রোটেশিয়া লেজেন্ডস অ্যাওয়ার্ড পেলেন নাজমুন নাহার
প্রথম বাংলাদেশী হিসাবে ১৬০ দেশ ভ্রমণের রেকর্ড গড়েছেন নাজমুন নাহার। নাজমুন নাহার বিশ্বব্যাপী ভ্রমণের সময় বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকাকে বহনের পাশাপাশি শান্তির বার্তা বহন এবং তরুণদেরকে উৎসাহিত করার জন্য ‘নারীর ক্ষমতায়নে আলোকিত নারী হিসেবে- ২৪ শে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ রোটার্যাক্ট দক্ষিন এশিয়া সম্মেলনে রোটেশিয়ার পক্ষ থেকে নাজমুন নাহারকে বিশেষ সম্মাননা “রোটেশিয়া লেজেন্ডস এওয়ার্ড” দেওয়া হয়। তাঁর অসংখ্য অর্জনের ঝুলিতে যুক্ত হলো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননা।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ৪৫০ জন প্রতিনিধির সামনে নাজমুন নাহারকে এই সম্মাননা তুলে দেন রোটাশিয়ারদক্ষিন এশিয়ার সভাপতি জিয়া উদ্দিন হায়দার শাকিল, রোটাশিয়া চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক রুপম, পিডিজ খাইরুল আলম, পিডিজি ব্যারিস্টার মুনতাসিম বিল্লাহ ফারুকি, টুরিস্ট পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি মুহাম্মদ মুসলিম। এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ডেলিগেটসরা। এই সম্মেলনে নাজমুন নাহার বিদেশী প্রতিনিধিদের সামনে তার বিশ্ব ভ্রমণের অদম্য সংগ্রাম ও সাহসিকতার গল্প তুলে ধরেন। সম্মেলনে প্রদর্শিত হয় নাজমুন নাহারের জীবনের উপর ভিডিও ডকুমেন্টারী।
বন- জঙ্গল, পর্বতমালা, মহাসমুদ্র, মরুভূমির লক্ষ লক্ষ মাইল একাকী পাড়ি দিয়ে আসা তাঁর বিশ্ব ভ্রমনের এই অভিযাত্রাকে অভিনন্দিত করেন এশিয়া থেকে আসা সকল প্রতিনিধিরা।
সকল বাধা বিঘ্নকে অতিক্রম করে একজন অগ্রগামী নারী হিসেবে এক অনবদ্য ভূমিকা রাখছেন নাজমুন নাহার। তাঁর সাহসিকতার গল্প পিছিয়ে পড়া তরুন তরুণীদেরকে আশার আলো জাগায়। বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা হাতে যিনি পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশ একাকী সড়ক পথে ভ্রমণ করেছেন। তিনি বিশ্ব শান্তির বার্তা ও পরিবেশ সচেতনতায় তরুণ ও শিশুদেরকে উৎসাহিত করছেন তার বিশ্ব ভ্রমণ অভিযাত্রার মাধ্যমে।
২৫ শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশন আয়োজিত ‘মিট দ্য সেলিব্রেটি’ সেশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সারাদেশ থেকে আগত তরুণ ডিবেটারদেরকে উৎসাহিত করেন। ৩ মার্চ নাজমুন নাহার বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের আমন্ত্রিত স্পিকার হিসাবে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সপ্তম ডিভিশনাল রেড ক্রিসেন্ট ক্যাম্পে সারা বাংলাদেশ থেকে আগত সকল ইয়ুথ ভলেন্টিয়ারদেরকে বিশ্ব ভ্রমণের সংগ্রাম সাফল্য এবং অর্জনের কথা তুলে ধরার মাধ্যমে সকল তরুণদেরকে আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন।
২০০০ সালে ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল এডভেঞ্চার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নাজমুন নাহারের প্রথম বিশ্ব ভ্রমণ অভিযাত্রা শুরু হয়। ২০১৮ সালের ১ জুন ১০০ তম দেশ দেশ ভ্রমণের রেকর্ড সৃষ্টি করেন জিম্বাবুয়েতে। তারপর, ৬ অক্টোবর ২০২১ বাংলাদেশের পতাকা হাতে বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে বিশ্বভ্রমণের এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক সৃষ্টি করেন আফ্রিকার দেশ সাওটোমে ও প্রিন্সিপ ভ্রমণের মাধ্যমে।
যেখানেই গিযছেন বলাদেশের পতাকার পাশাপাশি তিনি উঁচু করে ধরেছেন বিশ্ব শান্তির বার্তা- ‘নো ওয়ার, অনলি পিস’। নাজমুন নাহার তাঁর ভ্রমণের সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লোকাল কমিউনিটি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিজিট করেন। সেখানেই তিনি বিশ্ব শান্তি ও পরিবেশ সচেতনতায় নারী, শিশু ও তরুণদেরকে উৎসাহিত করেন।
তাঁর বিশ্ব ভ্রমণ এতটা সহজ ছিলো না। বিশ্ব ভ্রমণ করার জন্য তাঁকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। দীর্ঘ ২২ বছরের অভিযাত্রায় নাজমুন অনেক কঠিন-দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েছেন। অনেক কঠিন পরিস্থিতিসহ মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন বহুবার। তবুও থামেনি তাঁর পদযাত্রা। তিনি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়েও বাংলাদেশের পতাককে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর বিশ্ব অভিযাত্রার সাথে সাথে। বাংলাদেশের পতাকা হাতেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, রাষ্ট্রপ্রধান, বিখ্যাত ব্যক্তিরা তাকে সংবর্ধিত করেছেন।
পিস টর্চ বিয়ারার অ্যাওয়ার্ডসহ দেশ ও বিদেশে ৫৫ টিরও বেশি সম্মাননা অর্জন করেছেন। নাজমুন নাহার সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেন। তাঁর জন্মস্থান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর সদরে। নাজমুন নাহারের লক্ষ্য বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে তিনি বিশ্বের প্রতিটি দেশে ভ্রমণ করবেন। বেগম রোকেয়া, প্রীতিলতাসহ এদেশের আলোকিত নারীরা যুগে যুগে পথ দেখিয়েছেন পিছিয়ে পড়া নারীদেরকে। তাদেরই মত নাজমুন নাহার এই প্রজন্মের নারীদেরকে সামনে এগিয়ে চলার দারুন উৎসাহ যোগাচ্ছেন তার বিশ্ব ভ্রমণ অভিযাত্রার মাধ্যমে। তাঁর অর্জনের আলো ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বময়। বাংলাদেশের মানুষ আরো গর্ব করুক আমাদের নাজমুন নাহারকে নিয়ে।