আদালতের সর্বত্র বাংলাভাষায় কার্যক্রম চালু করতে মন্ত্রীর আবেদন

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৫৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩

দেশে মামলার জট হওয়ার কারণ এবং সেখান থেকে জট দূর করা এবং আদালতের সর্বত্র বাংলাভাষার জন্য যা যা করণীয় সেটা নিয়ে বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন দেশের নতুন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল স্তম্ভ ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত, ন্যায়বিচার ও সামাজিক সমতার বাংলাদেশ। হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ থেকে শুরু করে পরবর্তী সব ধাপ এবং সর্বশেষ প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে সেই চেতনা রক্ষার প্রতিজ্ঞা করেছি। অতীতে নানা দায়িত্ব পালনকালে ন্যায়বিচার ও সমতা প্রতিষ্ঠায় এবং সংবিধান সমুন্নত রাখায় কাজ করেছি। প্রধান বিচারপতি হিসেবেও নিষ্ঠার সাথে সেই দায়িত্ পালন করে যাব।

তিনি বলেন, আইনের বই বাংলায় করার কথা, বাংলায় জাজমেন্ট দেওয়ার কথা, মামলার জট কমানোর কথা অনুষ্ঠানে বক্তাদের আলোচনায় উঠে এসেছে। এ ব্যাপারে তিনি তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং আদালতে বাংলা রায়ের বিষয়ে বাংলা ভাষার সফটওয়্যারসহ প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনে সহযোগিতা প্রদানে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বিশেষ ভূমিকা গ্রহণে এগিয়ে আসবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মিলনায়তনে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি, ঢাকা আয়োজিত প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে দেওয়া এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির সভাপতি সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি মোস্তাফা জব্বার, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, এমপি এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি, ঢাকার মহাসচিব ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা বিভাগ) ডিএমপি মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী উচ্চ আদালতের সর্বত্র বাংলাভাষায় কার্যক্রম চালু করতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এর ভূমিকা প্রত্যাশা করে বলেন, সতের কোটি মানুষের প্রাণের দাবি সর্বত্র বাংলাভাষার প্রবর্তন। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলাভাষার এই উদ্ভাবক বলেন, বাংলা পৃথিবীর প্রতিটি ডিজিটাল যন্ত্রে এখন লেখা যায়। পশ্চিম বঙ্গের সাহিত্যিকরাও বলছেন বাংলাভাষা বাংলাদেশেই টিকে থাকবে এবং ঢাকা হবে বাংলা ভাষার রাজধানী। ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের অগ্র্রদূত জনাব মোস্তাফা জব্বার, ডিজিটাল সংযুক্তির সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভার্চু্য়্যাল আদালত পরিচালনার চমৎকার সুযোগ রয়েছে।

Nagad

এ জন্য মামলার বাদী বিবাদীসহ আইনাঙ্গন সংশ্লিষ্টদের সামান্য জিজিটাল দক্ষতাই ডিজিটাল বিচার ব্যবস্থার জন্য যথেষ্ট উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, করোনাকালে জীবনধারা সচল রাখার পাশাপাশি ভার্চুয়্যাল আদালত পরিচালনার মাধ্যমে বিচারালয় সচল রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুরদৃস্টিসম্পন্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি পৃথিবীর অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত। আমরাই পৃথিবীতে প্রথম ডিজিটাল কর্মসূচি প্রণযন করেছিলাম। পরবর্তীতে ইংল্যান্ড ও ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশ এই কর্মসূচি গ্রহণ করে। ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের পর ডিজিটাল সংযুক্তির ভিত্তির উপর আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অভিযাত্রা শুরু করেছি। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট সরকার এই চারটি স্তম্বের উপর প্রতিষ্ঠিত হবে ২০৪১ সালে সোনার বাংলাদেশ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফা জব্বার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এর পিতা পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ডা. আখলাকুল হোসাইন আহমেদ এর পরিবারের সাথে তার পরিবারের গভীর সম্পর্কের প্রসংগ তুল ধরে বলেন, ডা. আখলাকুরের নেতৃত্বের অনুপ্রেরণায় আমরা হাওরকে মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তাঞ্চল রাখতে সক্ষম হয়েছি। এই পরিবারটি বৃহত্তর ময়মনসিংহবাসিকে গর্বিত করেছে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে যেন ময়মনসিংহ অঞ্চলের উন্নয়ন সমুন্নত রাখতে পারি সেই লক্ষ্য রাখতে হবে। বৃহত্তর ময়মনসিংহের মানুষ গুণীজনকে সম্মানিত করে৷ আমরা আশা করি ভবিষ্যতে আরও কীর্তিমান মানুষ বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে দেশের সেবায় এগিয়ে আসবেন।

সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফুল হাসান খসরু বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় যখন আসে তখন ওবায়দুল হাসান হাইকোর্টের আইনজীবী ছিলেন। সেই সরকারের নির্যাতন ও মামলার খড়গে যখন আমরা নিষ্পেষিত ছিলাম তখন তিনি বিনামূল্যে আওয়ামী লীগের নেতাদের মামলা লড়েছেন। প্রধান বিচারপতি হিসেবে তিনি বিচার বিভাগে নতুন যুগের সূচনা করবেন বলে আমার বিশ্বাস।

সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রধান বিচারপতি হিসেবে বৃহত্তর ময়মনসিংহের কৃতি সন্তান ওবায়দুল হাসানের নিয়োগ পাওয়া আমাদের জন্য গর্বের। তার জীবন অসংখ্য মহান কাজে পরিপূর্ণ। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে একাত্তরের দালালদের বিচারে কাজ করেছেন। তিনি ট্রাইবুনালে মোট ১১টি মামলার রায় দিয়েছেন।

বাংলাদেশ পুলিশের ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হারুন উর রশীদ তার বক্তব্যে প্রধান বিচারপতিকে অভিনন্দন জানান। ময়মনসিংহের ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সন্তান ওবায়দুল হাসানের বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পাওয়াকে পুরো এলাকাবাসীর গর্ব বলে উল্লেখ করেন।

পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

এর আগে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম, ঢাকাস্থ বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদ, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী কল্যাণ সমিতি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংবাদিক সমিতি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারি সমিতি, যুব সমিতি, ময়মনসিংহ জেলা সমিতি, টাঙ্গাইল জেলা সমিতি, কিশোরগঞ্জ সমিতি, জামালপুর, নেত্রকোণা ও শেরপুর জেলা সমিতি সংবর্ধিত অতিথি প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করে।