সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের মুখে ৪শত বছরের পুরনো গিলাবাড়ি মসজিদ

লালমনিরহাটে মুঘল আমলে নির্মিত ৪শত বছরের পুরনো গিলাবাড়ি জামে মসজিদ কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমান সময়ে সংস্কারের অভাবে মসজিদটি ধ্বংসের মুখে পড়েছে। ঐতিহাসিক এই মসজিদটি রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে তরুণ প্রজন্ম।

জানা যায়, মুঘল আমলের এই মসজিদটির অবস্থান আদিতমারী উপজেলার সাপ্তিবাড়ি ইউনিয়নের গিলাবাড়ি নামের প্রত্যন্ত গ্রামে। মসজিদে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ এখনো নিয়মিতভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করতে আসছেন। মসজিদটি ১৫৬৫ সালে মুঘল রাজত্বের সময় নির্মিত হয়েছে। কে এই মসজিদটি নিমার্ণ করেছে, তার সঠিক কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। গ্রামটি এক সময় খুব সমৃদ্ধ ছিল, এই মসজিদটি তাই প্রমাণ করে। মসজিদ পাড়ের প্রবেশ দ্বারের পাশে পাকা ১টি কূপ রয়েছে। কূপটিতে মুসল্লিদের অজুর পানি সরবরাহ হতো।

গ্রামের বয়স্ক আব্দুর রহিম জানান, এক সময় গ্রামের বিশুদ্ধ খাবার পানি এই কূপ থেকে সরবরাহ করা হতো। এই মসজিদ প্রাঙ্গণে ইন্দ্রা বা কূপকে রংপুরের আঞ্চলিক ভাষা চুয়া বলা হয়ে থাকে। এই কূপ আশপাশের ১০ গ্রামের বিশুদ্ধ খাবার পানি ও দৈনন্দিন কাজের পানির চাহিদা মেটাতো। গ্রামবাসী ও তরুণ প্রজন্ম প্রাচীন এই মসজিদটি রক্ষায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।

গ্রামবাসীর দাবি, সমাজ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। এই বিরোধের জেরে চারশত বছরের পুরোনো মসজিদটি ধ্বংসে নানা ষড়যন্ত্র তৈরি হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি এখানে একটি ধর্মী উপসানালয়ের পাশাপাশি পর্যটন স্পটেও পরিণত হয়েছে।

দিনাজপুর কান্ত নগর জাদুঘর ও কান্তজীর মন্দির জাদুঘরের কাস্টডিয়ান হাফিজুর রহমান বলেন, তার নেতৃত্বে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের তিন সদস্যের দল ৪শত বছরের ঐতিহাসিক প্রাচীন মসজিদটি পরিদর্শন করেছেন। নির্মাণশৈলী ও তথ্য উপাত্ত প্রমাণ করে, মসজিদটি মুঘল সাম্রাজ্যের আমলে তৈরি করা হয়েছে। কে বা কারা নির্মাণ করেছে তার কোনো ঐতিহাসিক ডকুমেন্ট নেই। চমৎকার নির্মাণশৈলী আমাকে মুগ্ধ করেছে।

এখন প্রশ্ন উঠেছে মুঘলরা এখানে কেন এসেছেন। তারা এখানে কেনইবা বসতি স্থাপন করেছিলেন। এই মসজিদটি বলে দেয় এখানকার সমৃদ্ধতার কথা। সাপ্টিবাড়ি তামাক চাষ ও বিপণনের জন্য বিখ্যাত। তাহলে কি মুঘলরা তামাকের ব্যবসা করতে এসে এখানে বসতি স্থাপন করেছিলেন। মসজিদটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।

Nagad

এদিকে, দিনাজপুর কান্তনগর জাদুঘর কর্তৃপক্ষ মসজিদটি নির্মাণ ও অবকাঠামোগত সম্পর্কে বর্ণনা করেন, ৪২ ফুট দীর্ঘ এবং ১৬ ফুট চওড়া মসজিদটি। মসজিদটিতে ১৩টি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের প্রবেশপথে তিনটি গম্বুজ রয়েছে। সামনে একটি প্রাচীন কূপ ( ইন্দ্রা বা চুয়া) রয়েছে। গ্রামের মানুষ এই মসজিদটিকে পুরান জামে মসজিদ বলে। মসজিদটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। এটি গবেষণার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে মসজিদটি দেখেন। মসজিদে নামাজ আদায় করেন। এই মসজিদের ভেতরের অংশে দুই কাতারে মোট ৪০ জন মুসল্লি একসঙ্গে জামাতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে পারে।

মসজিদ কমিটির সভাপতি এরশাদ আলম (৭৬) জানান, দীর্ঘদিন গ্রামবাসীর একাংশ প্রাচীন মসজিদটি ভেঙে ফেলতে চায়। নতুন আঙ্গিকে এখানে নতুন মসজিদ নির্মাণ করার কথা শুনেছি। তরুণ প্রজন্ম নতুনভাবে মসজিদ নির্মাণের বিরোধিতা করেন। তারা ঐতিহাসিক পুরনো এই মসজিদটির বর্তমান অবকাঠামো ঠিক রেখে সংস্কার করার পক্ষে। পুরোনোকে ঘিরে নতুনভাবে সম্প্রসারণের পক্ষে তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান মিয়া জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি মসজিদটি একই অবস্থায় দেখে আসছেন। তবে তিনি তাঁর দাদার কাছে শুনেছেন মসজিদটি আরও উঁচু ছিল। পরে যা মাটির নিচে ৩ ফুট পর্যন্ত দেবে গেছে।