কারখানার বিষাক্ত পানিতে নষ্ট হচ্ছে ধানের জমি, মরে যাচ্ছে মাছ
গাজীপুরের শ্রীপুরে সাটিয়াবাড়ী এলাকার ডার্ড কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার বর্জ্যে ও দূষিত পানি আশপাশের কৃষি ধানের জমিতে ফেলায় হাজার হাজার একর ফসলী জমি নষ্ট হচ্ছে। আশপাশের খাল ও বিলের পানি পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, মরে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ। কারখানার ঝুট বয়লারের বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় এলাকাবাসী শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিষাক্ত পানির কারনে আবাদি জমিতে ফসল ফলানো যাচ্ছে না। ক্যামিকেল মিশ্রিত বিষাক্ত পানির কারনে চর্ম ও হাঁপানিসহ শিশু এবং স্থানীয় বাসিন্দার বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায় ,ধলা দিয়া এলাকার কৃষক মফিজ উদ্দিন এসবের প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় ২০ জন বাসিন্দা ও কৃষকের স্বাক্ষর সম্বলিত দরখাস্ত গজাীপুর পরিবেশ অধিদপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ওই অভিযোগের অনুলিপি স্থানীয় সাংসদ, জেলা প্রশাসক (ডিসি), শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর দেওয়া হয়।
কৃষক মফিজ উদ্দিন জানান, ডার্ড কম্পোজিট কারখানা স্থাপনের পর থেকেই পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে বয়লারের বিষাক্ত কোলো ধোঁয়ার কারনে পরিবেশ দুষণ এবং দূষিত পানি আশপাশের খাল-বিলে সরবরাহ করায় পানি পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, মরে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। এক হাজার একর কৃষি জমিতে ফসল ফলানো যাচ্ছে না।
ধলাদিয়া (পশ্চিমপাড়া) এলাকার কৃষক কামাল হোসেন বলেন, ডার্ড কম্পোজিট কারখানার পঁচা পানি পড়ে বিলের পানি নষ্ট হয়ে মাছ মরে গেছে। বিলে এখন আর মাছ পাওয়া যায় না। পঁচা পানির কারণে বিলে মাছ ধরতেও পারছেন না তারা। তিনি বলেন, আগে বিঘা প্রতি ৩০/৩৫ মন ধান পাওয়া যেত। ফসলী ক্ষেতের পানি পচে যাওয়ায় এখন ১৫ মনের বেশি ধান উঠানো সম্ভব হয় না।
ধলাদিয়া (দক্ষিনপাড়া) এলাকার কৃষক আব্দুল মতিন ও হেলাল উদ্দিন জানান, যখন ধানে ফুল আসে তখন ধান গাছের গোড়া পচে মরে যায়। দেশীয় মাছ টেংরা, পুঁটি, কই ও শিং মাছ এখন বিলে নেই বললেই চলে।
স্থানীয় ক্ষুদ্র ববসায়ী ও দোকানিরা জানান, ডার্ড কম্পোজিট কারখানার বর্জ্যর কারণে বিলের পানি পঁচে গেছে। পঁচা পানির গন্ধে বাজারে ও দোকানে টিকা যায় না। মসজিদে নামাজ পড়তেও সমস্যা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আগে বিলে শিশুসহ স্থানীয়রা পারুলি নদীতে (ধলাদিয়া দক্ষিন পাড়া) গোসল করতো, বিভিন্ন কাজে পানি ব্যবহার করতো, গরু বাছুর গোসল করাতো। কিন্তু ডার্ড কম্পোজিট কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যর কারণে পানি পঁচে যাওয়ায় কোনো কাজে আসছে না নদীর পানি। চরম বিপাকে আর ভোগান্তিতে আছে এ এলাকার মানুষ। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী পরিবেশ অধিদপ্তরে এবং স্থানীয় প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রতি কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওই কারখানা থেকে স্থানীয় বিন্নাইদ ব্রীজর নিচে বড় পাইপ দিয়ে ফসলী জমিতে পড়ছে কারখানার বিষাক্ত কালো পানি। স্থানীয়রা বলেন, ডার্ড কম্পোজিট কারখানার পাইপ দিয়ে বিষাক্ত পানি বের হয়। কারখানার বর্জ্য ও পানি ফসলী জমিতে ফেলার কারনে ফসল ফলানো যাচ্ছে না। দূষিত হচ্ছে আশপাশের খাল-বিলের পানি।
ডার্ড কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার উর্ধ্বতন ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আকাশ জানান, এসব বিষয়ে কারখানার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার (হেড অফিসের) অনুমতি ছাড়া কোন বক্তব্য দিতে পারব না। তিনি সাংবাদিকেদর হেড অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
রাজাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসিনা মমতাজ বলেন, আমি গত ৫ মাস আগে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নিয়েছি। আমি নিজেও সিএনজি দিয়ে আসা যাওয়ার সময় পচা পানির দুর্গন্ধ নাকে রুমাল দিয়ে চলাফেরা করতে হয়। ডার্ড কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার বর্জ্যে ও দূষিত পানি আশপাশের কৃষি জমিতে ফেলায় ফসলী জমি নষ্ট হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। আপনারা (সাংবাদিকেরা) বলেছেন আমি খোঁজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলব।
গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নয়ন মিয়া জানান, ধলাদিয়া এলাকার কৃষক মফিজ উদ্দিন সাটিয়াবাড়ী এলাকার ডার্ড কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার বর্জ্যে ও দূষিত পানির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।