গাজায় সংঘাত : গাজায় প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির বিষয়ে হামাসের সাড়া

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৪

গাজায় নতুন করে যুদ্ধরিতির একটি প্রস্তাবিত কাঠামোর বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তবে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের প্রস্তাবিত এই চুক্তির বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি। গোষ্ঠীটির এক জ্যেষ্ঠ নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিবিসিকে হামাসের ওই নেতা বলেন, ‘(গাজায়) নতুন একটি যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তুত হয়েছে এবং আমরা তাতে সাড়া দিয়েছি। তবে হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে গাজা পুনর্গঠন সংক্রান্ত কয়েকটি ধারা বা শর্তও যেন সেখানে সংযুক্ত করা হয়।’ খবর বিবিসির।

এর আগে বলা হয়েছিল, প্রস্তাবিত চুক্তিতে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও এ সময় ইসরায়েলি পণবন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে আরও ফিলিস্তিনি কারাবন্দিকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এই চুক্তির বিষয়ে হামাসের সাড়াকে পর্যালোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল।

এদিকে মধ্যপ্রাচ্য সফরে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, তিনি হামাসের সাড়ার বিষয় নিয়ে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তবে তিনি এই সাড়াকে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে মূল্যায়ন করছে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা দেননি। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, হামাস যা চাইছে তা পূরণ করতে ইসরায়েল সহজে রাজি হবে না।

হামাসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, প্রস্তাবিত চুক্তির কাঠামোর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে সংগঠনটি। তবে গাজার পুনর্গঠন, অধিবাসীদের বাড়িতে ফিরে আসা এবং বাস্তুচ্যুতদের বিষয়ে বিভিন্ন ধারা সংশোধনের জন্য প্রস্তাব রেখেছে তারা। এ ছাড়া আহতদের চিকিৎসা এবং তাদের বাড়িতে ফিরে আসা বা দেশের বাইরের হাসপাতালে পাঠানোর বিষয়েও চুক্তির ধারা পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছে হামাস। সপ্তাহখানেক আগে হামাসের কাছে এই প্রস্তাব পাঠানো হয়। তবে চুক্তির কিছু বিষয় অনিশ্চিত ও পরিষ্কার না থাকায় হামাস মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) নাগাদ এতে সাড়া দেয়নি।

অন্যদিকে, হামাসের সাড়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি।

Nagad

গাজায় সংঘাত শুরু হয় গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার মাধ্যমে। ওই হামলায় হামাস প্রায় এক হাজার ৩০০ ইসরায়েলিকে হত্যা করে এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে আসে। এ হামলার জবাবে গাজায় নির্বিচারে বোমাবর্ষণ শুরু করে ইসরায়েল। পাশাপাশি চলে স্থল অভিযান। ইতোমধ্যে ইসরায়েলি হামলায় ২৭ হাজার ৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই ছিল নিরীহ শিশু ও নারী।

গত বছরের নভেম্বরে সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতির সময় হামাস ১০৫ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি পণবন্দিকে মুক্ত করে দেয়। ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ২৪০ জন বন্দিকে এর বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হয়।

চার মাস ধরে চলমান সেই অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ২৭ হাজারেরও বেশি মানুষ, আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৬৮ হাজার। এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনীর গোলায় বাড়িঘর হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন আরও লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, ও মিসরের নিরলস চেষ্টায় গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ দিনের অস্থায়ী বিরতি চুক্তি হয়েছিল হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে। সেই ৭ দিনে নিজেদের কব্জায় থাকায় জিম্মিদের মধ্যে ১০৮ জনকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। পাল্টায় ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দেড়শ’রও বেশি মানুষকে মুক্তি দিয়েছিল ইসরায়েলও।

হিসেব অনুযায়ী, হামাসের কব্জায় এখনও ১৩২ জন জিম্মি রয়েছে। তাদের ফিরে পেতে ইসরায়েলে ব্যাপক বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু করেছেন জিম্মিদের স্বজনরা। ইসরায়েলের সাধারণ জনগণের একাংশও যোগ দিয়েছেন আন্দোলন কর্মসূচীতে।