দেশে ই-বর্জ দিবস পালিত; এই বর্জের স্থান নির্ধারণের তাগিদ মন্ত্রীর

তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক:তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৭:২০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০২৩

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার-বলেছেন, প্লাস্টিক বা অন্যান্য বর্জের যেমন ঠিকানা তৈরি করতে পেরেছি; কিন্তু ই-বর্জের (ইলেকট্রিক বর্জ) জন্য আমরা এখনো কিন্তু ঠিকানা (স্থান) নির্ধারণ করতে পারিনি। আমি মনে করি এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

তিনি বলেন-আমরা যখন ঠিকানাটা তৈরি করে দিতে পারব; তখন ই-বর্জ সংগ্রহ করে এটা যাতে পুন:রায় কাজে লাগানো যায় সেটাও দেখা যাবে।

শনিবার (১৪ অক্টোবর) দেশে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ) এর উদ্যোগে বিশ্ব ই-বর্জ্য দিবস ২০২৩ উপলক্ষে কাওরান বাজারের ভিশন ২০৪১ টাওয়ারের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন ।

তিনি বলেন- প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্য সূচিতে ই-বর্জ্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি দক্ষ ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা অপরিহার্য। ই-বর্জ্যের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি এবং ই-বর্জ্য রিসাইক্লিং করে এটিকে সম্পদে পরিণত করতে সমন্বিত উদ্যোগে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ন্যায় ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, ই-বর্জ্যের কাঁচামাল কাজে লাগানোর বিষয় সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে। সিটি কর্পোরেশনসমূহকে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সম্পৃক্ত করতে হবে। ই-বর্জ্য পুনরায় কি কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে গবেষণা হওয়া দরকার।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যশনাল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার এন্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি বিভাগের ডীন এবং কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আখতার হোসেন।

Nagad

মুখ্য আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইটি), বিভাগের অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল হোসেন।

বিআইজেএফ সভাপতি নাজনীন নাহার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিসিআইয়ের ইনোভেশন এবং রির্সাচ সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, বাণিজ্যিক মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল ডিজিটাল কমার্স সেলের উপ পরিচালক মোহাম্মদ সাইদ আলী, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি সুব্রত সরকার এবং আইএসপিএবি ইমদাদুল হক।

সেমিনারে সন্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি শহীদ মুনীর ও বক্কোর সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহফুজা পারভীন, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের সহ-প্রধান অধ্যাপক শেখ রাশেদ হায়দার নূরি, মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ এবং জেআর রিসাইকেলিং সল্যুশনের জেনারেল ম্যানেজার মঞ্জুর আলম।

অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন বিআইজেএফ সাধারণ সম্পাদক সাব্বিন হাসান।

স্মার্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বোরোপ করে মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে ই-বর্জ্য কমানো ও ব্যবস্থাপনায় জরুরী ভিত্তিতে কাজ করা দরকার। কেবল যদি ইন্টারনেট ক্যাবল শেয়ারিং চালু করা যায় তবে এই তারের ব্যবহার ১০০ ভাগের এক ভাগে নেমে যাবে। এতে করে বর্জ্যও কম হবে। তবে সামনের দিনে ব্যাটারি সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে। সেজন্য মেয়াদ উত্তীর্ণ ব্যাটারি কিংবা ল্যাপটপ, পিসি, রাউটার যত ইলেকট্রনিক্স পণ্য আছে তা কীভাবে পুণঃব্যবহার করা যায় সে দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

এর আগে সকালে ‘এনিথিং উইথ এ প্লাগ, ব্যাটারি এন্ড ক্যাবল প্রতিবাদ্যকে ধারণ করে বিভিন্নভাবে পুন:ব্যবহার যোগ্য ই-বর্জ্য কে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক করার অভিপ্রায়ে সঠিক পদ্বতিতে ই-বর্জ্যের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সচেতন করতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে একটি র‌্যলি করে। ই-বর্জ্য বিষয়ক বিভিন্ন প্লাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে র‌্যালিটি শেষ হয় দোয়েল চত্বরে গিয়ে। র‌্যালিতে ‘সম্পদ হবে ই-বর্জ, আমরাই করবো এই কার্য‘ স্লোগান দেয় র‌্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা।

সমাবেশে দেশে ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গণসচেতনতা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করে বক্তারা বলেছেন, আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাচ্ছে এই যাত্রাপথে প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবহার ক্রমবর্ধমান বিশেষ করে স্মার্টফোন , কম্পিউটার এবং গৃহস্থালী ইলেট্রনিক পন্য। আর এই পন্য হতে বছরে ৩০ লাখ মেট্রিক টন ই-বর্জ্য তৈরি হয় । অথচ সঠিক পদ্বতিতে এই বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করতে পারলে এই বর্জ্যই হতে পারে সম্পদ। এবং এই সম্পদের বাজার আয়তন প্রায় ২২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা, কেবল সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আমরা দখল করতে পারিছি না। তাই প্রযুক্তিপণ্য বা ডিজিটাল পণ্যের ব্যবহারে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্মার্ট হওয়ার সময় এখনই।

দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই দিবস পালন ‘সময়ের দাবি’ মন্তব্য করে বক্তারা আরো বলেন – ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গণসচেতনতার পাশাপাশি পণ্য প্রস্তুতকারীদের বা বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এই বিষয়ে দায়িত্ব নিতে হবে। সেই সাথে ই-বর্জ্যের ঝুঁকি হতে পরিবেশ রক্ষায় আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

সারাদিন. ১৪ অক্টোবর. এসআর