চা শ্রমিকদের ঘর করে দেওয়ার আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর, শুনেছেন কষ্টের কথা
চা শ্রমিকদের ঘর করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি বলেন, চা-শিল্প যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে। ঐতিহ্যবাহী চাশিল্পকে ধ্বংস হতে দেওয়া যাবে না। চা-শ্রমিকরা ভালোভাবে বাঁচলে এই শিল্প বাঁচবে। শ্রমিকদের সবাইকে ঘর করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভিডিও কনফারেন্সে চা-শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের এ আশ্বাস দেন।


অনুষ্ঠানে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চণ্ডীছড়া চা-বাগানের খেলার মাঠ থেকে জেলার ২৪টি চা-বাগানের শ্রমিকরাও ভিডিওকলে অংশ নেন। এ ছাড়া মৌলভীবাজার থেকে ভিডিওকলে অংশ নিয়েছেন ৯২টি চা-বাগানের শ্রমিকরা। এ ছাড়া সিলেট এবং চট্টগ্রাম থেকেও ভিডিওকলে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা।
এদিকে আজ চায়ের রাজ্যে এক ঐতিহাসিক দিন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো প্রধানমন্ত্রী অবহেলিত চা শ্রমিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। শুনেছেন তাদের দুঃখ ও কষ্টের কথা।
মতবিনিময় সভায় চা-শ্রমিকদের উদ্দেশে সরকার প্রধান বলেন, চা শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের সব মানুষের জন্য সরকার কাজ করছে । কথা মাথায় রেখে ওএমএস ও টিসিবি কার্যক্রম চালু করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। চা শ্রমিকদের ঘর করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, দেশের একটি মানুষও যেন কষ্টে না থাকে, ঠিকানাহীন না থাকে, গৃহহীন না থাকে সে লক্ষ্যেই কাজ করছে সরকার। দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা মেনে নেয়ায় চা শ্রমিকদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
চা-শিল্প যেন ধ্বংস না সেদিকে খেয়াল রাখতে মালিক-শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চা-শ্রমিকরা ভালো থাকলে এই শিল্প বাঁচবে।
অনুষ্ঠানস্থলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ পিপিএম, জেলা প্রশাসক মো. মজিবুর রহমান, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ, সিলেট জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, সিলেট মহানগর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে টানা ২০ দিন কর্মবিরতি পালন করেন চা-শ্রমিকরা। পরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ১৭০ টাকা মজুরিতে কাজে ফেরেন তারা।
দৈনিক মজুরি বাড়ানোর দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলন করে আসছিলেন দেশের ২৪১টি চা বাগানের সোয়া লাখ শ্রমিক। প্রথম চারদিন শ্রমিকরা প্রতিদিন দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন। এরপর ১৩ আগস্ট থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন শুরু করেন তারা।
এরপর ২৭ আগস্ট গণভবনে চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকের পর নতুন মজুরির ঘোষণা আসে। এরপর শ্রমিকরা নিজ নিজ বাগানে কাজে ফেরেন।
তবে চা-শ্রমিকরা তাদের সুখ-দুঃখ ও দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার দাবি জানান। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আজ এ ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়।