মোহাম্মদপুরে ২৫ দিন বেঁধে তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৩:৩৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১, ২০২৪

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় শেকলে বেঁধে রেখে এক তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করার অপরাধে এক নারীসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন- সান (২৬), হিমেল (২৭) ও রকি (২৯) ও সালমা ওরফে ঝুমুর (২৮)।

নবীনগর হাউজিংয়ের একটি বাসায় তাকে আটকে রেখে ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণের অভিযোগে শনিবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী তরুণী। এর আগে তরুণীর চিৎকারে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে এক ব্যক্তি কল করলে পুলিশ তরুণীকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুল হক ভূঁইয়া।

সোমবার (১ এপ্রিল) সকালে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিসি এইচএম আজিমুল হক।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ভুক্তভোগী তরুণী জানায়, বাবা মায়ের বিচ্ছেদ এবং পরে তারা অন্যত্র বিয়ে করায় ওই তরুণী তার বড় বোনের বাসায় থাকত। সেসময় ভগ্নিপতির মাধ্যমে মাসুদ নামের এক ব্যারিস্টারের সঙ্গে পরিচয় হয়। ব্যারিস্টার মাসুদের সঙ্গে লিভ টুগেদার করত সে। মাসুদ বেশিরভাগ সময় বিদেশে থাকত। দেশে আসলে ভুক্তভোগী ওই তরুণীর সঙ্গে থাকত। পরে মাসুদের মাধ্যমে এক প্রবাসীর স্ত্রী সালমা ওরফে ঝুমুরের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে সালমার সঙ্গে নবীনগরের ভাড়া ফ্ল্যাটে ওঠে ওই নারী। যার সব খরচ বহন করত মাসুদ।

আসামি সালমা ও ভুক্তভোগী তরুণী একসঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করত। সালমা ভুক্তভোগী তরুণীকে নিয়ে মোহাম্মদপুর গ্রিন সিটি এলাকায় ঘুরতে গিয়ে আসামি হিমেল ও সানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরে ভুক্তভোগী তরুণীকে নিয়ে সালমা, হিমেল ও সান ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দেয়। একপর্যায়ে আসামি সানের সঙ্গে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রেমের সুবাদে হিমেল ও সান ভিকটিমের বাসায় আসা যাওয়া করত। আসামি সানের সঙ্গে ভুক্তভোগী তরুণীর সম্পর্কের বিষয়টি ব্যারিস্টার মাসুদকে জানান সালমা।

ব্যারিস্টার মাসুদ এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ভুক্তভোগী তরুণীকে শিক্ষা দিতে হবে বলে সালমাকে জানায়। মাসুদ সালমাকে ওই তরুণীকে আটক করে তার পর্ণ ভিডিও ধারণ করতে বলে। মাসুদের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী সালমা ভুক্তভোগী তরুণীকে আটক ও পর্ণ ভিডিও ধারণ করার বিষয়টি হিমেল, সান ও রকির সঙ্গে শেয়ার করে। পরে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ওই তরুণীর বাসায় আসামি সান বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ঘটনাটি সালমা রুমে গোপন ক্যামেরা স্থাপন করে ভিডিও ধারণ করে।

Nagad

পরে সান একাধিকবার ওই তরুণীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৫ মার্চ আসামীরা ভুক্তভোগী নারীর বাসায় এসে তাকে সারপ্রাইজ দেবে জানিয়ে তাকে চোখ বন্ধ করতে বলে। পরে ভুক্তভোগী নারী চোখ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে তার হাত পা বেঁধে ফেলে ও মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়। হিমেল ভুক্তভোগী নারীকে একটি রুমে আটকে রেখে পাহারা দেয়। কিছুক্ষণ পর হিমেল ওই নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। সালমা বাইরে গিয়ে শেকল ও তালা কিনে নিয়ে আসে। ঐদিন বিকেলে আসামীরা ভুক্তভোগী নারীর হাতে ও পায়ে শেকল লাগিয়ে রুমের দরজা ও বাথরুমের দরজার সঙ্গে আটকে রাখে। এরপর গত ৭ মার্চ রাতে আসামি রকি জোরপূর্বক ওই নারীকে ধর্ষণ করে। আসামীরা শুধু খাওয়ার সময় ভুক্তভোগী নারীর হাতের শেকল খুলে দিত।

ডিসি আরো বলেন, গত ৮ মার্চ আসামীরা ভুক্তভোগী নারীকে বিভিন্ন পর্ণ ভিডিও দেখায়। সে অনুযায়ী ওই নারীকে একই কাজ করতে বাধ্য করে। ব্যারিস্টার মাসুদের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামি সান, হিমেল, রকি ও সালমা বিভিন্ন সময়ে ভুক্তভোগী নারীকে নির্যাতন করে তাদের দেখানো পর্ণ ভিডিওর মত করে আলাদা আলাদা পর্ণ ভিডিও ধারণ করে। প্রতিদিনের ধারণ করা ভিডিও আসামি সালমা ব্যারিস্টার মাসুদের নিকট পাঠায়। আসামীরা তার উপর পৈশাচিক নির্যাতন চালায় ও অমানুষিক আচরণ করে। গত ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় সালমা ভুক্তভোগী ওই নারীকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে বাইরে যায়। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে তার ঘুম ভেঙে গেলে বাসায় কেউ নেই বুঝতে পেরে সে জানালা দিয়ে চিৎকার দেয়।

ওই নারীর চিৎকারে এক পথচারী জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিয়ে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে সংবাদ দেয়। পরে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ তাকে শিকল বাধা অবস্থায় ওই ভবনের চারতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করে ও আলামত সংগ্রহ করে।বর্তমানে ওই নারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে(ওসিসি) চিকিৎসাধীন আছে।

ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।

এসময় উপস্থিত ছিলেন তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মৃত্যুঞ্জয় দে সজল, সহকারী পুলিশ কমিশনার আজিমুল হক, মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো মাহফুজুল হক ভূঁঞা, পরিদর্শক (তদন্ত) তোফাজ্জল হোসেন ও মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক এসআই মো. ফারুকুল উপস্থিত ছিলেন।