লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাডুবিতে দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু, গ্রেপ্তার ৬

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৬:৪১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০২২

ছবি- সংগৃহীত

লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা থেকে পড়ে নিখোঁজ হয়ে মারা যান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক জিএস দুরন্ত বিপ্লব। এই ঘটনার পাঁচ দিন পর বুড়িগঙ্গা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় অবহেলার কারণে মর্নিং সান-৫ লঞ্চের ছয় কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের কোতয়ালী জোনাল টিম।

রোববার (২০ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান এইসব তথ্য জানান।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- লঞ্চের প্রথম মাস্টার হাফেজ মো: সাইদুর রহমান (৩৮), দ্বিতীয় মাস্টার আলামিন (৩৫), ইঞ্জিনচালক মো: মাসুদ রানা (৩৮), ইঞ্জিনচালক ইমন হোসেন (২৩), সুকানি মো: সালমান (২১) ও লঞ্চের সুপারভাইজার ইব্রাহীম খলিল (২৯)।

ডিসি মশিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, গত ০৭ নভেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র এবং ছাত্রলীগের সাবেক জিএস দুরন্ত বিপ্লব ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানার কোনাখোলা এলাকা থেকে জিনজিরা সোয়ারিঘাট হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকার উদ্দেশে রওনা দেন। পথে তিনি নিখোঁজ হন। পাঁচ দিন পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার বুড়িগঙ্গা নদীতে একজনের মরদেহ ভেসে ওঠে। সেদিন রাতে মরদেহটি নিখোঁজ দুরন্ত বিপ্লবের বলে নিশ্চিত করেন তার স্বজনরা। এ ঘটনায় প্রথমে একটি সাধারণ ডায়েরি এবং পরে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

ওই ঘটনায় পিবিআই ও ডিবি লালবাগ বিভাগ ছায়া তদন্ত করছিল। আমরা ওই ঘটনায় ভিকটিমের আত্মীয়স্বজন, বন্ধু ও স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলি। সংশ্লিষ্ট এলাকার লঞ্চ, নৌকা, খেয়াঘাটের ইজারাদার ও মাঝিদের সঙ্গে কথা বলি। বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ভিকটিমের মুভমেন্ট সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়।

মামলার ছায়া তদন্ত চলাকালে ডিবি লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম ঢাকা মহানগরী এবং কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত মর্নিং সান-৫ লঞ্চের ছয় কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে।

Nagad

ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে আমরা নানাভাবে জানার চেষ্টা করেছি, দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু রাজনৈতিক কারণে নাকি শত্রুতাজনিত। আমরা কোনো শত্রুর সন্ধান পাইনি। আমরা জেনেছি তিনি নির্ঝঞ্জাট মানুষ ছিলেন। যদিও তার পারিবারিক ঝামেলা ছিল। তিনি কেরানীগঞ্জের কোনাখোলা এলাকায় একা থাকতেন। তার নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করতেন। সোনামাটিতে একটি এগ্রোফার্ম পরিচালনা করতেন তিনি। সেখানকার বিভিন্ন পণ্য তিনি প্রতিদিনই ঢাকায় পাঠাতেন।

নিখোঁজের দিন দুরন্ত বিপ্লব তার কর্মচারী হেলালকে সঙ্গে নিয়ে বিকেল ৪টা ৪৪ মিনিটের দিকে কুরিয়ার সার্ভিস বয় গোলাম রাব্বানীর কাছে কিছু সবজির প্যাকেট হস্তান্তর করে বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটের দিকে নূর ফিলিং স্টেশনের কাছাকাছি রাস্তায় ঢাকা থ ১১-৫৮৭৩ সিএনজি অটোরিকশায় ওঠেন।

অটোরিকশাচালক বিল্লালের ভাষ্য মতে, সন্ধ্যা ৫টা ১৫ থেকে ২০ মিনিটের দিকে তাকে জিনজিরা ঘাটে নামিয়ে দেওয়া হয়।

সিসিটিভি ফুটেজ এবং ডিজিটাল মুভমেন্ট বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দা পুলিশ নিশ্চিত হয়, জিনজিরাঘাট ও কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ এলাকার নদীর পাড় এলাকায় ভিকটিম বিপ্লবের সর্বশেষ অবস্থান ছিল। এখানে তিনি অবস্থান করেও কুরিয়ার সার্ভিস বয় গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে পাঠানো সবজি নিয়ে একাধিকবার ফোনে কথা বলেছেন।

জিনজিরা ঘাট থেকে সোয়ারীঘাটে চলাচল করা খেয়া নৌকার মাঝি শামসু মিয়ার তথ্য মতে, মাগরিবের নামাজের আগে-পরে পাঁচজন যাত্রী নিয়ে তার নৌকা মাঝ নদীতে এলে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া মর্নিং সান-৫ লঞ্চ সেটিকে ধাক্কা দেয়। এতে নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তলিয়ে যায়। যাত্রীরা পানিতে পড়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে অন্য নৌকা এসে কয়েকজনকে উদ্ধার করতে পারলেও একজন ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া যাত্রীই নিহত দুবন্ত বিপ্লব বলে জানা যায়।

লঞ্চের কর্মচারীদের অবহেলার কারণে এই ঘটনা ঘটেছে, সেজন্য তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান ডিসি মশিউর রহমান।

সারাদিন/২০ নভেম্বর/এমবি