ইসলামী শাসনের পথে সিরিয়া: অন্তর্বর্তী সংবিধানে স্বাক্ষর করলেন প্রেসিডেন্ট
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) একটি অস্থায়ী সংবিধানে স্বাক্ষর করেছেন, যা দেশটিকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য ইসলামপন্থী শাসনের অধীনে পরিচালিত করবে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তিন মাস আগে ব্যাপক আক্রমণের মাধ্যমে বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর নতুন সংবিধানে স্বাক্ষর করেন আল-শারা। তিনি বলেন, এটি সিরিয়ার জন্য নতুন ইতিহাসের সূচনা করবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করবে।


সংবিধান খসড়া কমিটির সদস্য আব্দুল হামিদ আল-আওয়াক বলেন, আগের সংবিধানের কিছু বিষয় নতুন সংবিধানেও বজায় থাকবে। এর মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রপ্রধানকে মুসলিম হতে হবে এবং আইনশাস্ত্রের প্রধান উৎস হিসেবে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই নথিতে মত প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং নারীদের ‘সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার’ নিশ্চিত করার বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সিরিয়ার নড়বড়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এটি ‘সামাজিক নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতার মধ্যে ভারসাম্য’ বজায় রাখতে ভূমিকা রাখবে। এই সংবিধানে বেশির ভাগ মনোযোগ থাকবে অন্তর্বর্তী সময়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ওপর। এর লক্ষ্য হবে পূর্ববর্তী বাশার আল-আসাদ সরকারের অধীনে সংঘটিত অপরাধের বিচার নিশ্চিত করা।
যেকোনো সমস্যা মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করে আল-আওয়াক বলেন, অস্থায়ী সংবিধানের অধীনে নির্বাহী ক্ষমতা শুধু প্রেসিডেন্টের হাতে সীমাবদ্ধ থাকবে।
সংবিধানের প্রধান দিক
রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য মুসলিম হওয়া বাধ্যতামূলক।
ইসলামি আইন হবে প্রধান আইনি ভিত্তি।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নারীদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার বিধান সংযোজন।
পূর্ববর্তী শাসনামলের অপরাধের বিচারের ওপর গুরুত্ব।
অন্তর্বর্তী সংবিধানে একটি গণপরিষদের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যার এক-তৃতীয়াংশ সদস্য সরাসরি প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত করবেন। এই পরিষদ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আইন প্রণয়ন করবে এবং প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষমতা রাখবে, যদিও বাস্তবে তা কঠিন হবে।
নির্বাহী ক্ষমতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
অস্থায়ী সংবিধানের অধীনে নির্বাহী ক্ষমতা এককভাবে প্রেসিডেন্টের হাতে থাকবে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সংবিধান কার্যকর থাকবে, যা চার থেকে পাঁচ বছর সময় নিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থায়ী সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি নতুন কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। তবে এতে সিরিয়ার রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও জাতিগোষ্ঠীগুলোর আরও অন্তর্ভুক্তি থাকবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।