ঠাকুরগাঁওয়ে ভুট্টার ডাঁটায় ঝুলছে ঝিঙে

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ৭:০৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২

ভুট্টার গাছ থেকে ফসল ভুট্টা তোলা হয়ে গেছে। কিন্তু ভুট্টা তোলার পরে জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ভুট্টার গাছে ঝুলছে ঝিঙে গাছের লতাপাতা ও ঝিঙে। এ যেন এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করার মতো।

এমনি দৃশ্য দেখা গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের বিরাশি গ্রামের ৬০ হেক্টর আবাদি জমিতে। এভাবে ভুট্টা ও ঝিঙের সমন্বিত চাষ করে লাভবান হয়েছেন দুই শতাধিক কৃষক।
সচরাচর ঝিঙে চাষিরা আগে ঝিঙে চাষে ব্যবহার করতো বাঁশের কঞ্চি বা বাঁশের তৈরি মাচা বা খুঁটি। কিন্তু এখন তার বিপরীতে অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করে রাণীশংকৈল উপজেলার কৃষকরা, ঝিঙে গাছের লতা-পাতা মাটিতে গড়াগড়ি না খায় সেজন্য মাচা বা খুঁটি হিসেবে ভুট্টার গাছকেই ব্যবহার করছেন। এতে যেমন খরচ কম হচ্ছে তেমনি ভালবান হচ্ছেন কৃষকরা।

লেহেম্বা ইউনিয়নের বিরাশি গ্রামের ঝিঙে চাষিরা জানান, ভুট্টার ক্ষেতে এক দেড় মাসের মধ্যে ভুট্টা গাছের পাশে ঝিঙের বীজ রোপণ করেন তারা। ভুট্টার ফসলের পরিচর্যা আর সেচ দিয়েই ঝিঙে গাছও বড় হতে থাকে। ভুট্টার মোচা গাছ থেকে ভেঙে নেওয়ার পর গাছ পরিত্যক্ত অবস্থায় থেকে যায় জমিতে। অন্যদিকে ভুট্টা গাছের ডাঁটায় ঝিঙে গাছের লতাপাতা বেয়ে উঠে। এভাবেই ভুট্টার গাছগুলো ঝিঙে গাছের খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করেন তারা। এতে অতিরিক্ত সার বা সেচ কোনটাই লাগে না। শুধু মাত্র পোকামাকড় দমনে জন্য কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়।

কৃষকেরা আরও জানায়, ‘ভুট্টা চাষের পর আমরা আগাম আলু চাষি করি। এবার কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে দুই বিঘা জমিতে ভুট্টার ডাঁটায় ঝিঙে চাষ শুরু করেছি। এ পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকার ঝিঙে বিক্রি করেছি। ভুট্টা তুলে নেওয়ার পরে এবং আলু রোপণের জমি প্রস্তুত করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত জমি থেকে ঝিঙে তুলে বাজারে বিক্রি করা যায়। এর আগে আগাম আলু চাষ করার জন্য জমি কিছু দিন এমনিতে পরে থাকতো। এখন ভুট্টার আবাদের সঙ্গে ঝিঙে চাষ করায় আমাদের খরচ কম হচ্ছে ও আমার আর্থিকভাবে বেশ লাভবানও হচ্ছি।,

রানীশংকৈল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, উপজেলার দুই শতাধিক কৃষক ৬০ হেক্টর জমিতে অভিনব এ পদ্ধতি ব্যবহার করে ঝিঙে চাষ করছেন। এ পদ্ধতিতে ঝিঙে চাষ করলে খরচ খুবই কম হয়। এতে স্বল্প খরচে এক জমিতে দুই ফসলের আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। কৃষকরা আরও জানান, গত চার বছর ধরে ভুট্টার সাথী ফসল হিসেবে ঝিঙে আবাদ করায় এক খরচেই দুটি ফসল পাওয়া যাচ্ছে। ঝিঙে চাষের জন্য আলাদা কোনো খরচ লাগছে না। ফলে এই পদ্ধতিতে ঝিঙে চাষ করে একদিকে যেমন পরিবারের সবজির চাহিদা পূরণ হচ্ছে, অন্যদিকে এসব বাজারে বিক্রি করে বেশ আয়ও হচ্ছে তাদের।

রানীশংকৈল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ জানান, ‘জানা মতে একমাত্র রাণীশংকৈল উপজেলায় ভুট্টার ডাঁটা ঝিঙের মাচা বা খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছেন কৃষকেরা। লেহেম্বা ব্লকের বিরাশিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে ৬০ হেক্টর জমিতে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০ মণ ঝিঙে তুলে বাজারজাত করছে চাষিরা। এই পদ্ধতিতে ঝিঙে চাষে আমরা কৃষকদের পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা করছি।,

Nagad