নীল ছবির যৌনদৃশ্যে তারকার মুখ লাগানো! শিকার হতে পারেন আপনিও

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ১:৫৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৪, ২০২২

প্রযুক্তি এগিয়ে গিয়েছে অনেক দূর। এই প্রযুক্তির বিভিন্ন ফিচার কাজে লাগিয়ে প্রতারক চক্রসহ সক্রিয় হ্যাকাররা। সম্প্রতি ‘ডিপফেক’ প্রযুক্তির সাহায্যে পর্ন ছবির অভিনেতা-অভিনেত্রীদের শরীরে সাঁটিয়ে দেওয়া হচ্ছে তারকাদের মুখ। বদলে যাচ্ছে হাবভাব থেকে চলনবলন। দর্শকরা উপভোগ করছেন সেই দৃশ্যগুলো! ভাবছেন-এই তারকারও এগুলো করতে পারে।

আদতে এগুলো শিকার আপনিও হতে পারেন। চোখ, মুখ, হাবভাব থেকে কণ্ঠস্বর- সবই তারকার। নীল ছবিতে তার যৌনদৃশ্য উপভোগ করছেন দর্শক। দেখে অবাক হচ্ছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, পর্ন ছবির দুনিয়ায় ‘ডিপফেকে’র হাত ধরে ‘তারকাদের সেক্স টেপ’-এর রমরমা ব্যবসা চলছে। দর্শকদের মধ্যে তা দেখার প্রবণতাও বাড়ছে। আশঙ্কার কথা, তারকাদের ছেড়ে ‘ডিপফেকে’র শিকার হতে পারেন ভিড়ে মিশে থাকা আমজনতাও। এমনকি আপনিও।

কিন্তু ‘ডিপফেক’ প্রযুক্তি কী, যাকে হাতিয়ার করে মুনাফা কামাচ্ছে অসংখ্য পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইট। সহজ ভাবে বললে, ‘ডিপ লার্নিং’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে সমস্ত ভুয়া ভিডিও তৈরি করা হয়, সেটি হলো ‘ডিপফেক’। কারও মুখের অভিব্যক্তি খুঁটিয়ে পড়ে ফেলতে পারে এটি। কণ্ঠস্বরও চিনে নিতে পারে। সে সব বিশ্লেষণ করে তা অন্য কারও মুখে বসিয়ে দেয়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, ‘ডিপফেক’ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিপুল মুনাফা কামাচ্ছে বহু পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইট। এমনই একটি ওয়েবসাইটে নাকি প্রতি মাসে ঢুকছে এক কোটি তিন লাখেরও বেশি মানুষ। এই ‘ডিপফেক’ প্রযুক্তি ধারালো হওয়ায় আরও একটি আশঙ্কা বাড়ছে। তারকার মুখ ছাড়াও পর্ন ছবিতে ব্যবহার করা হতে পারে সাধারণ কোনো নারী-পুরুষের মুখও।

বিবিসির একটি তথ্যচিত্রে এমনই আশঙ্কার কথা শোনানো হয়েছে। নীল ছবিতে ‘ডিপফেকে’র যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে ‘ডিপফেক পর্ন: কুড ইউ বি নেক্স?’ নামে ওই তথ্যচিত্রে। সেই সঙ্গে দর্শকদের ভয়ের কথা শুনিয়েছে ওই তথ্যচিত্রটি। তারকাদের ‘শিকারে’র পর এবার আমজনতাকেও নিশানা করতে পারে পর্ন ইন্ডাস্ট্রি!

ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে করা ছবি। এভাবে ভিডিও করা হয়। সংগৃহীত ছবি

ওই তথ্যচিত্রের দাবি, পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইটের দেখানো ‘সেক্স টেপে’ কোনো তারকার মুখ দেখতে চান, সে অনুরোধ করতে পারেন দর্শকেরা। তথ্যচিত্রের উপস্থাপক জেস ডেভিসকে এমন বহু ‘ডিপফেক’ ওয়েবসাইটের সুলুকসন্ধান দিয়েছেন এর সাংবাদিক জেনিফার স্যাভিন।

Nagad

এ হেন সাইটগুলোতে কোন তারকার চাহিদা বেশি? সংবাদমাধ্যমে জেনিফার বলেন, ‘দুনিয়াজোড়া বহু তারকাই রয়েছে। তবে দর্শকদের অনুরোধে বেশ কয়েকটি নাম বার বারই ঘুরেফিরে আসে।’ যদিও তাদের নাম খোলসা করেননি জেনিফার।

এ ধরনের প্রবণতা যে বাড়ছে তার উদাহরণও দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। তাদের দাবি, একটি জনপ্রিয় পর্ন সাইটে আড়াই লাখ সদস্য নিজেদের পছন্দের তারকাদের ‘সেক্স টেপ’ দেখার অনুরোধ করতে থাকেন। তাদের চাহিদা মেটাতে ‘ডিপফেকে’র হাত ধরেন পর্ন সাইটের মালিকরা।

ব্রিটিশ তথ্যচিত্রে এমনই এক জনপ্রিয় পর্ন সাইটের মালিক মুখ খুলেছেন। যদিও নিজের নামপরিচয় প্রকাশ করেননি তিনি। তার কথায়, ‘এই মুহূর্তে আমাদের সাইটে এ ধরনের ২০ হাজারেরও বেশি ভুয়া পর্ন ভিডিও রয়েছে।’ ওই সাইটটিতে কেবল মাত্র তারকাদের ভুয়া ভিডিও তৈরি করা হয়।

‘ডিপফেকে’র ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন ওই আমেরিকান সাইটের মালিক। তার দাবি, ‘‘এই প্রযুক্তি আরও উন্নত হবে। তখন আসল-নকল ভিডিওর ফারাক বোঝাটা সহজ হবে না। ভবিষ্যতে এমন একটা সময় আসবে, যখন আমাদের মধ্যে যে কেউ ডিপফেকের শিকার হবে।’

তারকার মুখের বদলে শিগগিরই হয়তো সাধারণ মানুষের মুখ বসানো হতে পারে। পর্ন ছবিতে যা দেখে ফেলতে পারেন অগণিত মানুষ। এই বিপদ সত্ত্বেও নিজের যুক্তিতে অটল ওই সাইটের মালিক। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, একে আসল ভিডিও বলে না চালালেই হলো। এ নিয়ে তারকার অনুমতিরও প্রয়োজন নেই। এটা তো সবই কাল্পনিক। বাস্তব নয়!’ সূত্র: আনন্দ বাজার