হাসিনা, জয়, পুতুল ও রেহানাসহ ২০১ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা
সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর পরিবারের সদস্য ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ ২০১ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি শাহবাগ থানাকে এফআইআর হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুল ইসলাম পুলিশ প্রতিবেদনের আলোকে এই আদেশ দেন।


এর আগে, গত ২৩ মার্চ ‘ফ্যাসিস্ট উৎখাত আন্দোলন’-এর প্রধান সমন্বয়ক এম এ হাশেম রাজু বাদী হয়ে মামলাটি করেন। শুনানি শেষে আদালত শাহবাগ থানায় একই ঘটনায় কোনো মামলা আছে কিনা, তা জানতে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
বাদীর অভিযোগ, গত ৪ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ‘স্বৈরাচারবিরোধী’ মিছিল বের করে ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পৌঁছালে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের হামলায় ভিকটিম এমদাদ মারাত্মক আহত হন। তাঁর চোখে ছররা গুলি লাগে এবং পরবর্তীতে তিনি এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান।
অভিযোগে বলা হয়েছে, আহত অবস্থায় তাঁকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করাতে চেষ্টা করা হলেও ভর্তি নেয়নি কেউ। পরবর্তীতে গোপনে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন ভিকটিম।
মামলার উল্লেখযোগ্য অপর আসামিরা হলেন—শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, সালমান এফ রহমান, আসাদুজ্জামান খান কামাল, শেখ ফজলে নুর তাপস, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, মনিরুল ইসলাম, শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, মসিউর রহমান, ড. গওহর রিজভী, ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, হারুন অর রশিদ, বিপ্লব কুমার সরকার, নাঈমুল ইসলাম খান, নঈম নিজাম, শ্যামল দত্ত ও সুভাষ সিংহ রায়।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সময় গত ৪ আগস্ট বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে স্বৈরাচারী হাসিনার বিদায়ের লক্ষ্যে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন এক দফা বাস্তবায়নের দাবিতে অত্র মামলার বাদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হতে এ মামলার ঘটনাস্থল পরিবাগ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের মোড়ে এসে পৌঁছালে পূর্ব হইতে ওঁৎপেতে থাকা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ফ্যাসিস্ট হাসিনার সহযোগী পুলিশসহ ভিকটিম ও তাহার সঙ্গীসাথীদের অবরোধ করে। আসামিরা বাদী ও ভিকটিমসহ অন্যান্য ছাত্র জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করে, আহত করে, হাতবোমা, পেট্রোল বোমা ও ককটেল বিস্ফোরণ ও নিক্ষেপ করে। মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের কাঁদানে গ্যাস, পিপার স্প্রে ও ছররা গুলিতে অত্র মামলার ২নং সাক্ষী এবং ভিকটিমের ডান চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাহার ডান চোখের ভেতরে পেলেট গান তথা ছররা গুলি ঢুকে পড়ে। ভিকটিম আহত চোখ নিয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়িলে অজ্ঞাতনামা ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ সদস্যরা ভিকটিমকে বেদম পিটুনি দিতে থাকে। ভিকটিমের চোখে ছররা গুলি ঢুকার এবং মারধরের দৃশ্য নিকট হতে প্রত্যক্ষ করেন এই মামলার বাদী। তিনি আহত ভিকটিমকে উদ্ধার করে দ্রুত গোপনে বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার ভর্তি নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। বিধায় ভিকটিম চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান। অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে বাদীর সহযোগিতায় ভিকটিম গোপনে চট্টগ্রাম চলে যান। পরবর্তীতে হাসিনা পতনের সংবাদ জানিতে পেরে ভিকটিম বিগত ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হসপিটালে ভর্তি হন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বিগত ৭ আগস্ট জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে রেফার করেন। পরবর্তীতে ১১ আগস্ট জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে ২২ আগস্ট পর্যন্ত চিকিৎসা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে অন্যান্য চিকিৎসার জন্য সিএমএইচ ভর্তি হন বিগত ২২ আগস্ট সেবা নেন। সেখানে বিগত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা নেন। এ বিষয়ে বাদী শাহবাগ থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন।