‘মিরপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরাতে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেশি’

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ২:৪৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৭, ২০২৪

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। ফাইল ছবি

রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেশি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন-ঢাকার ৫০টি থানার মধ্যে ১০টি থানা এলাকায় এসব কিশোর অপরাধ দেখা যায়। এছাড়া যারা কিশোর গ্যাংয়ের মদদদাতা তাদেরও তালিকা করা হয়েছে।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ‘কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সামাজিক আন্দোলন নিয়ে ছায়া সংসদ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

কমিশনার বলেন- আজকের কিশোর আগামী দিনে নেতৃত্ব দেবে। ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সী কেউ অপরাধ করলে আমরা তাকে কিশোর অপরাধী বলছি। এই বয়সী কিশোররা দলবদ্ধভাবে অপরাধ করলে তাকে আমরা বলছি ‘কিশোর গ্যাং’।

কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম করে থাকে পুলিশ। মসজিদে জুমার দিনে ওসিরা কিশোর গ্যাং বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। কিশোর গ্যাং অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশের বিভিন্ন সভা-সমাবেশও করা হয়েছে। স্কুলে-স্কুলে গিয়েও কিশোর গ্যাং অপরাধ প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। কিশোর গ্যাং অপরাধ প্রতিরোধে আসল কাজ হবে পরিবার থেকে। পরিবার থেকে মা, বাবা বড় ভাই-বোন এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবে।

মোবাইলের দুটি দিক উল্লেখ করে হাবিবুর রহমান বলেন, একটি নেতিবাচক অন্যটি ইতিবাচক। একটি মোবাইল একটি লাইব্রেরি, একটি জ্ঞান ভাণ্ডার। মোবাইলের পজিটিভ দিক শিক্ষার্থীরা যেন ব্যবহার করে সেই শিক্ষাটা অভিভাবকদের দিতে হবে।

Nagad

খেলাধুলার জায়গার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা শহরে খেলার মাঠের সংখ্যা কম। মাঠ নিয়ে আন্দোলনও হয়েছে। সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো খেলাধুলার মাঠের বিষয়ে কাজ করতে পারে।

কিশোর অপরাধ নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতি আছে কি না জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো গাফিলতি নেই। অভিযোগ এলেই সঙ্গে সঙ্গে মামলা গ্রহণ করা হয় এবং জড়িতদের আইনের আওতায় এনে আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরে কিশোর সংশোধনাগারে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু প্রাথমিকভাবে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কাজ নয়। প্রাথমিকভাবে স্থানীয় জনসাধারণের কাজ। জনগণ সোচ্চার হলে কিশোর গ্যাং কালচার কমে যাবে।

হাবিবুর রহমান বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলদের কিছু অনুসারী রয়েছেন যাদের ১৮ বছরের উপরে বয়স। এলাকায় রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে কেউ কেউ কিশোরদের ব্যবহার করছে। সরাসরি কোনো কাউন্সিল কিশোরদের নিয়ে অপরাধ করার জন্য গ্যাং তৈরি করেছে এমন তথ্য পাইনি। কাউন্সিলদের সহযোগী রয়েছেন এমন কেউ কেউ আছেন তারা কিশোরদের নিয়ে চলাচল করেন। এসব কিশোরদের বেশিরভাগই ছিন্নমূল। বেশিরভাগ কিশোরদের বাবা নেই। মা থাকলেও দেখা যায় অন্যের বাসায় কাজ করেন। এসব বিষয়েও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে আইনের আওতায় পড়লে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক পাতিনেতাদের বিভিন্ন সময় থানায় ডেকে শাসানো হচ্ছে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, সমাজের ভদ্রলোকরা মনে করেন থানায় অভিযোগ দিতে গেলে বিপদে পড়বেন এজন্য সেই ভয়ে থানায় যান না। এটি সমাজের সবচেয়ে দুর্বলতা এবং নেতিবাচক দিক। যারা সমাজের ভালো মানুষ, শান্তি প্রিয় মানুষ, তারা যদি ঐক্যবদ্ধ হন তবে অনেক কঠিন কাজই সহজ হয়ে যায়। আমি সেটির আহ্বান জানাই। সমাজে ভালো মানুষ যারা তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িতরা বেশিরভাগই নষ্ট রাজনীতির শিকার। অভিযোগ রয়েছে কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতা শিশু-কিশোরদের তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করছেন। অস্ত্র তুলে দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক ও ব্যক্তি স্বার্থে অর্থের বিনিময়ে অপরাধ করাচ্ছে। জমিজমা, ঘরবাড়ি দখল করাচ্ছে। আবার পুলিশ আটক করলে তাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনছে, প্রয়োজনে জামিনের ব্যবস্থাও করছে। ফলে এসব শিশু কিশোররা কিশোর গ্যাং কালচারে সম্পৃক্ত হয়ে বড় ভাইদের পক্ষে ভাড়ায় খাটছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সর্বস্তরে কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ভয়েস রেইস করতে হবে। কিশোর গ্যাংয়ের নেপথ্যের মদদদাতাদের তালিকা করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক জি এম তসলিম, জিয়া খান, অনিমেষ কর ও কাওসার সোহেলী।