পাকিস্তানে ২৫ বছরের কার্যক্রম শেষে অফিস বন্ধ করছে মাইক্রোসফট
পাকিস্তানে ২৫ বছরের কার্যক্রম শেষে দেশটিতে স্থানীয় অফিস বন্ধ করে দিচ্ছে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট। প্রতিষ্ঠানটি শুক্রবার (৫ জুলাই) প্রযুক্তিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টেকক্র্যাঞ্চকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
মাইক্রোসফট জানায়, পাকিস্তানে তারা তাদের কার্যক্রমের ধরন পরিবর্তন করছে। এখন থেকে স্থানীয়ভাবে সরাসরি অফিস পরিচালনা না করে রিসেলার ও নিকটবর্তী অন্যান্য অফিস মারফত দেশটির গ্রাহকদের সেবা দেওয়া হবে।


এক বিবৃতিতে মাইক্রোসফট বলেছে, ‘এই পরিবর্তনের ফলে গ্রাহক চুক্তি বা সেবায় কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। আমরা ইতোমধ্যে বিশ্বের অনেক দেশে এ মডেল সফলভাবে অনুসরণ করছি। আমাদের গ্রাহকরাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবেন।’
সূত্র বলছে, পাকিস্তানে মাইক্রোসফটের মাত্র পাঁচজন কর্মী ছিলেন, যাদের কাজ ছিল মূলত পণ্য বিক্রি করা। দেশটিতে কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিট বা গবেষণা শাখা ছিল না, যেমনটি ভারত ও অন্যান্য বাজারে রয়েছে।
সম্প্রতি বৈশ্বিক পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে মাইক্রোসফট বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে, যা মোট কর্মীর ৪ শতাংশ। পাকিস্তান থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়া এ পুনর্গঠনেরই অংশ বলে জানিয়েছে দেশটির আইসিটি মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, গত কয়েক বছর ধরেই পাকিস্তানের লাইসেন্স ও চুক্তি ব্যবস্থাপনা স্থানান্তর করা হয়েছিল মাইক্রোসফটের আয়ারল্যান্ড অফিসে। আর স্থানীয় অংশীদারদের মাধ্যমেই সেবা দেওয়া হতো।
তবে তারা আশা প্রকাশ করেছে, ‘মাইক্রোসফটের এই কাঠামোগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়েও পাকিস্তানের গ্রাহক, ডেভেলপার এবং অংশীদারদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক অটুট থাকবে।’
মাইক্রোসফট পাকিস্তানের সাবেক প্রধান জাওয়াদ রহমান লিংকডইনে বলেন, ‘এটি শুধুই কোনো কর্পোরেট প্রত্যাহার নয়; এটি একটি অপ্রিয় বার্তা—আমাদের দেশের এমন পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যেখানে মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানও টিকে থাকতে পারছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেই ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিলাম, তার যথাযথ ব্যবহার হয়নি।’
এই ঘোষণার কয়েকদিন আগেই পাকিস্তান সরকার গুগল ও মাইক্রোসফটের সার্টিফিকেশন প্রদানের একটি বড় প্রকল্প চালু করে, যার মাধ্যমে ৫ লাখ যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা জানানো হয়। তবে মাইক্রোসফটের এই বিদায় সেই ঘোষণার বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জকে সামনে এনে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছর গুগল পাকিস্তানের শিক্ষা খাতে ১ কোটি ৫ লাখ ডলারের বিনিয়োগ করেছে এবং দেশটিকে ২০২৬ সালের মধ্যে ৫ লাখ ক্রোমবুক উৎপাদনের সম্ভাব্য বাজার হিসেবে বিবেচনা করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের মতো দেশ যেখানে বহুজাতিক কোম্পানির জন্য প্রধান আউটসোর্সিং গন্তব্যে পরিণত হয়েছে, পাকিস্তানে এখনো সেই সক্ষমতা তৈরি হয়নি।