ভিনদেশ থেকে ডানায় ভর করে উকড়ি’র বিলে আসে হাজার হাজার পাখি

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: ১:৫২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২৩

বিস্তীর্ণ জলরাশির মাঝে মাঝে শাপলা, শালুক আর পদ্ম পাতা। সেই পদ্ম পাতার ফাঁকে ফাঁকে উকি দিচ্ছে বক, রাঙা ময়ূরী, ছোট সরালি, সারস, গাঙচিল, পানকৌড়ি, বকসহ নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশী হাজার হাজার পাখি। কখনও জলকেলি আবার কখন মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে দলবেঁধে। কখনও আবার মাছ শিকারের জন্য থাকছে ওত পেতে। ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি পাখির এমন বিচরণ চোখে পড়বে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী উকড়ি’র বিলে। প্রতিবছর শীতের শুরুতেই ভিনদেশ থেকে ডানায় ভর করে এখানে আসে একটু নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের আশায়। উকড়ি’র বিল এখন সেই পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়। মহেশপুর উপজেলার করি া গ্রামের এই বিলের আয়তন প্রায় ২২৫ একর। এই বিলে পাখি রয়েছে ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিলের জলাশয় সেজেছে এক নতুন সাজে। শীতে অতিথি পাখির আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিল। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাখি ও জলাশয়ের প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই ভীর করে দর্শনার্থীরা। দর্শনার্থীদের বিলের পানিতে ঘুরে ঘুরে পাখি দেখতে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ইঞ্জিন চালিত নৌকা। বিল পাহারার দায়িত্বে থাকা লোকগুলোই দৃষ্টি রেখেছে কেউ যেন পাখি শিকার করতে না পারে। শীতের এই অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্য করতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জলাশয়ের ইজারাদার ও স্থানীয়দের।

পাশের গ্রাম থেকে বিলে ঘুরতে আসা সাব্বির হোসেন জানান, উকড়ি’র বিলের চারপাশে শাপলা, আর পদ্ম পাতা জন্ম নিয়েছে অনেক আগে। সেখানেই নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুলেছে পাখিরা। দিনভর বিলের বিভিন্ন প্রান্তে শামুক ও মাছ শিকার করে। পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে পুরো এলাকা। চারিদিকে ডানা ঝাপটানো উড়াউড়ির সঙ্গে পাখির কিচিরমিচির শব্দ মন কাড়ে পাখি প্রেমীদের। হাজার হাজার পাখি যখন শুরু করে চিঁচিঁর-মিচির তখনই সৃষ্টি হয় ভিন্নতর নান্দনিক আবহ। এই দৃশ্য দেখতে প্রায় প্রতিদিনই আসা হয়। এখানে ঘুরার জন্য রয়েছে নৌকার ব্যবস্থাও। এসব পাখি দেখতে আসা মানুষরা যেমন খুশি তার চেয়ে বেশি খুশি গ্রামবাসীরা।

করি া গ্রামের রাজিব হোসেন জানান, এই বিলে পাখিদের উপর কোন অত্যাচার হয়না যার কারণে শীত প্রধান দেশ থেকেই শীত মৌসুমে বেশি পাখি আসে। এই শীতে গাঙচিল, ডংকুর, সড়াইল, কাইয়ুমসহ আরো নাম না-জানা অনেক পাখি এই শীতে দেখা যায়।

বিলের পাহারাদাররা জানান, বিলে যখন মাছ চাষ না হতো তখন শিকারীরা পাখিগুলো শিকার করতে আসতো। কিন্তু যখন মাছ চাষের আওতায় আসে এবং কবীর হোসেন ইজারা নেয় তারপর থেকই শিকারিরা আর পাখি শিকার করতে আসে না। কবীর ভাইয়ের নির্দেশ যদি কেউ পাখি শিকার করতে আসে তাহলে বাঁধা দেওয়া এবং প্রশাসনকে জানানো। এখন পাখিগুলো নিরাপদ মনে করে স্থায়ী ভাবে থাকে এবং শীতের সময়ে অনেক পাখি আসে। হাঁসপাখি, ডংকুর, কাদাখোঁচা পাখিসহ ১৫/২০ রকমের পাখি শীত মৌসুমে আসে।

উকড়ির বিলের ইজারাদার কবীর হোসেন বলেন, নিজের ভালো লাগার জায়গা থেকে পাখিদের এই নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। প্রথমে যখন বিদেশি পাখিগুলো আসতো, তখন অনেক পাখি-শিকারি আসতো, পাখি শিকার করতো। তখন চিন্তা করি শিকারি বন্ধ না করলে পাখিগুলো নিরাপদ আশ্রয় মনে করবে না। এরপর আমি শিকারিদের আসা বন্ধ করি। বর্তমানে পাখিদের কেউ একটি ঢিল মরতে পারে না। এখন নিরাপদের আশ্রয়ের কারণে পাখিগুলো শুধু শীত কালেই নয় এখন সারা বছরই এই বিলে থাকতে শুরু করেছে।

Nagad

তিনি আরো বলেন, এই বিলে ১৫ থেকে ২০ প্রজাতির পাখি বসবাস করছে। শীতের এই মৌসুমে পাখিগুলো শীত প্রধান দেশ থেকে এই বিলে আসে। এখানে নিরাপদ এবং পর্যাপ্ত খাবার থাকার কারণে অনেক পাখিই গরম কালেও এখন ছেড়ে যায় না। বিলে জঙ্গল থাকলে তারা বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। পাখিগুলো সন্ধ্যা হলেই পদ্মপাতার আড়ালে এবং আশেপাশের বাগানের গাছে থাকে আবার সকাল হলেই বিলে চলে আসে। পাখিদের এই নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করতে পেরে সত্যিই অনেক ভালোলাগে।

সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই বিলটি পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিণত হবে বলেও জানান বিলের ইজারাদার কবীর হোসেন।