শৈলকুপায় আমের মৌসুমে আমসত্ব তৈরিতে ব্যস্ত গ্রামের নারীরা

চলছে আমের মৌসুম। আমের বিভিন্ন পদের মধ্যে আমসত্ত অন্যতম। কমবেশি সবাই আমের মৌসুমে আমসত্ত তৈরি করে বছরব্যাপী সংরক্ষণ করেন। এবার পর্যাপ্ত পরিমানে আমের ফলন হওয়ায় প্রায় প্রতিটি বাড়ীতেই আমসত্ত দেয়ার ধুম পড়েছে। ঝিনাইদহের শৈলকুপায় আমের মৌসুমে আমসত্ত তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে গ্রামের নারীরা।

সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, শৈলকুপা উপজেলার বাড়ীতে বাড়ীতে এখন দেখা যাচ্ছে ডালা-কুলা ,স্টিলের থালা এমনকি খেজুরের পার্টিতেও আমসত্ত দিয়ে গৃহবধূরা তা রোদে শুকাতে দিয়েছেন বাড়ীর আঙ্গিনায় বা চালে। বিশেষ করে বয়স্ক মহিলা যারা আছেন তাদের সাধারণত কোন কাজ থাকেনা তারাই মূলত পাকা আম ছুলে তা চিপে রস বের করে ডালাকুলা বা বিভিন্ন তৈজসপত্রে আমসত্ত দিয়ে থাকেন।

শৈলকুপা উপজেলার রঘুনন্দনপুর গ্রামের অতিশীপর বৃদ্ধা যমুনা দাস জানান, ফলের রাজা আম আমাদের সবার প্রিয় কিন্তু আমরা সারাবছর বাজারে আম পাইনা । তাই অসময়ে বাজার থেকে উচ্চ মূল্যে আমসত্ত কেনার থেকে এখন নিজেই বানিয়ে রাখছি বাজারের মত আমসত্ত। আর সারাবছর আমের স্বাদ নিবে আমার পরিবারের সকল সদস্য । আমরা সাধারণত দুধের সাথে আমসত্ত মিশিয়ে ভাত দিয়ে খেয়ে থাকি এছাড়া পরিবারের ছোট ছোট সদস্যরা যখন মন চায় তখন ললি পপের মত চুষে চুষে খায়। সারা বছর আম পাওয়া যায়না বলে চাইলেও সারা বছর আমসত্ব তৈরি করা যায়না তাই এবার পর্যাপ্ত পরিমাণে আমের ফলন হওয়ায় একটু বেশি করে আমসত্ত বানিয়ে রাখছি। তাছাড়া এ বছর আমের ফলন প্রর্যাপ্ত সব পাকা আম খেয়ে শেষ করাও যাচ্ছেনা তাই আমসত্ত দিয়ে রাখছি।

তিনি আরো বলেন, মাত্র ৭-৮ দিন রোদে দিলেই হয়ে যাবে। মাঝে মধ্যে আমসত্ত উল্টিয়ে দিতে হয়। যাতে দু’পাশেই রোদ লাগে ও শুকিয়ে যায়। তারপর নিজের ইচ্ছেমতো আকৃতিতে কেটে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে আমসত্ত। বছরব্যাপী সংরক্ষণ করে অসময়ে খাওয়া যায় বলে আবহমান কাল থেকেই বাংলার ঘরে ঘরে আমসত্ত তৈরি করা হয়।

আমসত্ত খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: রাশেদ আল মামুন জানান, আমসত্ত সর্দি কাশি দূর করতে সাহায্য করে। শিশুদের স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। গর্ভবতী মায়েদের ক্যালসিয়াম সমস্যা দূর করে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। হজমের সমস্যা দূর করে, হজমশক্তি বাড়ায়। এতে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বক সুরক্ষায় সাহায্য করে।

তিনি আরো বলেন, আমসত্তে প্রচুর ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই রয়েছে। কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলস এবং হৃদরোগে আমসত্ত¡ ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। আমসত্তে সাইট্রিক অ্যাসিড, টারটারিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।এতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার, পেকটিন ও ভিটামিন সি থাকে যা কোলেস্টেরল লেভেলের ভারসাম্য রক্ষা করে। ১০০ গ্রাম আমসত্তে প্রায় ১৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে এবং ১৯৯০ মাইক্রোগ্রাম বিটাক্যারোটিন থাকে।

Nagad