জোড়া ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে ৫ জোড়া ট্রেন চলবে। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে বছরে ৪০ লাখ, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে বছরে ১৭ লাখ ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব বলে ধরা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে যখন প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়, তখন এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ২২ মে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ২৬৬ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। বাকি অর্থ ব্যয় করছে বাংলাদেশ সরকার।