‘স্টারলিঙ্ক’ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট এবং আমাদের অতি-সতর্কতা !

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৪:১৮ অপরাহ্ণ, মে ১৯, ২০২২

ইলন মাস্ক এর নতুন চমক ‘স্টারলিঙ্ক’স্যাটেলাইট প্রযুক্তির মাধ্যমে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার ঘোষণায় বিস্মিত হয়েছেন আমাদের মাননীয় ‘ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী’। কারণ ‘স্টারলিঙ্ক’কোন অনুমোদন ছাড়াই বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবসার ঘোষণা দিয়েছেন! ধন্যবাদ মাননীয় মন্ত্রী ঘটনা ঘটার আগেই আপনি সতর্ক হয়েছেন। ইতোমধ্যে বিদেশী অনেক অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমন- গুগল, নেটফ্লিক্স, ফেসবুক, অ্যামাজন, জি৫ সহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং সফলভাবে তাদেরকে বাংলাদেশে রেজিস্টার্ড বিজনেস প্রতিষ্ঠান গঠন করাতে এবং বাংলাদেশে ভ্যাট দেওয়াতে বাধ্য করেছেন। এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার।

তবে অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে- ‘গুগল, নেটফ্লিক্স, ফেসবুক, অ্যামাজন, জি৫, ইত্যাদি..’ এই ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোকে ইন্টারনেট গেটওয়ে এর মাধ্যমে খুব সহজেই ট্রেস করা যায়। কিন্তু ‘স্টারলিঙ্ক’স্যাটেলাইট প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহৃত ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে দেশিয় ইন্টারনেট গেটওয়ে এর মাধ্যমে ট্রেস করা হয়তো সম্ভব হবে না। এবং এখানে ব্যবহৃত স্যাটেলাইট ট্রান্সসিভার অ্যান্টেনাটি এত ছোট আকৃতির যে, কোন ব্যবহারকারী যদি এটি গোপনে ব্যবহার করে তাকেও ট্রেস করা সম্ভব হবে না।

আরও উল্লেখ্য যে, ‘BGAN’প্রযুক্তি নামে স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা আরও বহু বছর আগে থেকেই বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই ব্যবহৃত হচ্ছে। Inmarsat নামক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী এই সেবা দেওয়া হয়ে থাকে (যদিও তার ব্যান্ডউইথ অনেক কম), এর মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা, ভিডিও কনফারেন্স, লাইভ স্ট্রিমিং, স্যাটেলাইট ফোন ইত্যাদি সেবা দেওয়া হয়ে থাকে। দৃষ্টির অগোচরে থাকা সেই প্রযুক্তির কথা হয়তো অনেকেরই অজানা। তাই ‘BGAN’প্রযুক্তির ব্যবহার যেহেতু নজরে আসেনি তাই ‘Starlink’ প্রযুক্তির ব্যপারটিও গোপনে দৃষ্টির আড়ালে ব্যবহৃত হতে পারে।

তাই সহজ উপায় হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব, স্টারলিঙ্ক এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সেবা নেওয়ার সময় যখন স্টারলিঙ্ক এর পেমেন্ট গেটওয়েতে কোন পেমেন্ট হবে তখনই যেন তার ভ্যাট এবং অন্যান্য চার্জ কেটে রাখা হয়, যেমনটি করা হয় গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজন ইত্যাদির ক্ষেত্রে। কারণ উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার থামিয়ে দেওয়া মানে প্রযুক্তির জগত থেকে নিজেদেরকে পিছিয়ে রাখা। নব্বইয়ের দশকে অপটিক্যাল ফাইবার ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের দেশ গোটা ইন্টারনেট দুনিয়া থেকে অনেক পিছিয়ে পড়েছিল। তাই কোন কারণে স্টারলিঙ্ক প্রযুক্তি যদি ব্যান করা হয় তাহলে সেটা এই উন্নত প্রযুক্তির যুগে চরম বোকামি।

তবে উল্লেখ্য যে, বিদেশি প্রযুক্তি দোষ গুন বিচার না করে আমাদের নিজেদের বিকল্প প্রযুক্তি নিয়ে ভাবাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এখন আমাদের সেই সক্ষমতাও আছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর মাধ্যমেই প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ দেশব্যাপী ইন্টারনেট সেবা দেওয়া সম্ভব কিন্তু গত ৩ বছরেও সেই ব্যবস্থা হয়নি। তাই যতদ্রুত সম্ভব বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবস্থা শুরু করা উচিত।

আরও একটি বিষয় সহজেই আন্দাজ করা যায় তাহলো- স্টারলিংক আমাদের দেশে জনপ্রিয় হতে হয়তো আরও একটু সময় লাগবে কারণ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে গেলে ব্যবহারকারীকেও হতে হবে কিছুটা প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন। যে ব্যবহারকারী স্টারলিংক ইন্টারনেট ব্যবহারে পারদর্শী হবে সে একইভাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমেও (যদি ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু হয়) ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে। কারণ ব্যবহারকারীর প্রান্তে ‘স্টারলিঙ্ক ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’দুই পদ্ধতিই খুব কাছাকাছি হবে।

Nagad

তবে এর চেয়েও সহজ পদ্ধতি হচ্ছে ‘ফাইভ-জি’প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত ইন্টারনেট সেবা চালু করা, সেক্ষেত্রে স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা ‘ফাইভ-জি’ প্রযুক্তির কাছে মার খাবে নিশ্চিত। কারণ ‘ফাইভ-জি’ এর ডেটা আদান-প্রদান ক্ষমতা স্যাটেলাইট প্রযুক্তির মতোই। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিছুটা বেগ পেতে হবে ‘ফাইভ-জি’প্রযুক্তিতে, কিন্তু এই সহজ ব্যবহার প্রক্রিয়ার কারণে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করবে।

দেশের সকল জেলা ও মফস্বল অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও আজ পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা প্রদান সম্ভব হয়নি। এখন পর্যন্ত দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা পাওয়ার জন্য একাধিক ইন্টারনেট সংযোগ নেওয়া হয় তারপরেও রক্ষা হয় না। তাই স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা নিঃসন্দেহে জনপ্রিয়তা লাভ করবে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা চান এমন ব্যবহারকারীদের কাছে। তাই বিদেশি স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা দেশে প্রবেশের আগেই দেশিয় স্যাটেলাইট প্রযুক্তি কিংবা ফাইভ-জি সেবা চালু করে আমাদেরকে আগে থেকেই অভ্যস্ত করে ফেললে হয়তো তখন বিদেশি সেবা আমাদেরকে সহজে আগ্রহী করানোর সুযোগ পাবে না।

লেখক : সালাউদ্দিন সেলিম, হেড অব ব্রডকাস্ট অ্যান্ড আইটি, সময় টেলিভিশন।