মোংলা বন্দরে সড়ক পথে পণ্য পরিবহন বিঘ্নিত
মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেল ও জেটি এবং মোংলা কাস্টম অফিসের কার্যক্রম টানা হরতাল-অবরোধের মধ্যেও স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু সড়কপথে বন্দরে রপ্তানি পণ্য নেওয়া এবং আমদানি করা পণ্য বন্দর থেকে খালাস করে গন্তব্যে নেওয়া বিঘ্নিত হচ্ছে।
সময়মতো ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান না পাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বন্দরের শিল্প এলাকায় অবস্থিত শিল্প-কারখানায় উৎপাদন চললেও পণ্য ডেলিভারিতে প্রভাব পড়েছে। সহিংসতার শঙ্কায় অনেক ডিলারই মিলগেট থেকে ট্রাক-যোগে পণ্য ডেলিভারি নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।


মোংলা বন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, বন্দরের পশুর চ্যানেলে আসা বিদেশি জাহাজে যথারীতি পণ্য খালাস ও বোঝাই কার্যক্রম চলছে। এসব জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের পর লাইটার জাহাজে করে নৌপথে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একইভাবে নৌপথে লাইটার জাহাজে করে আনা পণ্য বিদেশি জাহাজে বোঝাই করা হচ্ছে। মোংলা কাস্টমসের কার্যক্রমও স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু সড়কপথে জেটিতে যেসব পণ্য আনা-নেওয়া করা হতো, সে ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।
খুলনা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ও কাঁচা পাট রপ্তানিকারক বদরুল আলম মার্কিন বলেন, ভয়ে অনেক ট্রাকচালক রপ্তানিযোগ্য পাট নিয়ে বন্দরে যেতে চাইছেন না। এতে পাট রপ্তানি বিঘ্নিত হচ্ছে।
হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক মডার্ন সি ফুডসের চেয়ারম্যান রেজাউল হক বলেন, অবরোধ থাকায় কিছু কার্যক্রম তো বিঘ্নিত হচ্ছেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার এক পোশাক কারখানা মালিক বলেন, অগ্নিসংযোগের ঝুঁকি থাকায় তারা আগে যেভাবে গার্মেন্ট পণ্য বন্দরে পাঠাতেন, এখন তা পারছেন না। যেদিন অবরোধ থাকে না, সেদিন পণ্য পাঠাতে হচ্ছে।
বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি লিয়াকত হোসেন বলেন, প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক চালক ও মালিক রাস্তায় গাড়ি নামাতে চাচ্ছেন না। এ কারণে বন্দর থেকে পণ্য খালাসের পর গন্তব্যে পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক যানবাহন পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য কেউ কেউ পণ্য ডেলিভারি নিতে পারছেন না।
মোংলা কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুলতান হোসেন খান জানান, ঠিকমতো ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চলছে না। এ কারণে অনেকে বন্দরে সময়মতো পণ্য পাঠাতে পারছেন না; একইভাবে বন্দর থেকে পণ্য খালাস করে গন্তব্যে নিতে পারছেন না। তিনি বলেন, এভাবে যদি হরতাল-অবরোধ অব্যাহত থাকে, তাহলে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
বন্দর ব্যবহারকারী মেসার্স মায়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আহসান হাবিব হাসান বলেন, ব্যবসায়ীদের সতর্কতার সঙ্গে বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া করতে হচ্ছে। স্বাভাবিক গতিতে তা হচ্ছে না।
তবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি ট্রাফিক ম্যানেজার কুদরত আলী শেখ অবরোধে এ বন্দরে পণ্য ওঠানামা ও সড়কপথে পরিবহনে কোনো প্রভাব পড়ছে না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, অন্য সময়ের মতোই স্বাভাবিকভাবে এ বন্দর দিয়ে বর্তমানে সড়কপথে পণ্য আসা-যাওয়া করছে।
বন্দরের শিল্প এলাকায় অবস্থিত কয়েকটি সিমেন্ট ও এলপিজি গ্যাস উৎপাদনকারী কারখানায় অবরোধের প্রভাব পড়েছে। এসব কারখানার দূরের ডিলাররা সড়কে সহিংসতার শঙ্কায় ট্রাক-যোগে কারখানার গেট থেকে তাদের পণ্য আগের মতো তুলছেন না। এ জন্য কারখানাগুলো এখন উৎপাদন কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে।
দুবাই বাংলাদেশ সিমেন্ট মিলসের কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জানান, ডেলিভারি কিছুটা কম। তবে তিনি এ জন্য অবরোধের পাশাপাশি দেশের অস্থিরতা ও ডলারের মূল্য বেশি হওয়াকেও দায়ী করেন