কুড়িগ্রামে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
প্রকাশিত: ৩:৫৮ অপরাহ্ণ, মে ৫, ২০২৪

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ তোলায় স্বজনদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মরদেহ দ্রুত নিয়ে যেতে চাপ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের বিন্নাবাড়ী এলাকার মেকাইল মিয়ার ছেলে রফিকুল ইসলাম (২৬) ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। এরমধ্যে গলায় সমস্যা দেখা দিলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে চলে আসেন। পরে গত ২৮ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে আবারও ভর্তি হন নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকালে হাসপাতালে চিকিৎসক রাউন্ড দেয়ার সময় রোগীকে রাতে সিডিল ইনজেকশন দেয়ার নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী রাত ৭ টা ২৮ মিনিটে রফিকুলকে ইনজেকশন পুষ করে নার্স। আধা ঘণ্টা পরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাহেব আলী রাউন্ডে এসে ওই রোগীকে ইনজেকশন মাইলাম ও ইনজেকশন পারকিনিল দিতে বলেন। রাত সাড়ে আটটায় ইনজেকশন দু’টি তার দু’হাতে পুষ করা হয়। এর কিছুক্ষণ পরে রোগী মারা যায়।

মারা যাওয়া রফিকুলের স্ত্রী সালেহা জানান, ঢাকা থেকে বাড়ি আসার দিন রফিকুল অসুস্থ হয়ে পড়লে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি করেন। গলার সমস্যায় কিছু খেতে পারছিলনা। পরে বাড়ি আসার পর নাগেশ্বরী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে সে কথা বলছিল। ইনজেকশন দেয়ার পরপর মারা যায়। অভিযোগ করলে তারা বলে মামলা হবে। রোগী কাটাছেঁড়া করবে। পরে নিয়ে চলে আসেন।

রফিকুলের বড় ভাই আব্দুল মজিদ বলেন, আমি ওখানে ছিলাম। ডাক্তার আসার পর ইনজেকশন দিল। ১৫ মিনিট পর মারা গেল। সে অতোটা অসুস্থ ছিল না।

Nagad

ছোটভাই ওবায়দুল ইসলাম বলেন, সব সময় ভাইয়ের সাথে ছিলাম। ওইদিন সন্ধ্যায় বাড়িতে মা অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তার নিয়ে মায়ের এখানে আসি। আমাকে ফোন করে জানালো এ অবস্থা। আমাদের তো শক্তি নাই কাকে বলবো। বোন জামাই আশরাফ আলী বলেন, তিনটা ইনকেজশন কেন দেয়া হলো অভিযোগ করায় হাসপাতালে তারা বলে তাহলে লাশ দেয়া হবে না। পোস্টমর্টেম হবে। ভয়ে তারা কিছু বলতে পারে নাই। ওই ডাক্তারের বিচার হওয়া উচিৎ।

রফিকুলের পিতা মেকাইল হোসেন বলেন, ৫ ছেলের মধ্যে রফিকুল চার নম্বর। বড়রা থাকতে সে মারা গেল। ডাক্তার তিনটা ইনজেকশন কেন দিল। ডাক্তারের বিচার চাই আমি।

নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সাহেব আলী বলেন, তাকে আগে সিডিল ইনজেকশন দেয়া ছিল আমি দেখিনি। রোগীর পেট ব্যথা ছিল। এ কারণে পরে দু’টি ইনজেকশন দেয়া হয়। এতে রোগী মারা যাওয়ার কথা নয়। হয়তো অন্যকোন সমস্যা ছিল। রোগীর লোকজন সেটি গোপন রেখেছে হয়তো। ইনজেকশনের কারণে রোগী মারা যায়নি বলে দাবী এ চিকিৎসকের।

নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কেন তিনি এ ধরণের চিকিৎসা দিয়েছেন সেটা ওই চিকিৎসকই বলতে পারবে। রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি নিজে (স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন) ওই স্থানে হলে এরকম চিকিৎসা কখনও দিতেন না বলে জানান তিনি।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মনজুর-ই-মুর্শেদ বলেন, রোগীর স্বজনরা অভিযোগ দিয়ে থাকলে কমিটি করে তদন্ত করা হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। রোগীর সকল কাগজপত্র না দেখে এ বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।