বাজেট: টেকসই রাজস্ব নিশ্চিত করতে প্রয়োজন নীতিনির্ধারণে ধারাবাহিকতা

নিজস্ব প্রতিবেদক:নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ৫:৫৫ অপরাহ্ণ, মে ৮, ২০২৪

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে অর্থনৈতিকভাবে বিভিন্ন কৌশলগত খাতের মূল বিবেচ্য বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য আয়োজিত গোলটেবিলে বক্তারা টেকসই রাজস্ব বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য নীতিনির্ধারণে ধারাবাহিকতার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

আজ মঙ্গলবার (৮মে) রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫: উচ্চ-সম্ভাবনাময় সেক্টরের জন্য অগ্রাধিকার’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনার জন্য বেসরকারি ও সরকারি উভয় ক্ষেত্রের বিশিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

বক্তারা চলমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক সমস্যাগুলির প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরের বিষয়ে আসন্ন বাজেটকে কীভাবে পরিচালিত করা উচিত, তা নিয়ে আলোচনা করেন।
পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. এম মাসরুর রিয়াজ গোলটেবিল বৈঠকে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক বাস্তবতাগুলো তুলে ধরেন এবং কৃষি, তামাক, তৈরি পোশাক, নিত্যব্যবহার্য পণ্যের বাজার (এফএমসিজি), ডিজিটাল অর্থনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের জন্য বাস্তবসম্মত নীতি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।

তিনি বলেন, ‘আর্থিক নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে উচ্চ সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে সমৃদ্ধ করার জন্য জনকল্যাণের পাশাপাশি রাজস্ব বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ উৎসগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মোট অভ্যন্তরীণ রাজস্বের প্রায় ১২-১৩ শতাংশ প্রদান করে তামাক খাত। এটি বিশ্বে সর্বোচ্চ কর প্রদানের অন্যতম রেকর্ড এবং দেশে তামাকের কর হার ডব্লিউএইচও-র প্রস্তাবিত স্তরের উপরে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে তৈরি সিগারেটের দাম বেশিরভাগ দেশের তুলনায় কম। জনগণকে ধূমপান থেকে বিরত রাখতে এবং টেকসই রাজস্ব বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সকল বিভাগের সিগারেটের দাম বাড়াতে হবে।’

এসিআই এগ্রিবিজনেস ও মেশিনারিজ বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এফ এইচ আনসারী বলেন, ‘কৃষিখাতে বর্তমানে তিনটি বিষয়ের ওপর সরকারকে নজর দিতে হবে। পরিবেশ ও জলবায়ুর পরিবর্তন, ফুড ভ্যালু চেইন ও আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে হবে। এসব বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি খাতে সমন্বয় থাকা উচিত।

দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন হচ্ছে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সাপ্লাই চেইন। এ বিষয়টি বেসরকারি খাতে দেয়া যেতে পারে। বাজেটে এসব বিষয়ে দিক নির্দেশনা থাকা দরকার।’

Nagad

অনুষ্ঠানে এনবিআরের সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান পাটোয়ারী বলেন, ‘এনবিআরকে যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভ্যাট আইনে অসঙ্গতি দূর করতে হবে। যে উদ্দেশে আইন হয়েছে তা কাজে না এলে লাভ নেই। সাধারণ করদাতার কাছে তা জটিল হয়ে গেছে। অসঙ্গতি দূর করলে রাজস্ব সংগ্রহ বেড়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘গরিব মানুষের কথা ভাবতে হবে। সরকারেরও নীতি আছে গরিব মানুষের ঝুঁকিগুলো কমিয়ে আনা। এসব নিম্নবিত্ত মানুষ সস্তায় সিগারেট খায়। বিশেষ করে নিম্নস্তরের দামের সিগারেট এসব মানুষকে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে ফেলছে। গরিব মানুষ যাতে কম ধূমপান করে সেজন্য নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো উচিত। সেটা এনবিআরকে বিবেচনায় আনতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘একক খাত হিসেবে তামাক বেশ বড় খাত। এর ওপর নির্ভরশীলতা থাকবে আরো।’ তিনি আরো বলেন, ‘রপ্তানি পণ্য হিসেবে তামাককে বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার যেন ধান উৎপাদনে ঝুঁকি না আসে।’

ডিজিটাল খাতে কর অব্যাহতি বজায় রাখার অনুরোধ জানান ডিজিকন টেকনোলজিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদুর রহমান শরিফ। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল খাতে কর আরোপ করা হলে বাজার মন্থর করবে। এছাড়া প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে আমাদের ডিজিটাল খাত পিছিয়ে পড়বে।’ তিনি বলেন, ‘স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেয়া না হলে বিদেশি প্রতিষ্ঠান এর সুযোগ নেবে। এতে করে স্থানীয় দক্ষতা বৃদ্ধি ব্যাহত হবে।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য লুৎফুল হাসান বলেন, ‘ কৃষিতে আমাদের উদ্দেশ্য হবে রপ্তানি বাড়ানো, আমদানি কমানো। যতটা সম্ভব ভর্তুকি দিতে হবে ‘ তিনি বলেন, ‘তামাক রপ্তানি বাড়ানোর সম্ভাবনা আছে।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সাবেক সচিব শুভাশিষ বসু বলেন, ‘ট্যাক্স ব্যবস্থায় ডিজিটাইলাজাইশন করতে হবে। এতে সবাই কর দিতে আগ্রহী হবে।’ তিনি বলেন, ‘ইনডাইরেকট ট্যাক্সের ওপর যত নির্ভরতা কমানো যায় তত ভালো। সমন্বিত পরিকল্পনা করতে হবে। ডিজিটাল ব্যবস্থার দিকে জোর দিতে হবে।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, এনবিআরের সাবেক সদস্য অপূর্ব কান্তি দাস, বিজিএমইএর পরিচালক শামস মাহমুদ, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, নেসলে বাংলাদেশের ডিরেক্টর (লিগ্যাল, আরএসএ, করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) দেবব্রত রায় চৌধুরী, স্নেহাশীষ-মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানির ম্যানেজিং পার্টনার স্নেহাশীষ বড়ুয়া, পিকার্ড বাংলাদেশ লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অমৃতা ইসলাম, অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াকার চৌধুরী, দৈনিক সমকালের সহযোগী সম্পাদক জাকির হোসেন প্রমুখ।