নারীর মুক্তির পথ হল শিক্ষিত, স্বাবলম্বী এবং সচেতন হওয়া: মৌলি আজাদ

শাহজালাল রোহান:শাহজালাল রোহান:
প্রকাশিত: ১২:০২ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৮, ২০২১

আজ ৮ মার্চ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ১৯৭৫ সাল থেকে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিনটি। এ উপলক্ষে সারাদিন ডট নিউজ-এর মুখোমুখি হয়েছেন লেখক মৌলি আজাদ। তিনি প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ কন্যা।

এ সময় নারী বিষয়ক নানা প্রশ্ন নিয়ে কথা হয় তার সাথে। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে নারীদের নানা সংগ্রাম, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী দিবস, নারী উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে নেওয়া পদক্ষেপ সমূহ, নারী অধিকার ও নারীর গৃহশ্রমের মূল্যায়ন, অফিসে কর্ম-পরিবেশসহ সমসাময়িক নারী সংশ্লিষ্ট আরও অনেক ইস্যু। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সারাদিন ডট নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার শাহজালাল রোহান;

সারাদিন ডট নিউজ: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী দিবস সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কি?

মৌলি আজাদ: প্রতিবছর নারী দিবসে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠা, আন্তর্জাতিক সংগঠন নানা রকম অনুষ্ঠান করে থাকে। প্রচার করা হয় লিঙ্গ সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন, উন্নয়নের মূলধারায় নারীদের সম্পৃক্ততা করার বিষয়। কিন্তু এ বিষয়টি যদি প্রতিবছর একদিন মাত্র পালিত না করে ঘরে-বাইরে প্রতিনিয়ত নারীর প্রতি শ্রদ্ধা , তার কাজের প্রশংসা ও তার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা হতো, তাহলে হয়তো নারীর প্রতি প্রকৃত সম্মান দেয়া হতো।

সারাদিন ডট নিউজ: নারীদের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে আর কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

মৌলি আজাদ: আমরা দেখছি যে বর্তমানে টপ টু বোটম নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে। তারপরে ও বলতে হয় নারীর চলার পথ এখনও মসৃণ হয়নি। এজন্য নারীর ঘরের মানুষ যারা তাদের নারীকে এগিয়ে যাওয়ার পথে পরিপূর্ণ সাপোর্ট দিতে হবে। নারী যদি কোনও ব্যবসার উদ্যোক্তা হতে চায়, তাহলে ব্যাংক/এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নারীর এ ধরণের স্বাধীন কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সাপোর্ট দিতে হবে। নারীবান্ধব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্ম ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।

Nagad

সারাদিন ডট নিউজ: অর্থনীতিতে নারীরা প্রতিনিয়তই জোরালো ভূমিকা পালন করছে একজন নারী হিসেবে এই সাফল্যকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

মৌলি আজাদ: অবশ্য ইতিবাচক। অর্থনীতিতে নারীর জোরালো ভূমিকার কথা আসলে প্রথমেই মনে পড়ে আমাদের গার্মেন্টস কর্মীদের কথা। কতটা ঝুঁকি নিয়ে তারা করোনাকালীন সময়ের প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। তারা পিপিই-তৈরি করে দেশে-বিদেশে সাপ্লাই দিয়েছে এবং আমাদের অর্থনীতি লাভবান হয়েছে। পোশাক শিল্পের সাথে জড়িত নারী সহ যে সকল নারীরা আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রেখে যাচ্ছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

সারা ডট নিউজ: আপনি কর্মক্ষেত্রে কি কি বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন?

মৌলি আজাদ: আমি কোন বাধার সম্মুখীন হইনি, তবে আমি কোন উদাহরণ নই। নারী কিন্তু কর্মক্ষেত্রের অনেক বেশি সিরিয়াস থাকে। নারীরা সাধারণত সৎ। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের কারণে পুরুষ সহকর্মীরা নারীকে সামনে ফোকাস করতে চায় না। তবে দক্ষ ও যোগ্য নারী পরিশ্রমের দ্বারা এ সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে পারে।

দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে নারীদের নানা সংগ্রাম, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী দিবস, নারী উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে নেওয়া পদক্ষেপ সমূহ, নারী অধিকার ও নারীর গৃহশ্রমের মূল্যায়ন, অফিসে কর্ম-পরিবেশসহ সমসাময়িক নারী সংশ্লিষ্ট আরও অনেক ইস্যু। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সারাদিন ডট নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার শাহজালাল রোহান;

সারাদিন ডট নিউজ: ভার্চুয়াল জগতে নারীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে, এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?

মৌলি আজাদ: নারীকে ভার্চুয়ালি কারও সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে খুব বেশি সচেতন হতে হবে। নারী মাত্রই আবেগপ্রবণ। আবেগের বসে স্বল্প পরিচিত কাউকে ছবি ডকুমেন্ট দেওয়া উচিত নয়। তবে হয়রানির শিকার হলেও নারী নিজেকে সবার থেকে লুকিয়ে রাখবে তা নয়, নারীর প্রথম কাজই হবে আইনের আশ্রয় নেয়া।

সারাদিন নিউজ: সমাজের বিদ্যমান সমস্যাগুলি থেকে নারীরা কীভাবে মুক্তি পেতে পারে?

মৌলি আজাদ: মুক্তির পথ হল নারীর শিক্ষিত হওয়া, স্বাবলম্বী হওয়া এবং সচেতন হওয়া।

সারাদিন ডট নিউজ: নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে আপনার পরামর্শ কি? আমাদের দেশে নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্র কতটুকু নিশ্চিত হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

মৌলি আজাদ: নারীবাদ কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে যেকোন প্রতিষ্ঠান যিনি প্রধান থাকেন সাধারণত পুরুষ-তাকে নারীর প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে হবে। নারীরা (যারা সরকারি চাকরিতে আছেন) আমাদের দেশে বর্তমানে মাতৃত্ব-কালীন ছুটি পাচ্ছেন। যা ইতিবাচক উদ্যোগ। অনেক প্রতিষ্ঠানে নারীর কাজের সুবিধার্থে-ডে কেয়ার সেন্টার ও করা হয়েছে। নারী কোনও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকা অবস্থায় যৌন নির্যাতনের শিকার হলে প্রতিষ্ঠানের ‘অভিযোগ কমিটিতে’ বর্তমানে অভিযোগ জানাতে পারে। তবে এখনও অনেক প্রতিষ্ঠান নারীকে পুরুষের চেয়ে কম বেতন দেওয়ার অভিযোগ আছে। নারীর জন্য কর্মক্ষেত্রে ভালো টয়লেটের ব্যবস্থা থাকে না। এরফলে নারীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়। অফিস সময়ের পরেও যদি নারীর কাজ করতে হয়, সেখানে যদি ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা না থাকে তবে নারীরা অসুবিধার সম্মুখীন হন। এসব সমস্যাগুলো দূর হলে নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্র ধীরে ধীরে গড়ে উঠবে। নারীবান্ধব প্রতিষ্ঠান হলে নারী যেহেতু সর্বোচ্চ অবদান রাখতে পারবেন আলটিমেটলি তার প্রতিষ্ঠানে লাভবান হবেন। ‌

সারাদিন ডট নিউজ: নারীরা প্রতিনিয়তই বিভিন্ন ধরণের নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, এই ক্ষেত্রে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে পুরুষের কাছে কি প্রত্যাশা করেন?

মৌলি আজাদ: পুরুষের কাছ থেকে আসলে এ বিষয়ে কোন প্রত্যাশা করি না। তবে যারা ছেলে সন্তানের মা-তারা যদি ছেলে শিশুকে ছোটো বেলা থেকে নারীকে সম্মান দিতে হবে-এ ধারণাটি তার মাথায় গেঁথে দেয়, তবে আশা করি, সে ছেলেটি পুরুষ হয়ে কখনোই নারী নির্যাতন করবে না।

সারাদিন ডট নিউজ: আপনাকে ধন্যবাদ।

মৌলি আজাদ: সারাদিন ডট নিউজকেও ধন্যবাদ।

ভিডিও:

সারাদিন/ ৭মার্চ/এএইচ