ছাত্ররাজনীতি নিয়ে আদালতের রায় মানতে হবে: বুয়েট উপাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক:নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৩:১২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১, ২০২৪

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেছেন, ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে আদালতের রায় মানতে হবে। আদালতের রায়ের ওপরে কিছু নেই৷ আদালত যদি সিদ্ধান্ত দেয় আমাদের সেটি মেনে নিতে হবে। আবার আমরা অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি যেটি আদালতে গেলে আর টেকে না। তবে সিন্ডিকেট বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।

সোমবার (১ এপ্রিল) এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

উপাচার্যের কার্যালয়ে সাংবাদিকরা ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধে করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জারি করা প্রজ্ঞাপন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, এখনও রায়ের কপি পাননি। পেলে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন আদালত। বুয়েটের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ রাব্বি এ রিট দায়ের করেন। রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার হারুনুর রশিদ বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন। আদালতের এ আদেশের ফলে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চলতে বাধা নেই বলে জানান তিনি।

এর আগে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) এর প্রেসিডেন্ট ও আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর ও সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী এস এম মঞ্জুরুল হক মঞ্জু হ আইইবি’র বেশ কয়েকজন সদস্য বুয়েটে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন। তারা সবাই বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী৷

এ বিষয়ে বুয়েট উপাচার্য বলেন, ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং কমিটির নেতারা এসেছিলেন। বুয়েটের প্রাক্তন ছাত্ররাও ছিলেন। তারা বুয়েট সম্পর্কে সবসময় ওয়াকিবহাল। তারা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বুয়েটের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করেন। বিশেষ করে প্রকৌশলীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করেন৷ তাদের কথা হলো বুয়েট থেকে পাস করে যেন শিক্ষার্থীরা দেশের জন্য কাজ করেন, মুক্তিযুদ্ধ চেতনায় উদ্বুদ্ধ থাকেন এবং এখান থেকে পাস করে জন্য দেশের বাইরে চলে না যান।

Nagad

উপাচার্য বলেন, উনারা চাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা শুধু পড়ালেখা শিখবে না৷ মুক্ত চিন্তা করবে, সাহিত্য শিখবে, রাজনীতি শিখবে, দেশের প্রতি যাদের করণীয় কিছু সম্পর্কে তারা জানবে। তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সেভাবেই হবে যে দেশে থেকে দেশের জন্য কাজ করে যাওয়া৷ না হলে সে কিন্তু চিন্তা করবে যে আমি দেশকে চিনি না শুধু বুয়েট ক্যাম্পাস কেই চিনি। ওনারা বলতে চাচ্ছেন এই বিষয়ে একটা পরিকল্পনা করা দরকার৷ যেখানে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি মুক্ত চিন্তার রাজনীতিও করতে পারে৷ আমরা এসব বিষয়ে আমাদের শিক্ষক, ছাত্র একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিনডিকেট সভায় আলোচনা করবো।

আইইবি নেতারা মনে করেন, বুয়েটে মুক্ত চিন্তা থাকা প্রয়োজন। তাই সে ব্যাপারে তারা কিছু গাইডলাইন দিতে চাচ্ছেন। নেতার বলেন, বুয়েটে সুস্থ রাজনীতির চর্চা না থাকার কারণে মৌলবাদী ধারার অনুপ্রবেশ ঘটবে। হিযবুত তাহরিরের লিফলেট ছড়ানো হচ্ছে। আমরা সবার সহাবস্থান ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাই। অবাধ রাজনীতিই পারে বুয়েটে সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণ করতে। কারণ মুক্তচিন্তা না থাকলে শিক্ষার্থীরা দেশ নিয়ে ভাববে না। এসময় গত বছরের জুলাইয়ে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে রাষ্ট্রবিরোধী গোপন বৈঠকের অভিযোগে গ্রেফতর বুয়েটের ৩৪ শিক্ষার্থীর ঘটনা তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান বুয়েট উপাচার্য।

প্রসঙ্গত, এর আগে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে ২০১৯ সালে জারি করা প্রজ্ঞাপন স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এর ফলে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতিতে আর কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন রিটকারীর আইনজীবী। একইসঙ্গে, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপন কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।