পাঁচ বছর হলো বারী সিদ্দিকী নেই

বিনোদন ডেস্কবিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৬:১৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০২২

ছবি- সংগৃহীত

‘শুয়া চান পাখি, আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছো নাকি…’ দরাজ কণ্ঠে ধারণ করা এই গানের পাখি বরেণ্য শিল্পী বারী সিদ্দিকী পাঁচটি বছর হয়ে গেছে সীমানা পেরিয়ে চলে গেছেন পরপারে।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) এই গুণী শিল্পীর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৭ সালের আজকের এই দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন বারী সিদ্দিকী।

‘শুয়া চান পাখি’ ছাড়াও ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘পুবালি বাতাসে’, ‘আমি একটা জিন্দা লাশ’, ‘রজনী’, ‘সাড়ে তিন হাত কবর’, ‘ওলো ভাবিজান নাউ বাওয়া’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’সহ অসংখ্য গান দিয়ে মানুষের হৃদয়ে চিরদিন রয়ে যাবেন বারী সিদ্দিকী। তার শুধুই কি কণ্ঠ? তার বাঁশিরও সুরও হৃদয় কেড়েছে সবার।

বারী সিদ্দিকীর বাঁশির সুরে মন হারাননি, এমন শ্রোতা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ১৯৮০ সাল থেকে টানা দুই দশক তিনি বাঁশি বাজিয়ে জয় করেছেন বিশ্ব। বারী সিদ্দিকীর বাঁশির সুরে কেঁদেছেন অগণিত মানুষ। প্রাকৃতিক এই বাদ্যযন্ত্র দিয়ে তিনি যে বিষাদময় হাহাকার সৃষ্টি করতেন, সেটা মানুষের কান হয়ে পৌঁছে যেতো হৃদপিণ্ডের অতলে। আর সেখানে তৈরি হয়ে যেতো অপার সুন্দর এক অনুভবের।

ছোট বেলায় মায়ের অনুপ্রেরণা আর সহযোগিতায় বাঁশিতে হাতেখড়ি হয় বারী সিদ্দিকীর। কিন্তু সেই সময় নেত্রকোণায় বাঁশি শেখার কোনও পদ্ধতিগত ব্যবস্থা ছিলো না। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই বাদ্যযন্ত্র শেখার সুযোগ হয় যখন বারী সিদ্দিকী হাইস্কুলে পড়তেন। নেত্রকোণা শিল্পকলা একাডেমিতে ওস্তাদ শ্রী গোপাল দত্তের কাছ থেকে বাঁশি শিখতে শুরু করেন তিনি। এরপর বারী সিদ্দিকী ওস্তাদ তাগাল ব্রাদার্স, পণ্ডিত দেবেন্দ্র মুৎসুদ্দী, ওস্তাদ আয়েফ আলী খান মিনকারীর মতো গুণীজনের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন।

১৯৯৯ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ থেক একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে বারী সিদ্দিকী অংশ নেন। সেই সম্মেলনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই বাঁশি বাজান বারী। তাও একটানা ৪৫ মিনিট। তার বাঁশিতে মুগ্ধ হয় বিশ্ব শ্রোতারা। বারী সিদ্দিকী পান উপমহাদেশজোড়া খ্যাতি। এরপর থেকে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মঞ্চে বংশী বাদক হিসবে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছান বারী।

Nagad

১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনা সদরের কাইলাটি ইউনিয়নের ফচিকা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বারী সিদ্দিকী। পরে জেলা সদরের কারলিতে ‘বাউল বাড়ি’ করেন তিনি। বাবা মহরম আলী ও মা প্রয়াত জহুর-উন-নিসা। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে বারী সবার ছোট। বয়স যখন তিন-চার, সেই বয়সেই মায়ের কাছে তার প্রথম শোনা গান ছিল ‘শ্বাশুড়িরেও কইয়ো গিয়া’। সেই গানের সুরই বারীর মনে গেঁথে যায়।

এক সময় বারী শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে বাংলাদেশ রেডিও-টেলিভিশনসহ সম্মিলিত একটি যন্ত্রসংগীত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। এর পরপরই তিনি দক্ষিণ এশীয় সার্ক ফেস্টিভ্যালে যান বাঁশি বাজাতে। সেটি ছিল সরকারি সহযোগিতা।

হুমায়ূন আহমেদর এক জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তার বাসায় যান বাঁশি বাজাতে। সেখানে বাঁশি বাজানোর পাশাপাশি গানও করেন। হুমায়ূন আহমেদ তাকে আরও গান গাইতে বলেন। গান শুনে মুগ্ধ হন হুমায়ূন। ১৯৯৫ সালে বিটিভির ‘রং-এর বারৈ’ অনুষ্ঠানে প্রথম গান করেন বারী সিদ্দিকী। এর পরপরই হুমায়ূন আহমেদ তাকে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে গান গাইতে বলেন।

চলচ্চিত্রের গানে আকাশ-ছোঁয়া জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরপরই বাজারে তার দু’টি একক অ্যালবাম আসে। একটি ‘দুঃখ রইলো মনে’ এবং অন্যটি ‘অপরাধী হইলেও আমি তোর’। সংবাদপত্রকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিদ্দিকী বলেন, “হুমায়ূন স্যার আমার গাওয়ার পেছনে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়েছিলেন। মূলত তার সাহস নিয়েই সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস পেয়েছি।”

দু’টি অ্যালবামই লুফে নেয় শ্রোতারা। সেসময় উকিল মুন্সীর লেখা গান শ্রোতাদের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পেরে বারী সিদ্দিকী দারুণ উচ্ছ্বাসে ভাসেন। তিনি সব সময়ই নিজেকে একজন বংশীবাদক হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। বংশীবাদক হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তিনি বাঁশি বাজিয়েই শ্রোতা-দর্শককে মুগ্ধ করেছেন।

সারাদিন/২৪ নভেম্বর/এমবি