‘আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষায় গ্র্যাজুয়েটদের দক্ষ হতে হবে’
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি বলেছেন, ‘আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষায় গ্র্যাজুয়েটদের দক্ষ হতে হবে। গ্র্যাজুয়েটদের এক থেকে দুই শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক হতে পারে, কিন্তু বাকিরা দক্ষতা না থাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ছে।’
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা বর্হিবিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজেদের আরো বেশি করে বিকশিত করার জন্য একাধিক ভাষা শিক্ষা নেওয়ার কথা বলেন। নীতি ও নৈতিকতার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান কখনো বৃথা যায়না। একটি সুশৃঙ্খল রাষ্ট্র, সমাজ ব্যবস্থার জন্য ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিকতার চর্চার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্ত ৭৫ এ জাতির জনককে নির্মমভাবে হত্যার পর এক শ্রেণীর স্বার্থবাজ মানুষ ইসলাম ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু করে। যা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে। ধর্ম মানে অরাজকতা নয়। ইসলাম কখনও অরাজকতাকে প্রশ্রয় দেয় না।
রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের সীতাকু- উপজেলার কুমিরায় অবস্থিত আর্ন্তজাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) এর পঞ্চম সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসাবে সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সমাবর্তন বক্তৃতা প্রদান করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আইনুন নিশাত। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইআইইউসি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী এমপি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য বিশ্বজিৎ চন্দ।
গ্র্যাজুয়েশন প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া শিক্ষা বা ডিগ্রী নিয়ে বসে থাকলে চলবেনা। ডিগ্রী অর্জন সব কিছু নয়, নীতি নৈতিকতা শিক্ষাই প্রধান। কর্মক্ষেত্রে সময়ের চাহিদার সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তত করতে হবে। শিক্ষিত হয়ে আত্মঅহমিকা ত্যাগ করতে হবে। কোন কর্মই ছোট নয়। দেশে ও বিদেশে প্রতিটি স্থানে নিজেদের কর্মপোযোগি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বিশ্ব নাগরিক হওয়ার লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বিষয় ভিত্তিক দক্ষতা অর্জন করতে হবে। প্রতিযোগিতা মূলক এই বিশ্বে টিকে থাকতে হলে স্কীল বেইজ প্রশিক্ষনে প্রশিক্ষিত হতে হবে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ইসলাম মানে মওদুদীবাদ নয়, আমরা ইসলামের মূল আদর্শ ও অনুসাশন থেকে সরে যাচ্ছি। ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করলে কিভাবে সমাজ ক্ষতিগ্রস্থ হয় সেটা বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী হিসাবে তা পরবর্তীতে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। আর সে কারণেই তিনি তাঁর রাষ্ট্র চিন্তায় ধর্মনিরপেক্ষতা সংযুক্ত করেছিলেন। ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়।
প্রফেসর ইমেরিটাস ও ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আইনুন নিশাত গ্র্যাজুয়েশন প্রাপ্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, আজ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ শেষ হলেও জীবনের পাঠ শুরু। শিক্ষার শেষ নেই, বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে নিজেকে বিশেষ ভাবে সক্ষম বা বিষয় ভিত্তিক পারদর্শী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার মাধ্যমে জীবনকে উপভোগ করুন। নিজে বিষয় ভিত্তিক পারদর্শী হলে আনন্দ পাওয়া যায়।
ড. আইনুন নিশাত বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি হচ্ছে ইসলাম ভিত্তিক জ্ঞান। ইসলাম কিংবা যেকোন ধর্ম মানুষকে সৎপথে চলতে প্রতিবেশিকে ভালবাসতে, গুরুজনকে সেবা করতে এবং সমাজ ও দেশের সেবা করতে শিখিয়েছে। তথাকথিত আধুনিকায়নের নামে সমাজ কেমন যেন বদলে যাচ্ছে।
তিনি বলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইথিকস’ বিষয়ে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। আধুনিক সময়ে সমাজে ইথিকস কর্মপন্থার বড়ই অভাব। আজকে লজ্জার সাথে বলতে হচ্ছে দেশের প্রতিটি পেশায় সততা ও ইথিকাল ব্যবহারের বড়ই অভাব। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ ব্যাপারে তেমন কিছু করছে বলে আমার জানা নেই। এই বিশ্বিবিদ্যালয় যদি এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ভুমিকা পালন করে, একজন নাগরিক হিসেবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে এবং আমি বিশ্বাস করি সমগ্রজাতি বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন আইআইইউসি’র উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ, উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মছরুরুল মওলা, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির, শরীয়াহ ও ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. শাকের আলম শওক, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আকতার সাঈদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তনে মোট ১৫ হাজার ৩৬১ জনকে সনদ বিতরণ করা হয়। এদের মধ্যে স্মাতক পর্যায়ে ৯ হাজার ৪৫৯, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৫ হাজার ৯০২ জনকে। চ্যান্সেলর স্বর্ণ পদক দেওয়া হয় ৩৬ শিক্ষার্থীকে। এছাড়া ভাইস চ্যান্সেলর এওয়ার্ড দেওয়া হয় ১৩৭ জন শিক্ষার্থীকে।
আইআইইউসি এই সমাবর্তনে প্রথমবারের মতো প্রবর্তন করেছে বোর্ড অব ট্রাস্টি চেয়ারম্যান স্বর্ণ পদক। প্রথমবারের শরীয়াহ অনুষদের শিক্ষার্থী জোবাইদুন নাহার পান্নাকে এ পদক দেওয়া হয়।