সহকর্মীকে কাউসার আলী অস্ত্র তাক করে গুলি ছোড়েন, কিন্তু কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক:নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ১০:০০ পূর্বাহ্ণ, জুন ৯, ২০২৪

রাজধানীর বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক জোন এলাকার ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে গুলিতে মনিরুল নামে এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এসময় ঘটনাস্থল থেকে কাউসার নামে অপর এক পুলিশ কনস্টেবলকে গুলশান থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনায়- চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। কাউসার আলী নামের কনস্টেবল তার সহকর্মী মনিরুল ইসলামকে কেন হঠাৎ করে এভাবে গুলিতে বুক ঝাঁঝরা করে দিলেন সেটা নিয়ে চলছে অনুসন্ধান। এ ঘটনায় জাপান দূতাবাসের গাড়িচালক সাজ্জাদ শেখও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, দায়িত্ব পালনরত দুই পুলিশ সদস্যের মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। এক পর্যায়ে কাউসার আলী অস্ত্র তাক করে গুলি ছোড়েন। সরাসরি বুকে গুলি লেগে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মনিরুল ইসলাম। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, কাউসার আলী মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ছিলেন।

শনিবার (৮ জুন) রাত ১২টার দিকে রাজধানীর বারিধারার ডিপ্লোম্যাটিক জোনে ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই সড়কে যান চলাচল।

ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে আসেন পুলিশের বিশেষ বাহিনী সোয়াট, গোয়েন্দা শাখাসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় আইজিপি বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণসহ সবকিছু শুনে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। তদন্তের আগে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।

এদিকে এ ঘটনায় ডিএমপির ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশার আরিফুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, কাউসার আলী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলেন। পাঁচ-ছয় দিন থেকে খুব চুপচাপ ছিলেন। অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলছিলেন না।

Nagad

এদিকে জানা গেছে, মনিরুল ইসলামকে গুলি করে ফিলিস্তিনি দূতাবাসের প্রধান ফটকের সামনে এসে দাঁড়ান কাউসার। তখন প্রধান ফটকে ২-৩ জন নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। তারা গুলির শব্দ শুনতে পেলেও তখন ধারণা করতে পারেননি যে, কাউসার তার সহকর্মীকে গুলি করে এসেছেন। গেটে দাঁড়ানো অবস্থায় কাউসারকে ফিলিস্তিনি দূতাবাসের নিরাপত্তারক্ষীরা জিজ্ঞেস করেন, মনিরুল কেন রাস্তায় পড়ে আছেন। তখন কাউসার উত্তরে বলেন, ‌‘শালা নাটক করতাছে। এমনি রাস্তায় পড়ে আছে।’ এ কথা বলে কনস্টেবল কাউসার দূতাবাসের বিপরীত পাশের রোডে চলে যান। এরইমধ্যে নিরাপত্তারক্ষীরা বুঝতে পারেন যে মনিরুলকে কাউসার গুলি করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তারক্ষী জানান, ঘটনা বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই কাউসারকে গ্রেপ্তার করেন তারা। তিনি বলেন, ঘটনার সময় আমরা দূতাবাসের ভেতরে ছিলাম। হঠাৎ রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে ৭-৮ রাউন্ড গুলি শব্দ শুনে আমরা বাইরে আসি। বাইরে আসার পর কনস্টেবল কাউসারকে দেখি দূতাবাসের প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আর একটু দূরেই পড়ে রয়েছে কনস্টেবল মনিরুল। তখন আমরা কাউসারকে জিজ্ঞেস করি, কী হয়েছে? তখন সে বলে, ‘শালা নাটক করতাছে, এমনি মাটিতে পড়ে রয়েছে’।

এদিকে রাতেই গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত মনিরুলের বড়ভাই মাহবুব। এই মামলায় কাউসারকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।