‘হাওয়া’ সিনেমা নিয়ে বিতর্ক দুঃখজনক: পরিচালক সুমন

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৪:৪৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৫, ২০২২

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরপত্তা আইন ২০১২-এর লঙ্ঘনের অভিযোগে ‘হাওয়া’ সিনেমার পরিচালকের বিরুদ্ধে ২০ কোটি টাকার মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া সিনেমাটি প্রদর্শন বন্ধের আইনি নোটিশও দেওয়া হয়েছে।

এনিয়ে সিনেমাটির পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালক জানিয়েছেন, ‘হাওয়া’ সিনেমায় একটি শালিক পাখি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, সেটি খুব ‘দুঃখজনক’।

বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গণমাধ্যমকে সিনেমাটির পরিচালক এই মন্তব্য করেন। এদিন নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলীদের ‘বাংলা চলচ্চিত্র বা কনটেন্টে সেন্সরশিপের খড়্গ গল্প বলার স্বাধীনতা চাই’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

এ সময় একান্ত আলাপচারিতায় মেজবাউর রহমান সুমন বলেন, ছবিতে খাঁচার ভেতরের পাখিটা আমি অবমুক্ত করে দিয়েছি। সিনেমা আর রিয়েলিটি এক নয়। এটা খুব দুঃখজনক। সামনে আরেকটা সিনেমা তৈরি করব। সেই সময় দেখা যাবে আরও দশটা সমস্যা তৈরি করবে। তখন দেখা যাবে আমি নিজে খাঁচার ভেতরে ঢুকে যাচ্ছি!

পরিচালক সুমন আরও বলেন, আমাদের এই জায়গা থেকে বের হতে হবে। হাওয়ার মতো একটি চলচ্চিত্র নিয়ে এমনটা আমরা আশা করি না। এটি বিব্রতকর। শিল্পের প্রতি দায় থেকে আমরা কাজ করি, অনেকের শ্রম ও মেধা ব্যয় হয়।

শালিক বিতর্ক নিয়ে ‘হাওয়া’র পরিচালক বলেন, “হাওয়ার পাখিটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ছবির শুরুতে ডিসক্লেইমারে আমরা সুস্পষ্ট উল্লেখ করেছি সেটা। পাখিটির দৃশ্য ধারণের পর আমরা তাকে প্রকৃতিতে মুক্ত করে দিয়েছিলাম। আর নৌকায় যে উড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য দেখিয়েছি সেটা কম্পিউটার গ্রাফিক্সের মাধ্যমে নির্মাণ করা।”

Nagad

এদিকে, বন্যপ্রাণী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত ‘হাওয়া’ সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। গত ২২ আগস্ট (সোমবার) সেন্সর বোর্ডকে এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানকে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, “হাওয়া’ সিনেমায় একটি শালিক পাখিকে আটকে রাখা এবং শেষ পর্যায়ে সেটিকে পুড়িয়ে খাওয়ার দৃশ্য নিয়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে নোটিশটি পাঠিয়েছি আমরা।”

হাসান শাহরিয়ার বলেন, “এই সিনেমায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে। এতে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবে যে, বন্যপ্রাণী খাঁচায় আটকে রাখা যায়। তাই আমরা মনে করি, এই সিনেমার প্রদর্শন শিগগিরই বন্ধ হওয়া উচিত। আশা করি, চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড বিষয়টি বুঝবে।”

নোটিশপ্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও হাওয়া সিনেমার ছাড়পত্র বাতিল করে বাংলাদেশে এবং দেশের বাইরে প্রচার, সম্প্রচার ও প্রদর্শন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি সেন্সরবোর্ড পুনঃগঠন করে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের সদস্য, আইনজীবী ও পরিবেশবিদদের সেন্সর বোর্ডের সদস্য হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে।

নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে কোন সিনেমার ছাড়পত্র প্রদানের পূর্বে চলচ্চিত্রটিতে যেন ভায়লেন্স পূর্ণ খুনের দৃশ্য, অশ্লীল গালি এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন-২০১২ এর কোন ধারার লঙ্ঘন না হয় সেই ব্যাপারে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতে হবে।

এর আগে গত ১১ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা শাখায় ‘হাওয়া’ সিনেমাটি দেখেন বন বিভাগের অপরাধ দমন ইউনিটের চার সদস্যবিশিষ্ট একটি দল। তারা জানান, এতে বন্যপ্রাণী আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। পরবর্তীতে নির্মাতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।

এরপর গত ১৭ আগস্ট ‘হাওয়া’র নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের নামে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে ২০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করেন বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নারগিস সুলতানা। মহানগর দায়রা জজ আদালতে বাদী হয়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ এর ৩৮ (১-২), ৪১ ও ৪৬ লংঘনের অভিযোগে মামলাটি করেন তিনি। সাক্ষী করা হয়েছে তদন্ত কমিটিতে কাজ করা অন্য তিন সদস্য আবদুল্লাহ আস সাদিক, অসীম মল্লিক ও রথিন্দ্র কুমার বিশ্বাসকে।

‘হাওয়া’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, নাজিফা তুষি, শরিফুল রাজ, সুমন আনোয়ার, নাসির উদ্দিন খান, সোহেল মণ্ডল, রিজভী রিজু, মাহমুদ হাসান ও বাবলু বোস।

সারাদিন/২৫ আগস্ট/এমবি