মোদিকে কেন এতো গুরুত্ব দিচ্ছে আমেরিকা

সারাদিন ডেস্কসারাদিন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৫:৫৮ অপরাহ্ণ, জুন ২২, ২০২৩

ছবি: ডয়েচে বেলে।

তিন দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোদির এটাই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে স্টেট ভিজিট বা রাষ্ট্রীয় সফর। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার তিনি মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। ভারতীয় কোনো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটি প্রথম। উইনস্টন চার্চিল, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো অল্প কয়েকজন রাষ্ট্রনেতা এই সম্মান পেয়েছেন। খবর ডয়েচে ভেলের।

ইতোমধ্যে গতকাল বুধবার রাতে বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন মোদিকে হোয়াইট হাউসে নৈশভোজে আপ্যায়ন করেছেন। বোঝা যাচ্ছে, এই সফরকে যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। ভারতে বিশেষজ্ঞরা কেমনভাবে দেখছেন এই সফরকে?

দিল্লির কূটনীতি বিশেষজ্ঞ প্রবীণ সাংবাদিক প্রণয় শর্মা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র পুরো রেড কার্পেট বিছিয়ে দিয়েছে মোদির জন্য। এই প্রথম মোদি যুক্তরাষ্ট্রে স্টেট ভিজিটে গেলেন। আগে বহুবার গেছেন। কিন্তু সেগুলি স্টেট ভিজিট নয়।

প্রণয়ের ব্যাখ্যা, নানা ধরনের সফর হয়। ওয়ার্কিং ভিজিট হয়। অল্প সময়ের জন্য এসে কিছু বিষয়ে আলোচনা করে রাষ্ট্রনেতা চলে যান। মধ্যাহ্নভোজ বা এই ধরনের একটা অনুষ্ঠান থাকে সেখানে। কিন্তু স্টেট ভিজিটে যিনি আসবেন তাকে ২১টি তোপধ্বনি দিয়ে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানানো হয়। সাউথ লনে সকলের সঙ্গে আলাপ করানো হয়। নৈশভোজ বা ব্যাঙ্কোয়েট দেন প্রেসিডেন্ট। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা থাকেন।

প্রণয় শর্মার মতে মোদির প্রতি বাইপার্টিজান সমর্থন আছে। এর অর্থ, শুধু বাইডেন বা তার দল নয়, বিরোধী রিপাবলিকানরাও মোদিকে একইরকমভবে স্বাগত জানাচ্ছেন। তারাও চান, ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক। হাউসের স্পিকার ম্য়াকার্থি মোদিকে যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিতে ডেকেছেন। ফলে বাইডেন এবং রিপাবলিকান দুই পক্ষই চাইছে, দুই দেশের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হোক।

মার্কিন কিছু পার্লামেন্ট সদস্য চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে যেন মানবাধিকারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন মার্কিন কর্তৃপক্ষ।

Nagad

এই প্রসঙ্গে প্রণয়ের বক্তব্য, গণতন্ত্রে বিভিন্ন ধরনের মত থাকবে। সকলের মত এক হবে, তা নয়। যুক্তরাষ্ট্র ভাইব্র্যান্ট গণতন্ত্র। তাদের নিজেদের প্রেসিডেন্টকে নিয়েও কত মত রয়েছে। তাই নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে সরকারি একটা মত থাকতে পারে, কিছু প্রতিনিধির অন্য মত থাকতে পারে। তারা সেটা তুলতে পারেন। কিন্তু সরকারিভাবে এমন কোনো প্রশ্ন তোলার চেষ্টা হচ্ছে না, যাতে তিক্ততা বাড়ে। ইতিবাচক দিকটা তুলে ধরার চেষ্টা চলছে।

ভারতের অবসরপ্রাপ্ত লেফটোন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য মনে করছেন, ‘সামরিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সফর। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, আমরা দীর্ঘদিন শুধু ওয়ারশ চুক্তিভুক্ত দেশ থেকে কেনা অস্ত্র দিয়ে লড়েছি। যখন সোভিয়েত ভেঙে যায়, আমাদের খুব অসুবিধা হয়েছিল। এখন আমরা ন্যাটো গোষ্ঠীভুক্ত দেশ থেকে অস্ত্র পাচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রচুর অস্ত্র পাচ্ছি বা পেতে পারি। যেমন ড্রোনের কথা হচ্ছে, সাবমেরিনের কথা হচ্ছে, জেটইঞ্জিনের কথা হচ্ছে।

উৎপল ভট্টাচার্য জানান, ২০০০ সালের পর থেকে যখন আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি করে অস্ত্র কেনা শুরু করলাম, তখন ওরা সর্বশেষ প্রযুক্তির অস্ত্র দিত না। কিছুটা পুরনো অস্ত্র দিত। এখন অবস্থা পাল্টেছে। আমরাও আশা করব, সর্বশেষ অস্ত্র, প্রযুক্তি আমাদের দেবে অ্যামেরিকা। পাকিস্তানকে ওরা সর্বশেষ প্রযুক্তির এফ-১৬ দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন এই আগ্রহ?

প্রণয় শর্মা মনে করেন, ‘ভারতের একটা বিশাল বাজার আছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র শুধু যে অস্ত্র বিক্রি করতে পারবে তাই নয়, বিশাল মধ্যবিত্ত শ্রেণির বাজার তাদের কাছে আকর্ষণীয়। ভারতের নলেজ পুল আছে। একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলিতে উৎপাদন খরচ অনেক কম। ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায়। তারা আগে চীনে বিনিয়োগ করেছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় করেছে। কিন্তু চীনের পর ভারতের মতো এত বড় বাজার নেই।

প্রণয়ের মতে, কোভিডের পর অনেকের মনে হচ্ছে, একটামাত্র বাজারের উপর নির্ভর করা উচিত নয়। তাই ছড়িয়ে থাকতে হবে। তারা কিছু দেশ বেছে নিয়েছে। ভারত তার মধ্যে অন্যতম।

এ ছাড়া উৎপল ভট্টাচার্য মনে করছেন, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো প্রশান্ত মহাসাগর। চীন এটাকে সাউথ চায়না সি-র সঙ্গে মিলিয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রাধাণয় বিস্তার করতে চাইছে। তার মোকাবিলায় কোয়াড হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারত মিলে কোয়াড তৈরি করেছে। এটা চীনের প্রতি বার্তা। সেই দিক থেকে ভারতের গুরুত্ব যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাড়ছে।

প্রণয় শর্মাও মনে করেন, চীনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। বাইডেন দেখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে কোনো দেশ যদি চ্যালেঞ্জ করতে পারে, সেটা চীন। তাই চীনকে তারা সবচেয়ে বড় বিপদ মনে করে। এশিয়া-প্যাসিফিকে বিভিন্ন দেশ আছে, চীনের এই উত্থানে যারা প্রচুর সমস্যায় আছে। আমরা জানি, ভারতের সঙ্গে চীনের সীমান্তে ২০২০ থেকে সংঘাতের পরিস্থিতি রয়েছে। চীন একতরফা চুক্তি ভেঙে সীমানা বদলাতে চেয়েছে