ইবির পাঁচ ছাত্রীকে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার, প্রভোস্টকে প্রত্যাহারের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: ২:১৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১, ২০২৩

হাইকোর্ট, ছবি- মুস্তাঈন বিল্লাহ

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীকে বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্টকে সরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এ বিষয়ে এক আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এই আদেশ দেন।

হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগী ছাত্রীকে তিন দিনের মধ্যে যে কোনো হলে তার পছন্দ মতো সিট বরাদ্দ দিতে হবে। একই সঙ্গে বহিষ্কার হওয়া পাঁচ ছাত্রী কোনো একামেডিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না।

এ বিষয়ে এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এই আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।

অভিযুক্ত ৫ ছাত্রী হলেন- শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি ও ফিন্যান্স বিভাগের মুয়াবিয়া জাহান।

Nagad

এর আগে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ অন্তত ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি। ঘটনার জন্য দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট শামসুল আলম, হাউস টিউটর মৌমিতা আক্তার, ইশরাত জাহানসহ কয়েকজনের দায়িত্বে চরম অবহেলা রয়েছে বলে তদন্তে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া প্রক্টর শাহাদাত হোসেনের র্কমকাণ্ড উদাসীন ও দায়সারা গোছের।

বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে গতকাল মঙ্গলবার ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় করা পৃথক দুটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় আদালতে এই প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন। প্রাথমিক শুনানির পর আজ এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য রাখা হয়।

উল্লেখ্য, গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ইবির প্রাক্তন শিক্ষার্থী গাজী মো. মহসীন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দিয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন, নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ওই নির্যাতনে জড়িত বলে ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও তাবাসসুম নামে যে দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে রাখাসহ কয়েক দফা নির্দেশ দেন।

তিন সদস্যের কমিটিতে প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা, জেলা জজ মনোনীত বিচার বিভাগীয় একজন কর্মকর্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপককে রাখতে বলা হয়। এ ছাড়া একই ঘটনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত কমিটির প্রতিবেদনও হাইকোর্টে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল পৃথক প্রতিবেদন সিলগালা অবস্থায় আদালতে দাখিল করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।