বালিয়াকান্দিতে বৃষ্টি নামলেই পাকা সড়ক যেন মরণফাঁদ!

রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির বিভিন্ন পাকা সড়ক এখন বৃষ্টি নামলেই পাকা সড়ক কাদাময় মরণফাঁদ। ইট ভাটার মাটি ভিন্ন ট্রাকে পরিবহন করায় বেহাল হয়ে পড়েছে উপজেলার রাস্তাঘাট। পরিবহনের সময় এসব ট্রাক থেকে মাটি রাস্তায় পড়ে এবং সামান্য বৃষ্টিতে সেই মাটি কাদাময় হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঘটছে নানান দূর্ঘটনা। অন্যদিকে ভারী এসব ট্রাক চলাচল করায় নষ্ট হচ্ছে রাস্তা। ইটভাটার মালিকরা জনদুর্ভোগকে থোড়াই কেয়ার করে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।

সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হালকা বৃষ্টি হওয়ায় বালিয়াকান্দির সদর ইউনিয়নের বালিয়াকান্দি টু নারুয়া, বালিয়াকান্দি টু তেতুলিয়া ও গনপত্যা, জামালপুরসহ প্রতিটি রাস্তায় ব্যাপক কাদার সৃষ্টি হয়েছে। আবার কিছু কিছু ইট ভাটার মালিকেরা সড়কের কাঁদাকে আড়াল করার জন্য সুরকি বা রাবিশ ব্যবহার করে একটু নিয়ন্ত্রণে এনেছে বলে দেখা গেছে। আর অধিকাংশ সড়ক ই কাদাময়। যাতে করে রাস্তার চলাচলকারী জনগণ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। এ ছাড়া ভ্যান, অটোরিকশা, চলাচলে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটছে। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও পথচারীদের ভোগান্তি আরও চরম আকার ধারণ করেছে। প্রতিটা ইট ভাটার সামনে থেকে দুই-তিন কিলোমিটার রাস্তায় ভাটার মাটি পরায় চলাচলে দূর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তা মাটি পরে পিচ্ছিল হওয়ায় ঘটছে দূর্ঘটনা।

কোন কোন ইটভাটার সামনে আবার পিচঢালা রাস্তায় ট্রাক থেকে পরা মাটির উপরে বালি ছিটানো হচ্ছে। যা সাময়িক কাজ করলেও ভোগান্তি কমবে না বলে বলছেন একাধিক গাড়ী চালক।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটার ট্রাক্টরে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত মালা মাল বহন করায় মাটি সড়কে পড়ে। বেশ কিছুদিন ধরে ধূলায় টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছিল। এখন বৃষ্টি হওয়াতে পাকা রাস্তাটি কাদাময় হয়ে পড়েছে।

রাস্তায় প্রতিনিয়িত চলাচলকারী দাউদ হোসেন বলেন, ইটভাটার কাজে নিয়োজিত মাটিবাহী যানবাহন থেকে রাস্তায় পড়ে যাওয়া মাটি রোদের সময় রাস্তায় শুকনোয় ধূলা আর বর্ষায় কাদাময় হয়ে থাকে দেখে বুঝার উপায় থাকে না এটা পাকা রাস্তা। এতে বছরজুড়েই এই সড়কে চলাচল করতে পোহাতে হয় দুর্ভোগ।

রাস্তায় চলাচলকারী পথযাত্রী ইয়াসিন বলে, বালিয়াকান্দির সড়কগুলো কাদা পরে ও বৃষ্টিতে মৃত্যুফাঁদে পরিনত হয়েছে। আগে ধুলায় চলাচল মুশকিল ছিলো এখন এই মাত্রা আরও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। এই অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাই।

Nagad

পথযাত্রী মাসুদ বলেন, বাড়িতে থেকে ঠিকভাবে খাবার পেতে পারি না ধুলায়। ধুলাবালিতে এখন বাতাস এখন বিষাক্ত। তার উপরে আবার কাদা! আমরা কবে এইসকল শোষন থেকে মুক্তি পাবো?

শালমারা থেকে বাই সাইকেলে বালিয়াকান্দিতে আসা আজিজ মন্ডল বলেন, সাইকেলে চরে যাচ্ছিলাম বালিয়াকান্দি বাজারে। বালিয়াকান্দির ইটভাটার সামনে এসে রাস্তা পিছনে হওয়ায় পরে গেছি। হাটুটা একটু ছুলে গেছে। এই যুগে এসে পাকা রাস্তায় যদি পরে যেতে হয় এর থেকে বড় দূর্ভাগ্য কি হয় বলেন?

অটোরিক্সা চালক প্রনব বলেন, এই ইট ভাটার সময় আমরা শুষ্ক মৌসুমেও ঠিকভাবে গাড়ি চালাতে পারি না। রাস্তায় মাটির কয়েক ইঞ্চি প্রলেপ পরে থাকে। বেশ কিছু এক্সিডেন্ট হয়ে তো মানুষই মারা গেলো এই মাটি ও মাটি টানার অবৈধ গাড়িতে। মাটি টানতে তো মানা নেই কিন্তু তারা এমনভাবে মাটি টানুক যেন রাস্তায় না পরে। তাহলেই তো ভোগান্তি দূর হয়। কে শোনে কার কথা। যারা মাটি টানে তারা প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতেও সবাই ভয় পায়। এজন্য এসব ভোগান্তি মেনে নেওয়া ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, বালিয়াকান্দির বিভিন্ন রাস্তা এখন অত্যন্ত ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। রাস্তায় পরে থাকা মাটি বৃষ্টিতে পিচ্ছিল হয়ে জনদূর্ভোগ তৈরী হচ্ছে। যারা মাটি টানেন তাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। এই বিষয়গুলো যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে প্রশাসনের উচিত কঠোর হওয়া।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা দ্রুতই এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি। যাদের কারণে রাস্তার এমন দশা হচ্ছে বিশেষ করে ইটভাটা। তাদেরকে রাস্তা পরিষ্কারের নির্দেশনা দেওয়া হবে তারপরও যদি এমনটি ঘটে থাকে তাদেরকে জরিমানার আওতায় আনা হবে। তাদের জন্য সাধারণ মানুষের জন্য দুর্ভোগ হবে এটি কোনভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।